প্রকৃতির বাবা

6

 

আমাদের স্কুলের বন্ধুদের প্রায় সবার অভিযোগ প্রকৃতির বাবা কারো বিয়েতে আসেনি, বাড়িতে আসলেও বাজারে আসেনা, কারো সাথে দেখা করেনা, কল দিলে রিসিভ করেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব অভিযোগের অবশ্য কোনো প্রতিকার নেই। স্কুলে আমাদের মেধা তালিকার ওপরের দিকে ছিল তার অবস্থান। পড়ালেখায় যেমন ভাল, তেমনি গানের ধরাজ গলা তার। বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় কখনো তাকে অংশ নিতে না দেখলেও মাঝে মাঝে গান শোনার সৌভাগ্য হত আমাদের। বৌদির সে সৌভাগ্য হয়েছে কিনা জানিনা। মাঝে মাঝে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে তার কণ্ঠে গাওয়া এক থেকে দুই মিনিটের গান আসতো কিছুদিন আগেও। প্রেমে পড়লে মানুষ যে ধরনের গান শুনে সাধারণত এমন গানই ছিল-আছে তার পছন্দের তালিকায়। আমার কিন্তু শুনতে বেশ লাগে।
এসএসসি পাসের পর আমি এক কলেজে আর ও আরেক কলেজে ভর্তি হয়। ফলে যোগাযোগে কিছুটা বিঘœ ঘটে। তখনো মোবাইল ফোন আমার হাতে আসেনি। দুইটি কলেজ একই পথে হওয়ায় মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হত বাসে। অনার্সে একই কলেজে ভর্তি হলেও দুইজন ছিলাম দুই বিভাগে। বিভাগ আলাদা হলেও কিছু কমন বিষয় থাকায় আমরা প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়েছি একসাথে। পড়তে যাওয়ার আগে-পরের সময়টা আমাদের দারুণ কাটতো। মাস্টার্সের পর আবার আমরা পরস্পর থেকে দূরে চলে যাই। সে সিএ পড়াশোনার জন্য ঢাকা চলে যায়। একাধিকবার ঢাকায় গিয়ে তাঁর বাসায় থেকেছি। আপ্যায়ন কেমন করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমাদের অন্য বন্ধুরাও ঢাকা গেলে তার বাসায় যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়না যে আমাদের কিছু কথা প্রাণ খুলে বলি কারো সাথে, সেরকমই একজন প্রকৃতির বাবা। প্রাণখুলে কথা বলে স্বস্তি পাওয়া যায়। হয়তো তাই এত অভিযোগের পরেও তার সাথে কথা বললে সব অভিমান দূর হয়ে যায়।
এবারের ঈদের পর হঠাৎ একদিন তার বাড়িতে গেলাম। জানি তার জগৎ জুড়ে এখন শুধুই একজন ‘প্রকৃতি কর্মকার পূণ্য’। বাড়িতে যেয়েও সেটির প্রমাণ পেলাম। মেয়ের সাথে খুনসুটিতে ঈদের ছুটির পুরোটাই পার করেছে সে। আমি যতক্ষণ তার ঘরে ছিলাম ততক্ষণে প্রকৃতি কম হলেও ৫ বার আমাদের সামনে এসেছে, আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গিয়েছে। বাইরে থেকে গেছি বলে ইচ্ছা থাকলেও তাকে কোলে নিইনি ইচ্ছে করে। হয়তো প্রকৃতির বাবা মনে মনে বলেছে, দেখেছো ছেলেটা আসলো অথচ আমার মেয়েটাকে একবারও কোলে নিলো না। বলতেই পারে। আমি আসলেই তাকে কোলে নেইনি। প্রকৃতির মায়ার টানে তার বাবা ঘর থেকে বের হয়নি, মেয়ের বার বার বাবার কাছে আসা দেখেই সেটি উপলব্ধি করতে পেরেছি।
বিয়ের পর বৌদির সাথে একাধিকবার মেসেঞ্জারে আলাপ হলেও সরাসরি দেখা এবারই প্রথম। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আমাকে নুডুলস, আম, চা আরও কতকি তৈরি করে খাওয়ালেন তার হিসেব নেই। তারপরও বললেন ‘কিছুই করতে পারিনি’। আসলেই এতকিছু খাওয়ানোর পরেও কী আরো কিছু করা সম্ভব।
প্রকৃতির বাবা এখন একটি শিল্পগ্রæপের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা, আশা করছি অচিরেই তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তায় উপনীত হবেন।
বন্ধুদের অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইনা। শুধু বলি প্রকৃতির জন্য হয়তো এখনকার অভিযোগ মাফ করা যাবে, কিন্তু আগের অভিযোগের কী হবে ?
প্রশ্নকর্তা!
মিলন স্যারের রিমন ও ঘোপাল স্যারের ফারুক
(আমার নাম কিন্তু ওমর ফারুক ইমন)