পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে টিসিবি

37

মনিরুল ইসলাম মুন্না

দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হওয়াতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পেঁয়াজ কিনছে না কেউ। স্বল্প আয়ের মানুষের সুবিধার্থে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করেছিল। আর এসব পেঁয়াজ নিয়ে পড়েছে বিপাকে। বর্তমানে বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। টিসিবি’র পেঁয়াজ আকারে বড় হওয়ায় ক্রেতারা এখন আর কিনতে চাইছেন না। ফলে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি পেঁয়াজ থেকে যাচ্ছে।
ডিলারদের অভিযোগ, টিসিবির পক্ষ হতে আমাদের পেঁয়াজের পরিমাণ বেশি দেয়া হলেও গ্রাহকরা কিনতে চান না। অনেক সময় জোর করে পেঁয়াজ দিলে তারা আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হন। কারণ বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম কমে এসেছে। টিসিবি যে পেঁয়াজ দিচ্ছে তাও ক্রেতাদের অপছন্দ। সকলে ভারতের পেঁয়াজের প্রতি আকৃষ্ট।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর কয়েকটি ট্রাক সেল কার্যক্রম ঘুরে ডিলারদের কাছে পেঁয়াজ থেকে যাওয়ার বিষয়টি জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য পণ্যগুলো এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ সাধারণ ক্রেতারা বিশেষ করে তেল, চিনি ও ডালের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পেঁয়াজের প্রতি আগ্রহ তেমন দেখা যায়নি।
ক্রেতা ছফুরা খাতুন বলেন, তেল ও চিনির দাম বেশি বেড়ে যাওয়ায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এখানে তেল-চিনি দিচ্ছে কম, পেঁয়াজ দিচ্ছে বেশি। এত পেঁয়াজ আমি কি করব? সর্বোচ্চ দুই কেজিতে আমার একমাস চলে যাবে। পাঁচ কেজি কিনবো কেন? শুধু শুধু টাকা অপচয় করা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করি।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, সরকার টিসিবির মাধ্যমে সহনীয় দামে ভোক্তাদের হাতে পেঁয়াজ পৌঁছাতে পারে। এখনকার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই সরকার তা করতে পারত। টিসিবির খোলাবাজারে বিক্রি কার্যক্রম যথেষ্ট নয়, এই কার্যক্রম আরও বাড়ানোর প্রয়োজন। এরই প্রেক্ষিতে টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়।
টিসিবি’র দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতি ট্রাকে এখন দুই হাজার ৫০০ কেজি করে পণ্য দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাড়ানো হয়েছে ট্রাকের সংখ্যাও। টিসিবি’র পণ্যগুলো সরকার ভর্তুকিমূল্যে বিক্রি করছে। এসব পণ্যের মধ্যে ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ, ১০০ টাকা লিটারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ও ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেলের দাম বেশ চড়া। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজি। টিসিবি’র ট্রাক থেকে কিনলে সাশ্রয় হচ্ছে ৫-১০ টাকা। চিনি এখন কেজিপ্রতি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির ট্রাক থেকে কিনলে সাশ্রয় হচ্ছে কেজিতে ২০ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডাল কিনলে সাশ্রয় কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে এ ডাল কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, টিসিবি বিক্রি করছে ৫৫ টাকা দরে। এক লিটার সয়াবিন তেলেও ৬০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। টিসিবির বোতলজাত তেলের লিটার ১০০ টাকা, আর বাজারে ১৬০ টাকা। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন চলছে এই কার্যক্রম।
টিসিবি’র চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ দৈনিক পূর্বদেশকে বলেন, মহানগরে ১৩টি এবং জেলাতে ১০টি পয়েন্টে বিক্রি করা হচ্ছে। একইসাথে বাড়ানো হয়েছে পণ্যের পরিমাণও। আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত আমাদের পণ্য বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে পণ্য কিনতে মানুষ যাতে সমাগম না করে সে জন্য তিন ফুট দুরত্বে বৃত্ত করে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতি ট্রাকে দুই হাজার ৫০০ কেজি পণ্য সরবরাহ করছি। যাতে রয়েছে- এক হাজার ৫০০ কেজি পেঁয়াজ, ৪০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৩০০ কেজি চিনি এবং ৩০০ কেজি ডাল।
ডিলারদের অতিরিক্ত পেঁয়াজ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে সরকার দাম সহনশীল রাখতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি করে টিসিবি। যা এখনও আমাদের কাছে রয়ে গেছে। তাই আমরা ডিলারদেরকে পেঁয়াজগুলো দিয়ে দিচ্ছি। শেষ হয়ে গেলে আমরা আর দিব না।
বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জামালখান প্রেস ক্লাবের সামনের দুইটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট ছাড়াও আন্দরকিল্লা, ২ নম্বর গেট, স্টিলমিল বাজার, চান্দগাঁও, কাটগড়, ইপিজেড থানার সামনে, বন্দর থানার সামনে, আগ্রবাদের হোটেল সাংরিলা’র সামনে, আলকরণ, নিউমার্কেট মোড়, বিবিরহাট, মুরাদপুর, উত্তর কাট্টলি, হালিশহরে পর্যায়ক্রমে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।