প্রতিমন্ত্রী হলেন চট্টগ্রামের নজরুল ইসলাম, ওয়াসিকা

37

পূর্বদেশ ডেস্ক

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকারে নতুন যুক্ত হওয়া সাতজন প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন প্রতিমন্ত্রীদের শপথ পড়ান। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে তারা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, পরে গোপনীয়তার শপথ নেন। সাত প্রতিমন্ত্রী হলেন শামসুন নাহার চাঁপা, ওয়াসিকা আয়শা খান, ডা. রোকেয়া সুলতানা ও নাহিদ ইজাহার খান, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মো. শহীদুজ্জামান সরকার ও মো. আব্দুল ওয়াদুদ। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও ওয়াসিকা আয়শা খান চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত হলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রেবেকা সুলতানা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনসহ মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
শপথ নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি নতুন প্রতিমন্ত্রীদের অভিনন্দন জানান। পরে শপথ বইয়ে তাদের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শপথগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। শপথ অনুষ্ঠান শেষে চা চক্রে যোগ দেন সবাই। খবর বিডিনিউজের
সরকার গঠনের এক মাস ২০ দিনের মাথায় নতুন সাতজনকে প্রতিমন্ত্রী করে গতকাল শুক্রবার বিকালে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শুক্রবারই তাদের দপ্তর বণ্টনের প্রজ্ঞাপন হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে তার নতুন সরকার সাজান ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে। ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন। নতুন সাতজনকে নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ জনে। মন্ত্রিসভায় কোনো উপমন্ত্রী নেই।
এদিকে শপথগ্রহণের পর পরই নতুন এই ৭ প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর বন্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। এই সাতজনের মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মো. শহীদুজ্জামান সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মো. আব্দুল ওয়াদুদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়াও সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত ৪ নারী সাংসদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বেগম রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বেগম শামসুন নাহার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বেগম নাহিদ ইজাহার খান।
এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়- এ ছয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজের কাছে রেখেছিলেন। তবে নতুন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়- এ চার মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজের কাছে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।
নতুন সাতজনের পরিচিতি
প্রথমবার সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হয়েই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগে পড়ার সময় থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত। ১৯৮৯-৮০ সালে শামসুন্নাহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মত আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদকের দায়িত্ব পান চাঁপা। এরপর থেকে টানা তিন কমিটিতেই এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খানও যোগ দিলেন সরকারে। তার বাবা আতাউর রহমান খান কায়সার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। সংরক্ষিত নারী আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা গত সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
ক্ষমতাসীন দলের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানাও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনিও এবার প্রথম সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। রোকেয়া সুলতানা শহীদ পরিবারের সন্তান। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বাবা শহীদ কবি মাহতাব উদ্দীনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে হত্যা করে। মাহতাব উদ্দীন পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ছিলেন। রোকেয়ার বাবার পৈতৃক বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামে। তিনি কুড়িগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং কুড়িগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী তিনি। মেডিকেলে পড়ার সময় তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হন। টানা তিন কমিটিতেই এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
টানা দ্বিতীয়বারের মত সংরক্ষিত আসন থেকে এমপি হওয়া নাহিদ ইজাহার খান এবার প্রতিমন্ত্রী হলেন। তিনি পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমের মেয়ে। রক্তাক্ত সেই ঘটনাপ্রবাহের ৪৭ বছর পর গত বছর মে মাসে তার বাবা কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমকে হত্যার অভিযোগে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরকে (অব.) হুকুমের আসামি করে মামলা করেন।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনের (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথমবারের মত সরকারে এলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। পেশায় ব্যবসায়ী নজরুল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য।
নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকারও প্রতিমন্ত্রী হলেন। পেশায় আইনজীবী শহীদুজ্জামান সরকার পাঁচবারের এমপি, এলাকায় তাকে মানুষ চেনে বাবলু সরকার নামে।
একাদশ সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন শহীদুজ্জামান। পরে তাকে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল ওয়াদুদ প্রতিমন্ত্রী হয়ে সরকারের দায়িত্বে এলেন। শেখ হাসিনার এবারের সরকারে তিনিই রাজশাহীর একমাত্র প্রতিনিধি। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ আগেও দুই মেয়াদে এমপি ছিলেন। খাদ্যমন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।