পেঁয়াজের দাম আবারও বেপরোয়া বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে

43

কয়দিন থেকে আবারও পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। অজুহাত ছিল দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা এবং একই কারণে ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়া। এ নিয়ে নানা জল্পনার মধ্যেই ভারত থেকে ঘোষণা আসল ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। মাথায় আসমান ভেঙে পড়ার মত এ খবরে পেঁয়াজখেকো ভোক্তাদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হলেও বিক্রেতাদের পোয়াবারো অবস্থা। তারা সুযোগের সদ্ব্যবহারে মোটেই কার্পণ্য করেননি। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট তাৎক্ষণিক সক্রিয় হয়ে ঝাঁজটাকে ঊর্ধ্বমুখি করে দিলেন। খবরে প্রকাশ চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা। স্মরণযোগ্য যে, ঠিক একবছর আগে এ সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছিল ভারত। সেসময় দেশের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আর দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ২৪০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নতুন করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায়, যা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বলে প্রতীয়মান হয়। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের নাভিশ্বাস চরমে উঠবে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই নজর দেয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী দেশে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার টন। যা ২০১৯ সালে ছিল ৬ লাখ ৭৪ হাজার টন এবং ২০১৮ সালে ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। অর্থাৎ ২০১৯ ও ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৮ শতাংশ পেঁয়াজ কম আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশে পেঁয়াজের মৌসুম আসতে এখনো ৬ মাস বাকি। এই সময়ে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১১ লাখ টন। যা আমদানি করেই মেটাতে হবে। অর্থাৎ মার্চের আগ পর্যন্ত আরো প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির দরকার পড়বে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে ভারতের বিকল্প হিসেবে ৮ দেশের বাজারের সন্ধান করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দেশে পেঁয়াজের হঠাৎ করে মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে আমদানির চেয়ে বিক্রিতে পেঁয়াজের মূল্য বেশি রাখায় গত রবিবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কয়েকটি পেঁয়াজ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ কারণে পরদিন সোমবার খাতুনগঞ্জের সব পেঁয়াজের আড়ত বন্ধ করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে অন্য কারো কারসাজি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান সারা বছর অব্যাহত রাখা দরকার। পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হন। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে হতদরিদ্র মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। কাজেই নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতি ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেটের আস্ফালন লক্ষণীয়। তবে এটা নতুন কিছু নয়, সাংবার্ষিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্য তো বটেই, সেবা খাতেও সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপ প্রকট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ চক্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে অন্যায্যভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। আমরা মনে করি, বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন। এই পরিবর্তন কবে ঘটবে তার জন্য অপেক্ষা করে নিষ্ক্রিয় বসে থাকলে চলবে না। এর জন্য সরকার ও সমাজের সচেতন দায়িত্বশীল মহলকে ভ‚মিকা রাখতে হবে। প্রশাসনের তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে, পাশাপাশি শুধু ভারত নির্ভরতা কাটিয়ে বিকল্প দেশ পেঁয়াজ আমদানির জন্য খুঁজতে হবে।