প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেন মেয়র রেজাউল

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার দেড় বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেন। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি রেজাউল মেয়র নির্বাচিত হন। শপথ নিয়েছেন ১১ ফেব্রুয়ারি। একই প্রজ্ঞাপনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে মন্ত্রীর মর্যাদা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে সরকার। এর আগে চট্টগ্রামে মেয়র হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র মনোনীত হন। বিএনপি সমর্থিত আরেক মেয়র মীর নাছির উদ্দিনও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০২ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়া এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকেও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সেটা অব্যাহত রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। মহিউদ্দীন চৌধুরীর পর বিএনপির মনজুর আলম ও আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হয়েছিলেন। মন্ত্রিত্বের পদমর্যাদা পাননি দুজনের কেউ-ই। এ নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর মনে ছিল হতাশা-খেদ। বিশেষ করে ভৌগলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যার দিক বিবেচনায় চসিক মেয়র নাছিরকে নিজ দল আওয়ামী লীগ সরকার সেই মর্যাদা না দেওয়ায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ ঝেরেছিলেন বিশিষ্টজনরা। চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে মেয়রের কর্তৃত্ব বাড়ানোর দাবি অনেকদিনের। সে জন্য অবশ্যই মেয়রকে মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিতে হবে। না হয় অন্য সেবা সংস্থাগুলো মেয়রের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে। কেননা ওইসব সংস্থার প্রধানদের পদমর্যাদা মেয়রদেরই সমান (অতিরিক্ত সচিব)। ফলে সমন্বয় সভায় মেয়র ডাকলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রধানরা নিজেরা উপস্থিত না হয়ে নিচের স্তরের কোনো একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে থাকেন। তাই সেবা সংস্থাগুলোর ওপর কর্তৃত্ব বাড়াতে চসিক মেয়রের পদমর্যাদা বাড়ানোর বিকল্প দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন খোদ মেয়র রেজাউলও। গত বছর দায়িত্ব নেয়ার আগে এক সুধী সমাবেশে তিনি বলেছেন, আমার পরিষ্কার কথা হচ্ছে, যে সেবা সংস্থা গাফিলতি করবে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। অনেক সমম্বয় সভা হয়েছে, কিন্তু কার্যকর সেবা পায়নি। মেয়রের নির্বাহী ক্ষমতা থাকা উচিত। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে- মেয়ররা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর মর্যাদা পান না। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনেও কিছু উলে­খ নেই এ ব্যাপারে। আর সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকে এ মর্যাদা দিতে হলে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। তার আগে অবশ্য এ বিষয়ে সুপারিশ লাগে প্রধানমন্ত্রীর। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী যদি মেয়রদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দেবেন। জানা যায়, দ্য মিনিস্টারস অ্যান্ড মিনিস্টারস অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেম্যুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুসারে মন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা ৯২ হাজার টাকা এবং উপমন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা সম্মানী পাবেন। এই সম্মানী করমুক্ত। এর বাইরে তারা সরকারি বাসভবন পাবেন। সরকারি বাসভবন পাওয়া না গেলে ভাড়া বাড়িতে থাকবেন এবং ওই বাড়ির যাবতীয় বিল সরকার পরিশোধ করবে। আইন অনুযায়ী, তাদের বাড়িতেই নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। আর মেয়াদ শেষে নিরাপত্তারক্ষীদের (যদি ভাড়া বাসা বা অন্য কোনো ব্যবস্থা থাকে) থাকার জন্য নির্মিত ছাউনি তুলে নেওয়া হবে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা সরকারিভাবে দেশে বা বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ভাতা পাবেন।