প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প কালুরঘাট নতুন সেতু স্বপ্ন নয়, বাস্তব

36

মোছলেম উদ্দিন আহমদ

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামকে ভালোবাসতেন। তিনি এ চট্টগ্রাম হতে বাংলার মুক্তিসনদ ৬ দফা দিয়েছিলেন। উন্নয়নের স্বাপ্নিক কবি, জাতির পিতার কন্যা।, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনাও চট্টগ্রামকে ভালোবাসেন। ২০০৮ সালে তিনি চট্টগ্রামে নির্বাচনী জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিলেন। বাংলাদেশের ২টি মেগাপ্রকল্পের একটি পদ্মাসেতু। যা বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেদের অর্থায়ন করার ঘোষণা করে বাস্তবায়ন করেছেন। আর একটি মেগাপ্রকল্প বঙ্গবন্ধু ট্যানেল। দক্ষিণ এশিয়ায় আর কোন ট্যানেল নেই। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এ ট্যানেল নির্মিত হচ্ছে। যার একটি টিউবের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় কিছুদিন আগে আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। এ ট্যানেল চট্টগ্রামে করায় চট্টগ্রামবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। কালুরঘাট আর একটি নতুন সেতু নির্মাণের দাবি অনেক দিনের। ২০১০ সালে কর্ণফুলী ৩য় সেতু উদ্বোধনকালে শিকলবাহার জনসভায় জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এবং আমার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কালুরঘাটে আর একটি নতুন সেতু নির্মাণ করার কথা ঘোষণা করেন এবং সেই সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও এখন কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সেতুর নকশা পছন্দ করেছেন এবং সাত হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবনা প্রাথমিকভাবে অনুমোদনও দিয়েছেন। আমরা আশা করছি ২০২৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামালের নামে এ সেতুর নামকরণের জন্য চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে চট্টগ্রামের সকল মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যবৃন্দ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রস্তাবনা করেছেন। শেখ হাসিনা এশিয়ার প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু ট্যানেল’ চট্টগ্রামে নির্মাণ করেছেন। গত ২৬ নভেম্বর দক্ষিণ প্রান্তে টিউবের পূর্ব প্রান্তের সমাপ্তি অনুষ্ঠান উদ্যাপন হয়ে গেছে । ’৯৬-এর নির্বাচনের পরে চট্টগ্রামের একটা জনসভায় আমাদের প্রিয় নেত্রী বলেছিলেন চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমার’। আর কখনো সে কথা তিনি বিস্মৃতি হননি। তারপর তো কত বছর চলে গেলো। যখনই তিনি ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছেন, সবসময় চট্টগ্রাম অগ্রাধিকারপূর্ণ উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। সে কথা স্মরণ করে সেদিন বললেনÑ আমি ঢাকায় থাকলেও আমার মন পড়ে আছে চট্টগ্রামে। স্মরণ করা যায় তাঁর অন্তরজুড়ে চট্টগ্রামের অধিষ্ঠান। স্মরণ করা যায় তাঁর সেই ঐতিহাসিক বক্তব্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজেই নিলাম। চট্টগ্রামকে অত্যধিক গুরুত্ব দেন বলেই না তিনি সেকথা বলতে পেরেছিলেন। দেশ পরিচালনার ভার হাতে পেয়ে তিনি পিতার ন্যায় চট্টগ্রামের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে থাকেন। চট্টগ্রামের প্রতি গভীর ভালোবাসা, মমত্ববোধ, আন্তরিক সহানুভূতি, দরদ তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই পেয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন বললেও অত্যুক্তি হয় না। ৯৬’র পর পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদে এবং ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে তিনি চট্টগ্রামে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও চট্টগ্রামকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। চট্টগ্রামে তাঁর বিশ্বস্ত সহকর্মী, প্রিয় বন্ধুরা ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে আমৃত্যু যাঁরা ছিলেন ঘনিষ্ঠ সহচর, প্রিয় বান্ধব। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়ন এবং বেকার হোস্টেলে থাকার সময়ে চট্টগ্রামের নেতা এমএ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, দেশের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরীর পিতা মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বি.এ, ডা. শামসুল আলম চৌধুরী-যাঁর পুত্র কানাডা প্রবাসী আবদুস সালাম ২১ ফেব্রæয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আদায়ের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং আরো বিভিন্ন উপলক্ষে ডা. সুলতান আহমদ, মওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী, শেখ মোজাফফর আহমদ (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), সুলতান আহমদ কন্ট্রাক্টর, ইউসুফ মিয়া প্রমুখ চট্টগ্রামবাসীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সমূহ চট্টগ্রামে বসে নিয়েছিলেন। তাঁর যেসব কর্মসূচি পাকিস্তানি রাজনীতিকে বদলে দিয়েছিলো, সেগুলি তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঘোষণা করেছিলেন। যেমন ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি বঙ্গবন্ধু ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দান থেকে; এ সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কঠিনতম ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। সেদিন তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন এবং সেই ঘোষণার সাথেও চট্টগ্রামের নাম জড়িয়ে আছে। শেখ হাসিনার সরকারের দুটি মর্যাদাপূর্ণ মেগা প্রজেক্টের একটি হলো বঙ্গবন্ধু টার্মিনাল, অপর মেগা প্রজেক্ট পদ্মা সেতু। প্রকৌশলগত কর্মকাÐের বিশালতা ও সৃষ্টিশীল বৈচিত্রে, প্রায়োগিক উৎকর্ষের প্রকরণ ও জটিল নির্মাণে পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেল বিজ্ঞানের এক বিস্ময়। দেশের ইতিহাসে এত বৃহৎ নির্মাণ কর্মযজ্ঞ, আর সংঘটিত হয়নি। এদেশের প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে একটি টানেল নির্মিত হলো। ইতিহাসের সাথে চট্টগ্রাম দুভাগে যুক্ত হয়ে থাকলো। প্রথমত কিংবদন্তীর কর্ণফুলী নদীর অভ্যন্তরে এই বিস্ময়কর স্থাপনা নির্মিত হলো। দ্বিতীয়ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে এই টানেল পরিচিত হবে। চট্টগ্রামের জন্য এর চেয়ে গৌরবের আর কিছু হতে পারে না। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলটি বাংলাদেশের গর্ব, মর্যাদা এবং একটি মেগা কাঠামো সম্পন্ন করার সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটাবে। টানেলের কারণে সড়ক নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কর্ণফুলী টানেল দিয়ে আনোয়ারা ক্রসিং হয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এতে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকায় গতি সঞ্চারিত হবে এবং জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থান বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উন্নয়নে এই টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের প্রথম টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। টানেলটি পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড (কাফকো) কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করেছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে মোট ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। চীনের এমি ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বাকি অর্থ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দিয়েছে। ৬ শতাংশ কাজ বাকি থাকা টানেলটি আগামী জানুয়ারিতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা চট্টগ্রামে মেরিন ইউনিভার্সিটি করেছেন। যেটা আমার নির্বাচনী এলাকায় হচ্ছে। চট্টগ্রামের মানুষ সমুদ্র এবং জাহাজের সাথে দীর্ঘদিন যাবত জড়িত, আমাদের এ চট্টগ্রামে সারেং, সুয়ারিং, টেন্ডল এরা সকলে জাহাজের সাথে জড়িত। বঙ্গবন্ধু দেশে একটি মেরিন ইউনিভার্সিটি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সে মেরিন ইউনিভার্সিটি স্থাপন করছেন। তিনি জায়গা বেছে নিয়েছেন চট্টগ্রামকে। চট্টগ্রামের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহের কারণে আজ বাংলাদেশে একটি মাত্র মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়ক আজ চার লেনে নির্মিত হয়েছে। এ জন্য সড়ক জনপথ ও সেতুমন্ত্রী জননেতা ওবায়দুল কাদেরের অবদান স্বীকার করতে হবে। ১। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী, ইতিপূর্বে অনেক সরকার গেছে কেউ চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহের কারণে আজ চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২। চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুরের আদলে বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছেন, ৩। চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক খেলাধূলার কোন ভেন্যু ছিলো না। শেখ হাসিনাই প্রথম জহুর আহমদ চৌধুরী বিভাগীয় স্টেডিয়াম নির্মাণ করে আন্তর্জাতিক খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন, ৪। লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে যাবে।, ৫। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার প্রকল্প শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও ২, নির্মাণাধীন প্রকল্প শেখ রাসেল পানি শোধনাগার ও আমাদের বোয়ালখালী উপজেলার ভান্ডারজুরি পানি শোধনাগার প্রকল্প, এটি একটি বৃহৎ প্রকল্প সরকার করেছে। ৬। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর- বঙ্গবন্ধু’র নামে মিরসরাইতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা- এই বিশেষ ইকোনমিক জোনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে ১৫ লক্ষ মানুষের কর্মস্থান হবে। ইতিমধ্যে ৪০টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে, ৭। দোহাজারী থেকে ট্রেন লাইন স¤প্রসারণ করে টেকনাফ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, ৮। চান্দগাঁওয়ে এফআইডিসি রোডে শেখ কামাল আইটি পার্ক
নির্মাণ কাজ চলছে এটি নির্মিত হলে চট্টগ্রামের যুবসমাজের যথেষ্ট উপকার হবে। ৯। কক্সবাজার বিমান বন্দর আধুনিকায়ন ও স¤প্রসারণ চলছে। ১০। ঢাকা-চট্টগ্রাম-বিকল্প রেললাইন সরকার চিন্তা করছে, ১১। মাতারবাড়ি এলএনজি টার্মিনাল। ১২। বাঁশখালী বিদ্যুৎ প্রকল্প’র কাজ চলছে। এছাড়া শেখ হাসিনার সরকার চট্টগ্রাম বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছেন, ১৩। ওয়াসার সুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। ঢাকায় মেট্রোরেল হওয়ার পর চট্টগ্রামে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। এখানে পাহাড়, পর্বত। তারপরেও কোথায় কতটুকু মেট্রোরেল করা যায়, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনেকগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামে করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ, চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অথবা কক্সবাজার সমস্ত এলাকায় একটি বিরাট যোগাযোগের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা ও বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান করেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শেখ হাসিনা কৃষি এবং কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বছর বছর ভর্তুকি দিয়েছেন, করোনা সংকটে প্রণোদনা দিয়েছেন, বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব উদ্যোগে ঝুঁকি ছিল, আর ছিল উন্নয়ন সহযোগী, দাতা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পরামর্শকগোষ্ঠী, এনজিও; এমনকি বুদ্ধিজীবীদের নানারকম পরামর্শ। বঙ্গবন্ধুকন্যা কারও কথায় কর্ণপাত না করে, মানুষের জন্য যেটা জরুরি সেটাই করেছেন। তিনি তাঁর লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থেকেছেন। তিনি অবিচল ছিলেন বলেই ১ লাখ ৮৩ হাজার পরিবার আশ্রয়ণের অধিকার বুঝে পেয়েছে, ১ কোটি পরিবারের
জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে, মাত্র ১০ টাকায় প্রান্তিক কৃষক ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন। বছরের প্রথম দিনে আয়োজন করা হয় বই উৎসবের। বাবা মা ভাই ভ্রাতৃবধূ সবাইকে হারিয়ে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেই বহু বাধা-বিপত্তির মুখে পড়েন। শেখ হাসিনাকে কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে চায় নি। স্কুলে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে যেন সজীব ওয়াজেদ জয় স্কুল ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। সর্বস্ব হারিয়েও শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। সারা বাংলাদেশ বিচরণ করলেন, মানুষের মধ্যে মিশে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে ঘুরে তাদের সঙ্গে মিশে তাদের একত্রিত করলেন। বাংলাদেশের কোন জেলার কোন উপজেলার পাশ দিয়ে কোন নদী প্রবাহিত হয়েছে, সে অঞ্চলের গাছপালা, পশুপাখি, ইতিহাস, মানুষের সমস্যা, দুঃখ, বেদনা সম্পর্কে তার চেয়ে আর কেউ ভালো জানেন না। বাংলাদেশকে তিনি সবচেয়ে ভালো চেনেন এবং ভালো বোঝেন। শেখ হাসিনা সরাসরি মানুষের কাছে গেছেন, গণকেন্দ্রিক উন্নয়নের পথ বেছে নিয়েছেন। চোখের সামনে দেখলাম কীভাবে তিনি উত্তরবঙ্গের মানুষের এক সময়ের নিয়তি আশ্বিন-কার্তিক মাসের মঙ্গা দূর করলেন। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়ে তিনি হারিকেন দূর করলেন। যে বিষয়টা অনেকেই দেখতে পাননি, আন্দাজ করতে পারেননি; কিন্তু তিনি এটা ঠিকই অনুধাবন করেছেন। সহানুভূতির বদলে মানুষকে তিনি দেখেছেন সমানুভূতির চোখে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যাকে নিজের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করেছেন কারণ তিনি নিজে শরণার্থীর জীবন কাটিয়েছেন। শেখ হাসিনা বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। বাঙালি জাতির স্বপ্নের সারথী, দেশের দীর্ঘতম সময়ের সফল প্রধানমন্ত্রী, উন্নয়নশীল দেশসমূহের মুখপাত্র হিসেবে তিনি বিশ্বনন্দিত। শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পতাকাবাহী অনুকরণীয় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সততা, দৃঢ়তা আর গণকেন্দ্রিক উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই চোখের সামনে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আজ পরীক্ষিত উন্নয়ন মডেল। তিনি বিল ক্লিনটনকে গ্যাস রপ্তানির জন্য না বলতে পারেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারেন এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারেন। তিনিই জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর শেখ হাসিনা মানে উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানে বাংলাদেশ।
লেখক: সংসদ সদস্য ও সভাপতি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।