পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ কাম্য

22

৩০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় পেঁয়াজের আকষ্মিক দাম বৃদ্ধিতে নগরীর খাতুনগঞ্জ আড়তে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয় বিগত ২১ মে। অভিযানের সাফল্য সম্পর্কে বিজ্ঞমহলে নানা প্রশ্নের উদ্বেগ করেছে। পেঁয়াজের দামে আসন্ন কোরবানের ঈদের পূর্ব থেকে অস্থিরতা সৃষ্টি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের নৈমিত্তিক চরিত্র হলো সময়ে আসময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যমূলের দাম বাড়ানো। চিনি, সয়াবিন তৈল, চাল, ডালসহ সকল খাদ্য দ্রব্যের বাজার কয়েকদিন পর পর অস্থির হয়ে যায়। কারণে অকারণে অস্থির হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, বিএসটিআইসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ অভিযান চালায়। অভিযানে সাধারণ ক্রেতারা লাভবান হতে দেখা যায় না। কালেভদ্রে, খাদ্যদ্রব্যের বাজারসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অভিযান হলেও পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্রমাগত বাজার ব্যবস্থাকে অস্থির থেকে অস্থিরতর করে যাচ্ছে। তাদের অসাধু গুদামজাতকাÐ এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির ধারাবাহিক কার্যক্রম থামছেই না। কোন না কোন সূত্রে খবর পেলে খুচরা ব্যবসায়ীরা পূর্বের কেনা মালামাল বাজার দরে বিক্র করা বন্ধ করে দেয়।
স্টকে পূর্বে সস্তায় কেনা মালামাল গোপনে সরিয়ে রেখে বলতে থাকে সরবরাহ নেই, স্টকেও নেই, কিন্তু অধিক দামে ক্রেতাদের ঠিকই মালামাল বিক্রি করে। পবিত্র ইসলাম ধর্মে ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করা হলেও যে সকল ব্যবসায়ী অসাধু উপায়ে ক্রেতা সাধারণের উপর জুলুম করে অধিক অর্থ উপার্জন করছে তা হালাল হয় কি করে তা আমাদের বুঝে আসে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের মজুদ মুসলিম ব্যবসায়ীদের জন্য হারাম। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে অধিকাংশ ব্যবসায়ীও মুসলিম। কথায় বলে ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’। ধর্মীয় মূল্যবোধ, মানবতা, মানব কল্যাণ ইত্যাদি দেশের ব্যবসায়ীরা চিন্তাই করেনা। খাদ্যে ভেজাল, গুদামজাত করে দ্রব্যেরমূল্য বৃদ্ধি করা, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি, দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণে অস্বাভাবিক বাড়তি মূল্য আদায়ের অসাধুপনা ইত্যাদির কারণে দেশের বাজারে অস্থিরতা বন্ধ হচ্ছে না।
দেশের গুটি কয়েক ব্যবসায়ী দেশের বাহির হতে খাদ্য দ্রব্য আমদানি করে থাকে। এক একটা দ্রব্যের এলসি জন পাঁচেক ব্যক্তির মালিকানায় চলে। যার কারণে আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান ও ডিও ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি তেমন করে দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে রেখেছে। সরকার ও প্রশাসন এসকল খবরা খবর না জানার কথা নয়। সমগ্র দেশ মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে খুচরা ব্যবসায়ীরাও মালামাল বিক্রিতে কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করছে না। পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় বাণিজ্যমন্ত্রী একই সাথে দু’ধরনের কথা বলছেন, একবার বলছেন আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। পেঁয়াজ মজুদ রেখে সংকট তৈরী করছে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তিনি মজুদদারদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এ বিষয়ে কোন কথা বলেন নি।
প্রসঙ্গক্রমে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলছেন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়ে চিঠি দিচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। দেশে যদি পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন ও মজুদ থাকে তা হলে বিদেশ হতে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে কেন তা আমাদের বুঝে আসে না। মন্ত্রণালয় হতে খুচরা বাজার পর্যন্ত সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যার কারণে দেশের বাজার ব্যবস্থায় কোন নিয়ম সৃষ্টি হচ্ছে না। খুবই অস্থিরতার মধ্যে দেশের বাজার ব্যবস্থা চলছে। যার শতভাগ কুফল ও দুর্ভোগের শিকার খেটে খাওয়া স্বল্পআয়ের সাধারণ মানুষ। এদেশের অধিকাংশ মানুষ শ্রমজীবী ও স্বল্প আয় নিয়ে জীবনযাত্রা করে থাকে। বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানোর জন্য সরকার বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক এমন আশা দেশের সর্বসাধারণের।