প্রতিটি এলাকায় যেন খেলার মাঠ থাকে: প্রধানমন্ত্রী

20

পূর্বদেশ অনলাইন
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে জাতি গঠনে খেলাধুলা ও শরীর চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে প্রতিটি এলাকাতে খেলার মাঠ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। বুধবার (১১ মে) সকালে ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০১৩-২০২১’- বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে (ভার্চ্যুয়াল) তিনি এ নির্দেশনা দেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলার বিষয়ে আমাদের আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া উচিত। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো ঢাকা শহরেই খেলাধুলার জায়গা কম।’ নতুন নতুন খেলার মাঠ করতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরইমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি আমরা খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। ’ এ সময় তিনি রাজধানীর বাইরে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করার বিষয়টি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার সুবিধাদির উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে দেশের ১২৫টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৮৬টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে দেশের অবশিষ্ট ১৭১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ চলমান রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করারও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। বাবা-মা, অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে সরকার প্রধান বলেন, ‘অন্তত বাবা-মা, অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ কিছু সময়ের জন্য হলেও সন্তানরা যাতে হাত-পা ছুঁড়ে খেলতে পারে সে বিষয়ে আপনাদের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আর প্রত্যেকটা এলাকায় খেলার মাঠ থাকা একান্ত ভাবে প্রয়োজন। ’ তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশুরা, এখন তো সব ফ্ল্যাটে বাস করে, ফ্ল্যাটে বাস করে করে তারা ফার্মের মুরগীর মতোই হয়ে যাচ্ছে। হাঁটা-চলা… আর এখনতো মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ আর আইপ্যাড এগুলো ব্যবহার করে সারাক্ষণ ওগুলোর মধ্যে পড়ে থাকা। এটা আসলে মানসিক ভাবে, শারীরিক ভাবে সুস্থতার লক্ষণ না। ’ ‘খেলাধুলা-দৌড় ঝাঁপের মধ্যে দিয়ে শারিরীক, মানসিক বিকাশ হওয়ার সুযোগ পায়’উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধুলা, স্পোর্টস এটা একটা জাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখে বলে আমি বিশ্বাস করি। … খেলাধুলা এবং শরীর চর্চার মাধ্যমে শারিরীক-মানসিক ভাবেও আমাদের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট উন্নত হবে। ’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘আব্বার টিম ও আমার টিমে যখন খেলা হতো তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করত। আমাদের স্কুল টিম খুব ভাল ছিল। মহকুমায় যারা ভালো খেলোয়াড় ছিল, তাদের এনে ভর্তি করতাম এবং বেতন ফ্রি করে দিতাম। ’ দেশীয় খেলাগুলো আবারও ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের অভ্যন্তরে, আমাদের গ্রামে অনেকগুলো খেলা আছে, এসব গ্রামীণ খেলাগুলো কিছু চালু করা হয়েছে। এগুলো সচল করতে হবে। যেগুলোতে খুব বেশি খরচও লাগে না। নিজেরা খেলবে, আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা, এই প্রতিযোগিতা যাতে ব্যাপক ভাবে চলে সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন সেটাও আমরা করে দিচ্ছি। ’ খেলাধুলার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ এবং সফলতার কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ থেকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছে। ফলে ২০০৯ হতে ২০২১ সময়ে ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের সফলতার পরিসংখ্যান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন ক্রীড়া ডিসিপ্লিনে আমাদের জাতীয় দলগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মোট ৪৭৩টি স্বর্ণ, ৪৭৪টি রৌপ্য, ৫৪৭টি তাম্র পদক অর্জন এবং ৯৬ বার চ্যাম্পিয়ন, ২৩ বার রানার্স আপ ও ২১ বার তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। ’
নিয়মিত খেলোয়াড়দের পাশাপাশি অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রাও ভালো পারদর্শীতা দেখাচ্ছে। তারা সুস্থদের চেয়েও ভালো করছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা বিভিন্ন সময়ে স্পেশাল আলিম্পিকে অংশ নিয়ে ২১৬টি স্বর্ণ, ১০৯টি রৌপ্য ও ৮৪টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে দেশকে সম্মানিত করেছে। এ বছরের মার্চে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু চার-জাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ভারতকে ৯ উইকেটে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে বলে জানান সরকার প্রধান।
অনুষ্ঠানে ৮৫ জন গুণী খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠককে ২০১৩ হতে ২০২০ সালের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল ৭৭ জন ক্রীড়াবিদের হাতে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে (ভার্চ্যুয়ালি) আরও ৮জন বিজয়ীকে পুরস্কার দেওয়া হয়।