প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে চান জাকারবার্গ

42

ফুরসত পেলেই জাকারবার্গ দৌড়ান। ২০১৬ সালে ৩৬৫ মাইল দৌড়ানোর লক্ষ্য স্থির করেছিলেন তিনি। জুলাই মাসের মধ্যেই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেন। তিনি মার্শাল আর্টের চর্চা করেন না। তবে তাঁর আত্মরক্ষা আর অন্যকে পরাস্ত করার ব্যবস্থা জাপানের মার্শাল আর্ট আইকিডোর মতোই। প্রতিপক্ষের ওপর যে প্রবল শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাঁর পেশাগত জীবনটাকে মার্শাল আর্ট চর্চার সঙ্গে অনায়াসে তুলনা করা যায়।
গত মার্চ মাসে জাকারবার্গ ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ফেসবুকের লক্ষ্য হবে প্রাইভেসিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। এতে এনক্রিপটেড বার্তা আদান–প্রদানের সুবিধা থাকবে। পর্যবেক্ষকেরা বলে দিলেন, জাকারবার্গের এ লক্ষ্য হচ্ছে প্রাইভেসিসহ নানা বিষয়ে সমালোচনা থেকে ফেসবুককে সুরক্ষার অস্ত্র। কেউ কেউ একে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সেবাগুলোকে, বিশেষ করে মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপকে একসূত্রে বাঁধার প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখেন। এতে ফেসবুককে ভেঙে পৃথক কয়েকটি কোম্পানি করার যে আওয়াজ উঠছে, তা কঠিন হবে। কেউ কেউ বললেন, সহিংস কনটেন্ট সরানোর দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হতে জাকারবার্গের এ প্রচেষ্টা।
গত ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সান হোসেতে ফেসবুকের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলনে জাকারবার্গ নতুন এক প্রতিযোগিতার ঘোষণা দিলেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে নতুন রূপ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বললেন তিনি। জাকারবার্গ বললেন, ‘ভবিষ্যৎ মূলত ব্যক্তিগত যোগাযোগকেন্দ্রিক।’
জাকারবার্গ সরাসরি ঘোষণা না দিলেও এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, জাকারবার্গ হাঁটছেন উইচ্যাটের পথে। উইচ্যাট হলো চীনের টেনসেন্টের মোবাইল টেক্সট এবং ভয়েস মেসেজ যোগাযোগের সেবা। জাকারবার্গ এখন উইচ্যাটের পশ্চিমা সংস্করণ তৈরি করতে যাচ্ছেন।
জাকারবার্গের এ পরিকল্পনা সেকেলে নাকি দূরদর্শী? জাকারবার্গ পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছেন, ফেসবুকের মূল ব্যবসা আরও পরিণত হচ্ছে। প্রাইভেসি লঙ্ঘন বাবদ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের ৩০০ কোটি ডলার জরিমানা বাদেও এর পরিচালনা থেকে লাভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে দুশ্চিন্তা বেড়েছে ব্যবহারকারী বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। ব্যবহারকারী বাড়ার হার কমছে। ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোয় অবস্থা শোচনীয়। তরুণেরা আরও স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রামের মতো সেবায় ঝুঁকছে। তাদের কাছে স্টোরিজের মতো ফিচার জনপ্রিয় হচ্ছে।
জাকারবার্গ তাঁর ‘টাউন স্কয়ারকে’ ডিজিটাল ‘লিভিং রুমে’ নেওয়ার প্রচেষ্টা চালু রেখেছেন। শিগগিরই ফেসবুকের নিউজফিডের চেয়ে স্টোরিজের ব্যবহার বেড়ে যাবে। হোয়াটসঅ্যাপকে ঘিরে নিরাপদ বার্তা আদান–প্রদানের পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছেন তিনি। এর মাধ্যমে পরস্পরকে খোঁজা ডিজিটাল লেনদেন, অনলাইন কেনাকাটার মতো নানা সুবিধা আসবে। এতে ফেসবুকের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করা যাবে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট লিখেছে, জাকারবার্গের পরিকল্পনা করা ওই প্ল্যাটফর্মের বেশ কিছু সেবা ইতিমধ্যে চালু হতে শুরু করেছে। ভারতে পেমেন্ট সেবা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে কেনাকাটার সুবিধা চালু হয়েছে। শুরুর দিকে জাকারবার্গ যেভাবে অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত নিতেন, ৩৪ বছর বয়সী জাকারবার্গ তার চেয়ে অনেক পরিণত। এখন পুরো ব্যবসা পরিকল্পনা করে নেমেছেন তিনি। এখন তিনি অনেক সতর্ক।
অবশ্য, জাকারবার্গের পরিকল্পনায় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর একটি হচ্ছে অর্থনৈতিক। স্মার্টফোনে উইচ্যাটের গ্রহণযোগ্যতার কারণ হচ্ছে চীনে উল্লেখযোগ্য অ্যাপ স্টোর না থাকা। এ ক্ষেত্রে ফেসবুককে গুগল ও অ্যাপলকে প্রতিযোগী হিসেবে পাবে। নতুন প্ল্যাটফর্মে অর্থ আয়ের নতুন উপায় থাকতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, উইচ্যাট থেকে খুব বেশি আয় করে না টেনসেন্ট। তাদের আয় আসে অনলাইন গেমস থেকে। ফেসবুকের আয়ের ঝুলি ভরতে হলে নতুন আয়ের উৎস খুঁজতে হবে।
ফেসবুকের সেবাগুলো ব্যবহার করতে খরচ হয় না বলে এর কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যবহারকারীকে বিরক্ত করবে না তারা। বরং একটি বড় নেটওয়ার্কে নজরদারি করা সহজ। এর আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতা দিয়ে ক্ষতিকর কনটেন্ট থেকে ব্যবহারকারীকে রক্ষা করা যায়। এ ছাড়া চীনের বাইরে উইচ্যাটের একটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীও তৈরি করা যাবে।
অবশ্য জাকারবার্গের পরিকল্পনায় এখন বড় বাধা রাজনীতিবিদেরা। ফেসবুকের আধিপত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার অনেকেই। ফেসবুককে ভেঙে ফেলার আওয়াজ উঠছে। জাকারবার্গ চাইছেন, সরকারিভাবে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের মতো নিয়ম করা হোক, যাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো তার আওতার মধ্যে থেকে কার্যক্রম চালাতে পারে।