প্রতারণার অভিযোগে ৭ কর্মকর্তা জেলে গেলেও অব্যাহত আছে কার্যক্রম

196

প্রতারণার অভিযোগে এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিমিটেডের সাত কর্মকর্তা কারাগারে আছেন। ই-কমার্সের আড়ালে এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণায় নেমেছিলেন তারা। অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার কোতোয়ালী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাত কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে। তবে এরপরও বন্ধ হয়নি প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। লোভনীয় অফারে এখনো কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সংঘবদ্ধ চক্রটি।
এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড নামের প্রতিষ্ঠানটির জন্ম মূলত প্রতারণা ও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের দায়ে বন্ধ করে দেওয়া এমএলএম কোম্পানি ‘ডেসটিনি-২০০০ লি.’ এর কথিত কয়েকজন কর্মকর্তার হাত ধরে। ডেসটিনি বন্ধ হওয়ার পর তারা প্রত্যেকেই এলাকা ছেড়েছিলেন। আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন কয়েক বছর। এরই মধ্যে সুযোগ বুঝে তারা ই-কমার্সের নামে ডেসটিনির আদলে এমএলএম কার্যক্রম শুরু করেন। কাজির দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারে অফিস নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। এ প্রতারণার ফাঁদে ধরা দিতে শুরু করে শত শত তরুণ-তরুণী। অল্প দিনে লাখ লাখ টাকা আয়ের লোভনীয় স্বপ্ন দেখানো হয় এসব তরুণ-তরুণীদের। আর এ ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন অনেকে।
এ বিষয়ে কথা হলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। জেলা প্রশাসনকে আমরা বলেছি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এদের কার্যক্রম বন্ধ করা যেতে পারে। আমরা সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আরো কয়েকজন আসামি পলাতক আছেন, তাদের ধরার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালায়। এসময় প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ম্যানেজার (জিএম) রাজীব দাশ (৩৯), কর্মকর্তা রাজীব তালুকদার (৪০), ইনচার্জ রবিন মিত্র (৩৩), উজ্জ্বল সেন (৪১), সুমন বিশ্বাস (৩৮), অপু দাশ (২৯), এবং রঞ্জিত গুহ (৪৮) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আটককৃতদের মধ্যে ডেসটিনির প্রফিট শেয়ার ডিস্ট্রিবিউটর (পিএসডি) ছিলেন রাজীব দাশ। রাজীব তালুকদার ডেসটিনির ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ ও ডেসটিনি ডিস্ট্রিবিউটর ফোরামের বিভাগীয় সভাপতি ছিলেন। এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইডের ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন রবিন মিত্র। তিনি রাজীব মিত্রের ছোট ভাই। দেশের বিভিন্ন স্থানে ই-কমার্সের আড়ালে তিনি এমএলএম প্রকল্প খুলে বসেছিলেন। উজ্জ্বল সেন এবং সুমন বিশ্বাস ছিলেন ডেসটিনির ‘ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ’। রঞ্জিত গুহ (৪৮) এবং অপু দাশ (২৯) বহুল আলোচিত এমএলএম কোম্পানি স্পিক এশিয়া ও ইউনিপে টু ইউ’র কর্মকর্তা। মানুষের সাথে প্রতারণা করায় ২০১২ সাল পরবর্তী সময়ে এরা সবাই রোষানল থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। বর্তমানে এরা সবাই এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইডের পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্বে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গতবছরের ১৪ নভেম্বর দৈনিক পূর্বদেশে ‘সুপারশপের আড়ালে আবারও এমএলএম প্রতারণার ফাঁদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে এনেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইডের প্রতারণার নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।