প্রচারণায় সরব নৌকার প্রার্থী ভোট নিয়ে শঙ্কা বিএনপির

40

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। শেষ মূহুর্তের প্রচারণায় সরব নৌকার প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপি। অন্যদিকে দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানিসহ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নানান শঙ্কায় প্রচারণা কমিয়ে নীরব ভোট বিপ্লবের প্রত্যাশায় আছেন ধানের শীষের প্রার্থী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। আগামী ১৪ অক্টোবর নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দ্বারা ভোট গ্রহণ করা হবে উপজেলার সবক’টি কেন্দ্রে। গত নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত পূর্ণ প্যানেল (চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান) নির্বাচিত হলেও এবারের নির্বাচনে তারা কোনো প্রার্থী দেয়নি। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণায় এম এ মোতালেবকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান। এছাড়াও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও তাঁতী লীগের নেতা-কর্মীরাও নৌকার বিজয়ে কাজ করছেন। প্রতিদিনই গণসংযোগ ও পথসভা চলছে।
অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর পক্ষে সাতকানিয়া বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এর বাইরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নব গঠিত আহব্বায়ক কমিটির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে গত মঙ্গলবার দলীয় প্রার্থীর হয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। বিএনপির সকল সহযোগী সংগঠন ও এর নেতা-কর্মীরা প্রশাসনের হয়রানির আশঙ্কায় প্রকাশ্যে মাঠে নামার দৃশ্য কম। তবে দলটির নেতা-কর্মীরা নিরব ভোট বিপ্লবের আশা করছেন। এ জন্য নানান কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।
একটি পৌরসভা ও ১৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতকানিয়া উপজেলায় ২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৮০ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ২৮৬ জন পুরুষ ও ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯৪ জন নারী ভোটার।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক মফিজুর রহমান বলেন, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। দীর্ঘ সময়ে পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদে নেতৃত্বে ছিল সরকার বিরোধীরা। তাই এবারের নির্বাচনে সরকার দলীয় ও অত্যন্ত সৎ ও যোগ্য লোক হিসেবে পরিচিত এম এ মোতালেব সিআইপিকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে পারলে সাতকানিয়ার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত সাতকানিয়া প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করবে সাতকানিয়া। জনগণের অভ‚তপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির প্রার্থীর প্রচারণা বিষয়ে সাতকানিয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি হাজি রফিকুর আলম বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছিলাম। কিন্তু প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রশাসনের লোকজনের সামনেই আমাদের প্রচার গাড়িতে একাধিক বার হামলা, প্রার্থীর উপর হামলা হওয়ার কারনে আমরা শঙ্কিত। আমাদের অভিযোগ সত্বেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমাদের প্রার্থী রাস্তায় বের হলেই হামলা করা হচ্ছে। তাই আমরা আমাদের মতো করে কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছি। নির্বাচনী প্রচারণায় নেতা-কর্মীদের কম সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিভাবে নেতা-কর্মীরা সম্পৃক্ত হবে? আমাদের সিনিয়র নেতা মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন সকল বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে বিজয়ী করবে। এখানকার সাধারণ ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারলে আর আগের রাতের ভোট সংস্করণ না হলে ধানের শীষের পক্ষে নিরব ভোট বিপ্লব ঘটবে।