পৌরসভায় প্রশাসক চান না মেয়রগণ

17

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেয়রের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে নির্বাচন না হলে পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রেখে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা)(সংশোধন) আইন, ২০২১’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন পৌরসভার মেয়রদের একটি অংশ। তারা পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের বিধান বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা)(সংশোধন) আইন, ২০২১’ পৌরসভার মেয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে চ‚ড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছেন। গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়। ‘বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতি-ম্যাব’-এর ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এবং মাদারিপুর পৌরসভার মেয়র মো. খালিদ হোসেন প্রশাসক বাসানোর বিধান বাতিল করার দাবি জানিয়ে বলেন, পৌরসভায় প্রশাসক বসানোর বিধান করার মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে বরিশালের মতো প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের মুখোমুখি করার ষড়যন্ত্র চলছে।
এ সময় তিনি সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বলেন, পৌরসভার মেয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে আইন তৈরি করতে হবে। তাছাড়া প্রশাসক নিয়োগ প্রচলিত আইন ও আদালতের নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, তাই এ বিষয়ে সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কেউ মামলা করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকুক আমরা তার পক্ষে নই এবং পৌরসভার কোনো মেয়র মামলা করেননি। আমরা চাই নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হোক। এজন্য সংসদে একটি আইন পাস করে নিলেই হয়। এর জন্য প্রশাসক বসানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
এ বিষয়ে মতামত জানতে সাতকানিয়ার পৌরমেয়র মোহাম্মদ জোবায়েরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বদেশকে জানান, একজন পৌরমেয়র নির্বাচিত হন ৫ বছরের জন্য। কিন্তু অনেক জায়গায় আইনি জটিলতার সুযোগ নিয়ে মেয়ররা নির্বাচন আটকে দিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে যান। আইনে যৌক্তিক কারণের কথা বলা হলেও অনেকে তা মান্য করেন না। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যথার্থ। তারপরও যদি আইনটি কোনো কারণে সাংঘর্ষিক হলে মন্ত্রণালয় সেটা বিবেচনা করবে। আমি মনে করি এই আইনের ফলে সৃষ্ট জটিলতা অনেকটা কমে আসবে।
গত ৪ অক্টোবর একসঙ্গে এক বছর সময় বেতন-ভাতা বকেয়া রাখলে পৌরসভা বাতিলের বিধান রেখে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা)(সংশোধন) আইন, ২০২১’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এই আইনে মেয়রের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে নির্বাচন না হলে পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সংশোধিত আইন অনুযায়ী পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। পৌরসভার ‘সচিব’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পৌরসভা আইনে একটা অপ‚র্ণতা ছিল। এই জিনিসটা কেউ খেয়াল করেনি। নির্বাচিত পৌরসভার সময়সীমা ছিল পাঁচ বছর। কিন্তু সেখানে একটা বিধান ছিল যে পাঁচ বছর হলেও পরবর্তী পৌরসভার নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ওই মেয়র কন্টিনিউ করবে।
‘এতে দেখা গেল অনেক জায়গাতে পাঁচ বছরের পরে বিভিন্ন ইস্যুতে মেয়ররা মামলা-মোকাদ্দমা করে ১২ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত থেকে যাচ্ছেন। কিন্তু যেহেতু আইনে কোনো কিছু ক্লিয়ার ছিল না সেজন্য কিছু করা যাচ্ছিল না। দোহারে মনে হয় ১৫ বছর ধরে মেয়র আছেন। কিছুই করা যাচ্ছিল না। হাইকোর্ট থেকেও তাদের পক্ষে রায় ছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে মন্ত্রিসভায় এটা নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এর আগে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আজকে এই আইনের মধ্যে ওই বিধানটা সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছর যখন শেষ হয়ে যাবে তখন মেয়র ও ওনার কাউন্সিল বাতিল হয়ে যাবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সেক্ষেত্রে (বাতিলের পর) প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো কর্মকর্তা বা সরকার যদি কোনো ব্যক্তিকে যোগ্য মনে করে, ছয় মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এই বিধানটা পৌরসভা আইনে ছিল না। এখন পরিষ্কার হয়ে গেল পৌরসভায় পাঁচ বছরের বেশি কেউ (মেয়র ও কাউন্সিলর) থাকতে পারবে না।
সংশোধিত খসড়া আইন তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি একসঙ্গে ১২ মাস বকেয়া থাকলে ওই পৌরসভা বাতিল করা যাবে। আগে পৌরসভা করার জন্য প্রতি কিলোমিটারে দেড় হাজার লোক থাকার একটা শর্ত ছিল, সেটা দুই হাজার করে দেওয়া হয়েছে। এতে ট্যাক্স কালেকশনটা বাড়বে, কাজকর্ম বেশি হবে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ পৌরসভা বেতন-ভাতা দিতে পারছে। সমস্যাটা এখন অনেক কমে আসছে বলেও জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।