প্রকৃতি ধ্বংস করে কোনো হাসপাতাল নয়

29

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কিছু স্থানের মধ্যে পাহাড় বেষ্টিত সিআরবি এলাকা অন্যতম। সাত রাস্তার মোড় নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ দৃশ্য সম্বলিত এই এলাকায় আছে শতবর্ষী বেশ কিছু গাছ। যা লক্ষ কোটি টাকা খরচ করেও সরকার কিংবা রেলওয়ের পক্ষে এমন নয়নাভিরাম এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব না। এটা সম্পূর্ণ প্রকৃতির দান। কিন্তু আমরা এখন নিজের হাতে সেই প্রকৃতির দান কে ধ্বংস করে গড়ে তুলতে চাচ্ছি অট্টালিকা। যা সম্পূর্ণ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। প্রকৃতি ধ্বংস করে কোনো হাসপাতাল কিংবা স্থাপনা হতে পারেনা। সিআরবিতে ও হতে পারে না। এই সিআরবি এলাকা ঘিরে আমার আছে আলাদা একটা আবেগ। আমার বাবা ছিলেন রেলওয়ের চাকরিজীবী। বাবার অফিস ছিল এই সিআরবিতে। তাই অসংখ্যবার গিয়েছি এই সিআরবিতে। এখনও যাই তবে অফিসে নয়, এর আশেপাশের প্রকৃতির টানে। এক সময়ে এই এলাকা ছিল নিঝুম। সুনসান নিরবতা ছিল চারিদিকে। সন্ধ্যা হলেই এই এলাকায় নেমে আসতো রাজ্যের ভয়।
সেই সিআরবি এলাকা এখন চট্টগ্রামের অন্যতম সাংস্কৃতিক এবং বিনোদনের এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। ডিসি হিলে যখন বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠানে লোক ধারণের জায়গা হচ্ছিল না, ঠিক তখনি এক ঝাঁক সংস্কৃতিমনা মানুষ আবিষ্কার করলো সিআরবি’র শিরিষ তলা। এরপর দিন দিন এই এলাকা এমনভাবে জমে উঠলো ডিসি হিলের চেয়ে এখানেই জনসমাগম বেশি হতে লাগলো। এক সময়ে প্রশাসনিক ষড়যন্ত্রে ডিসি হিলে সব ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে, শিরীষ তলা হয়ে উঠে উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান কেন্দ্র স্থল। রেল কর্তৃপক্ষ ও এটা অনুধাবন করতে পেরে শিরিষ তলা এলাকায় দর্শকদের বসার স্থান সহ হাঁটার জন্য সুন্দর রাস্তাও করে দেন।
সবকিছু সুন্দর ভাবেই চলছিল কিন্তু হঠাৎ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আবার কী বোধ হয় হলো এই জায়গায় আধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য ইউনাইটেড গ্রæপের সাথে ৫০ বছরের চুক্তি করে ফেলল। তারা অবশ্য যুক্তি দেখাচ্ছে বর্তমান হাসপাতালটা ভেঙে এবং এর পাশের গোয়াল পাড়া এলাকার কিছু জায়গা নিয়ে ৫০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল এবং ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করবে। শিরিষ তলায় তারা কিছু করবে না এবং শতবর্ষী গাছ ও কাটবে না। যা ইতিমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা জানিয়ে ও দিয়েছে। কিন্তু এটাতো সহজেই বুঝা যায় এখানে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল এবং ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ হলে লোক সমাগমের কারণে শিরিষ তলায় কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবেনা। তখন এক সময়ে হবে কী হাসপাতালের নিরাপত্তার কথা বলে শিরিষ তলাও ডিসি হিলের মতো বন্ধ করে দিবে। তখন আর কিছু করার থাকবে না। এছাড়া হাসপাতাল কে ঘিরে এই এলাকায় গড়ে উঠবে হরেকরকম ব্যবসা। চলাচল করবে অবাধে গাাড়ি সৃষ্টি হবে যানজট। তখন কী নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবি তে শান্তিতে হাঁটা যাবে, বিশুদ্ধ নিশ্বাস নেয়া যাবে। তখন এই এলাকা হয়ে উঠবে জমজমাট ব্যবসায়িক এলাকা। অতএব আধুনিক হাসপাতাল নির্মিত হোক রেলওয়ের অন্য কোনো জায়গায়, সিআরবি তে নয়। সিআরবি থাকবে তার ঐতিহ্য নিয়ে, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে। আশাকরি কর্তৃপক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। এই ব্যাপারে অত্র এলাকার মাননীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও সংগঠক