পেকুয়ায় ৪৫ গ্রামের মানুষ ঘরবন্দী

2

এম. দিদারুল করিম, পেকুয়া

টানা বর্ষণে পেকুয়ায় ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে ৪৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। সাগর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি আর পাহাড় থেকে প্রবাহিত বৃষ্টির পানির কারণে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন, জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এভাবে টানা বর্ষণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছে পুরো উপজেলার নিম্ন আয়ের লোকজন। করোনার লকডাউনে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় অনেকেই আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহার-অনাহারে দিনাতিপাত করছে।
চলতি বর্ষা মৌসুমের গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় তারা এই দুর্ভোগের পড়েছে। এরমধ্যে লকডাউনে কর্মহীন মানুষজন চরম বেকায়দায় পড়েছে।
গত ২৭ জুলাই থেকে মৌসুমী লঘু চাপের কারণে টানা বর্ষণ শুরু হয়। সেদিন থেকে ভারী বৃষ্টিপাত আর পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। উপজেলার উজানটিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে সাগরের পানি ঢুকে স্্েরাতের টানে তলিয়ে গেছে ছোটবড় অসংখ্য চিংড়ি ঘের, চাষীদের মওজুদ করা লবণ। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মৎস্য ও লবণ চাষীরা। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়াম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ ও ভাঙ্গনকৃত বাঁধ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে।
এদিকে পেকুয়া সদর, শিলখালী, বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়ন পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে দুই তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা। মগনামা ও রাজাখালীতেও কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে নিম্ন এলাকা। সাগর, নদ-নদীর পানি স্বভাবিকের চাইতে বৃদ্ধি ও টানা বর্ষণে উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওইসব এলাকার মানুষ এক প্রকার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠি।
পেকুয়া-চকরিয়ার সীমান্ত ব্রিজ পহরচাদা মাদ্রাসা থেকে পেকুয়া সালাউদ্দিন ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় পৌণে ৪কি মি. সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে চকরিয়া পেকুয়া-বরইতলী-মগনামা সড়কে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বানের পানি বৃদ্ধির ফলে তাদের পানের বরজ, শাকসবজি ও আগাম তৈরি ধানের বীজতলা পানির নীচে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের কোন খবরাখবর নেয়নি বলে জানা গেছে।
উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম প্রকাশ বজল মেম্বার জানান, মুনাফালোভী মৎস্যঘেরের মালিকরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা ভাবে ¯øুইসগেট বন্ধ করে পানি চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করে রাখায় ওই ইউনিয়নের প্রায় সব পাড়া-মহল্লায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে তার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। যারা দায়ি এদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ করছি।
উপজেলার সমুদ্র তীরবর্তী মগনামা ইউনিয়নে অতিবৃষ্টি, সাগর ও নদ-নদীর পানি অবাধে প্রবেশের কারণে ইউনিয়নটির অধিকাংশ পাড়া ও রাস্তাঘাট পানিতে কয়েকদিন ধরে নিমজ্জিত। ব্যাপক জলাবদ্ধতা ও পানি চলাচলের কারণে সেখানকার মানুষও গৃহবন্দী হয়ে আছে গত কয়েকদিন যাবত।
গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোতাছেম বিল্লাহ ও ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম পানিতে নিমজ্জিত বিস্তীর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরে পানিবন্দী ১৩০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এদিকে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা এলাকার বেশ কয়েকটি অংশ দিয়ে মাতামুহুরী ও তার সাথে সংযুক্ত খালের পানি পাউবোর বিভিন্ন বেড়িবাঁধ উপচে জনবসতিতে ঢুকে যাওয়ায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। আর মানুষজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি ঢুকে সেখানে দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পেকুয়া সদরের পুর্বমেহেরনামা, মুরারপাড়া, বলিরপাড়া, নন্দিরপাড়া, হরিণাফাঁড়ি, সাবেকগুলদী, সরকারিঘোনা, বিলহাচুরা, ছিরাদিয়া, বাংলা পাড়া ও টেকপাড়াসহ পেকুয়া উপজেলায় অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে গবাদিপশু ও মাটির ঘর। এছাড়া উপজেলার তিন পাহাড়ি জনপদে পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এলাকাবাসী কর্মহীন হয়ে অভাব-অনটনে দিন পার করছে।
এদিকে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা পয়েন্ট দিয়ে বেড়িবাঁধের একটি অংশ ভেঙ্গে মাতামুহুরী খাল উপচে ঢলের পানি প্রবেশ করছে পেকুয়ার লোকালয়ে। এতে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। খবর পেয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোতাছেম বিল্লাহ ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান এম. বাহাদুর শাহ বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভেঙ্গে যাওয়া অংশে বালির বস্তা ও মাটি দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হলেও স্রোতের কারণে সম্ভব হয়নি।