পোস্টারেও উপেক্ষিত আ. লীগের নির্দেশনা

166

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ এ সময়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা যেমন বেড়েছে, তেমনি দলের নির্দেশনাও অমান্য করছেন তারা। বিভিন্ন সময় পত্র আকারে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাঠানো হলেও তা যথাযথভাবে মানা হয় না। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বেশ কয়েকজন নেতাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেয়া নির্দেশনার মধ্যে জোরেশোরেই আলোচিত হয়েছে ‘শৃঙ্খলা’। বিশেষ করে পোস্টার ছাপানো নিয়ে সভা-সমাবেশে আপত্তি তোলা হলেও এতে কান দিচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। তবে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থা না নেয়ায় এমন প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে।
জানা যায়, নেতাকর্মীদের ছবি দিয়ে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার তৈরি না করার জন্য দলসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারও ছবি এসব পোস্টার-ফেস্টুনে ব্যবহার করা যাবে না বলেও জানিয়েছিল দলটি। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনার চিঠি জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ পূর্বদেশকে বলেন, দলীয় ব্যনার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ড যেন কম ব্যবহার হয়, সেজন্য আওয়ামী লীগের নির্দেশনা আছে। একই নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধু ও দলীয় সভানেত্রীর ছবি ছাড়া কারো ছবি দেয়া যাবে না বলে তৃণমূলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা দেয়ার কারণ হচ্ছে, কেউ নিজেদের ছবি যখন ব্যবহার করতে পারবেন না, তখনই নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ড বানাতে নিরুৎসাহিত হবেন।
নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, অনেকেই এলাকায় নিজের অবস্থানের জানান দিতে পোস্টার করেন। আবার এমন কেউ আছেন যারা প্রশাসনে ধান্ধাবাজি করতে পোস্টার ছাপান। এসব নেতাদের সাথে দলের সম্পৃক্ততা খুব কম থাকে। এলাকাবাসীর নামে কিংবা সর্বস্তরের জনসাধারণ পরিচয়ে এসব পোস্টার যারা ছাপান তাদের বেশিরভাগেরই দলীয় পরিচয় নেই।
নগর, জেলা ও উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দিবসের পাশাপাশি গত দুই ঈদে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও বিলবোর্ড বানানোর প্রবণতা দেখা গেছে। সড়কের বিভিন্ন মোড় ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে আশপাশের এলাকাগুলোতেই নেতাদের ছবি সম্বলিত এসব পোস্টার-ব্যানার দেখা গেছে বেশি। এসব পোস্টারে ঈদের শুভেচ্ছার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেউ কেউ। পোস্টার ও ব্যানার লাগানোর কারণে রাস্তার পাশের পরিবেশ সৌন্দর্য্যহীন হলেও সেদিকে কারো ভ্রæক্ষেপ নেই। প্রত্যেক ব্যানার-পোস্টারেই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার চেয়ে নেতার ছবিই বড় করে ছাপানো হয়েছে। এতে দলীয় চেন অব কমান্ড ভাঙার প্রবণতা পোস্টারেই প্রমাণ পাচ্ছে।
অনেকেই দলীয় পদে না থাকায় নামসর্বস্ব ভূঁইফোড় সংগঠনের নেতা পরিচয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন নগরজুড়ে। দৃষ্টিকটু এসব পোস্টার দেখে অনেকেই হাসাহাসি করলেও কেউ কেউ দলের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচন সামনে আসায় প্রত্যেক ওয়ার্ডেই পোস্টার সাঁটানোর প্রবণতা বেড়েছে। নেতাদের মধ্যে পোস্টার সাঁটানোর এক ধরনের অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আদালত পাড়া ও জেলা প্রশাসনের আশপাশের দেয়ালগুলোতে পোস্টারের দাপট বেশি।
এছাড়া নগরীর তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু এলাকা, মইজ্যার টেক, কালুরঘাট সেতু, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, একে খান গেট, বহদ্দারহাট, ইপিজেড এলাকায় নেতাকর্মীদের এমন পোস্টার চোখে পড়ে বেশি।