প্রথম সম্মেলন বলেই নেতাদের আগ্রহ বেশি

43

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন ২৮ মে। প্রায় দশ বছর পর পটিয়া আদর্শ হাইস্কুল মাঠে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের আয়োজন চলছে। সম্মেলন ঘিরে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া দক্ষিণ জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বেড়েছে। পদ পেতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা তৎপরতা শুরু করেছে। শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে বায়োডাটা জমা দিয়েছেন ৫২জন নেতা। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীরা দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পদ ভাগাভাগির দৌঁড়ে আছেন। এরমধ্যে বায়োডাটা যাচাই-বাছাইয়ে কেন্দ্রের পছন্দ প্রাধান্য পেলে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটিতে চমক আসতে পারে।
দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চৌধুরী বলেন, ১২ বছর আগে দক্ষিণ জেলা যুবলীগকে উজ্জীবিত করতে আমাদের কমিটি গঠিত হয়। এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিটি উপজেলায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে আমরা কাজ করেছি। যে কারণে দক্ষিণের যুবলীগ এখন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সাংগঠনিক ইউনিট হিসেবে সমাদৃত। দক্ষিণের প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় শক্তিশালী যুবলীগের কমিটি আছে। আমরা ২০১৭ সালে একবার জেলা সম্মেলন করতে চাইলেও কেন্দ্রীয় যুবলীগের পটপরিবর্তনে সম্ভব হয়নি। এবারই প্রথম দক্ষিণ চট্টগ্রামে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হতে যাচ্ছে। এ কমিটি ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলে উচ্ছ¡াস আছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে মৌলভী সৈয়দকে সভাপতি ও মোছলেম উদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের প্রথম কমিটি গঠিত হয়। ২০১০সালের ৩০জুন আ ন ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে সভাপতি ও অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ কমিটি হয়। গত ৫০ বছরে কখনো এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রতিবারই কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এবারই প্রথমবারের মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যে কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
নেতাকর্মীরা জানান, দক্ষিণ জেলার নেতাকর্মীরা মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত। প্রকাশ্যে এ দুটি পক্ষ বিরোধে না জড়ালেও পরোক্ষভাবে বিভাজন আছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদকে ঘিরেই নেতাকর্মীরা সক্রিয় থাকেন। যে কারণে দক্ষিণের কমিটি গঠনের আগে এই দুই বলয়ের মধ্যে কমিটি ভাগাভাগির বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা হয়। এবারও কেন্দ্রের পছন্দ প্রাধান্য না পেলে এই দুই বলয় থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভাগাভাগি হবে।
জানা যায়, দক্ষিণ জেলা থেকে এবার শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতেই বায়োডাটা জমা দিয়েছেন ৫২জন। সভাপতি পদে ১৩জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯জন নেতা বায়োডাটা জমা দেন। দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চৌধুরী এবারও সভাপতি প্রার্থী। এছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে দিদারুল আলম দিদার, মোহাম্মদ সোলায়মান চৌধুরী, নাসির উদ্দিন মিন্টু, বোরহান উদ্দিন মুরাদ, মোহাম্মদ ফারুক, সোলায়মান তালুকদার, এমএ রহিম, মো. নুরুল আমিন, আব্দুল হান্নান লিটন, শফিউল আজম শেফু, সাইফুল ইসলাম, রাজু দাশ হিরু, আকতার হোসেন প্রমুখ।
দক্ষিণ জেলা যুবলীগের পদপ্রত্যাশী দুইজন নেতা বলেন, জাবেদ ভাই ও মোছলেম ভাই সমন্বয় করে যাদের চাইবেন তারাই নেতা হবেন। মূলত এই দুটি পদে দুই নেতারা অনুসারীরাই আসবেন। এটা একপ্রকার পরিষ্কার। এর বাইরে গিয়ে যদি কারো সমৃদ্ধ বায়োডাটা কিংবা যোগ্যতা কেন্দ্রের পছন্দ হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় পছন্দও প্রাধান্য পাবে। তবে কোন নেতার পছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক না করে যদি দীর্ঘদিন যুবলীগের সাথে যুক্ত এমন নেতাদের দিয়ে কমিটি করা হয়, তাহলে দক্ষিণ জেলা যুবলীগ আরো বেশি সুসংগঠিত হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক দিদারুল ইসলাম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘দক্ষিণ জেলার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ বেশি। দীর্ঘ দশ বছর পর নতুন কমিটি আসবে। সম্মেলন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে আমরাও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কমিটিতে যোগ্য নেতারাই আসবেন। কারণ যুবলীগের বর্তমান কমিটির সুশৃঙ্খল কর্মকাÐে যুবলীগের প্রতি নেতাকর্মীদের আগ্রহ বেড়েছে।’