প্রতিদিন ইফতার করেন হাজারো রোজাদার

65

নিজস্ব প্রতিবেদক

একদিকে তৈরি হচ্ছে নানা রকম ইফতার সামগ্রী। অন্যদিকে মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করছেন একজন আলেম। মসজিদ সংলগ্ন খোলা মাঠে সারিবদ্ধভাবে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আলেমের বয়ান শুনছেন হাজারো মানুষ। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মাগরিবের আজানের। আজান দিলেই নানা পদের ইফতার সামগ্রী আহারের মাধ্যমে রোজা ভাঙবেন তাঁরা। নগরীর জিইসি মোড়ের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রমজানজুড়ে এমন চিত্রের দেখা মেলে। চট্টগ্রামের প্রয়াত সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর এই মহৎ উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশন।
প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সবাই চট্টলবীর হিসেবেই চিনে। প্রতিবছর রমজান মাস এলেই হাজারো মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ইফতারের আয়োজন করতেন তিনি। রোজাদারদের ইফতার করিয়ে আনন্দ পেতেন তিনি। এটিই যেন তার ভালো লাগা আর ভালোবাসা। তিনি আজ বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর সৃষ্ট এ মহান কর্মযজ্ঞ এখনও চালু রয়েছে। যদিও করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল এ কার্যক্রম। তবে ইফতার সামগ্রী বিতরণ চালু ছিল। তখন ঘরে খাবার তৈরি করে ট্রাক দিয়ে অসহায় মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। কিন্তু এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসায় আবারও শুরু হয়েছে সে আয়োজন।
প্রতিদিন বিকেল হলেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ইফতার করতে ভিড় করেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে। ভিন্ন কিছু, ভিন্ন আমেজ থাকে এখানে। ধনী গরীবের কোন ভেদাভেদ নেই। সবাই একই কাতারে বসে ইফতার করেন। এছাড়াও ইসলাম, রোজা, নামাজ সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারেন রোজাদাররা।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মাদ মঈনুদ্দিন জানান, ‘আমি এবং আমার সহকারী ইমাম ছাড়াও প্রতিদিন একজন বড় আলেম আছরের নামাজের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এসময় দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া পরিচালনা করা হয়। আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষের আয়োজন। কোনদিন বেশি হয়। আবার কোন দিন কম হয়। প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার মানুষের আয়োজন হয় এখানে। চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ বাবুর্চি মোহাম্মদ হোসাইনের রান্না করা ইফতার সামগ্রী এখানে পরিবেশন করা হয়। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ইফতার বিতরণ করে থাকে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশন।’
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন বলেন, ‘আমার আব্বা মরহুম এটিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সবসময় সবাইকে নিয়ে ইফতার করাতেন। তিনি থাকাকালীন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর হাজারো মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করতেন। তার অবর্তমানে আমরা এ কর্মযজ্ঞ চালিয়ে নিচ্ছি। এখানে প্রতিদিন আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার বিভিন্ন স্তরের মানুষ ইফতার করেন। ইফতারের আগে প্রতিদিন একেকজন আলেম ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। করোনায় বন্ধ ছিল আমাদের আয়োজন। কিন্তু সে ইফতার সামগ্রী আমরা রাস্তায় রাস্তায় ট্রাকে করে গরীব অসহায় মানুষদের দিয়েছি। কারও জন্য বাধা নেই, যে কেউ এসে ইফতার করতে পারবেন।’