পূর্ণমাত্রায় সরবরাহ করতে পারছে না আরপিজিসিএল!

75

মহেশখালীতে নির্মিত ভাসমান টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের কথা আরপিজিসিএল (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লি.) এর। কিন্তু বাস্তবে সরবরাহ মিলছে ৩শ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার দুটি পাইপলাইন প্রকল্প সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হওয়ার পরও এলএনজি সরবরাহে ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
জানা যায়, দেশে গ্যাসের সংকট মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেডের সাথে এলএনজি সরবরাহের চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। এরপর দৈনিক ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন এফএসআরইউ (এলএনজি মজুত ও পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করার ভাসমান টার্মিনাল অর্থাৎ ফ্লোটিং স্টোরেজ এন্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) সংযোজন করা হয় মহেশখালীতে। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল এফএসআরইউ ‘এমটি এক্সিলেন্স’ মহেশখালীতে আসে। এক হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এফএসআরইউসহ মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করে জিটিসিএল (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি.)। আনোয়ারায় সিজিএস (সেন্ট্রাল জেনারেটিং স্টেশন) হয়ে সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লি.) এর লাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে গ্যাস সংযোগ দেয় জিটিসিএল।
পরবর্তীতে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে চলতি বছরের ১৯ আগস্ট এলএনজিতে আসা গ্যাস টান্সমিশন লাইনে সরবরাহ করে আরপিজিসিএল। ধাপে ধাপে নিয়মিত ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কেজিডিসিএলকে (কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি.) সরবরাহ করে জিটিসিএল। মহেশখালীতে স্থাপিত এলএনজি প্রকল্পটি ৫ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার হলেও আনোয়ারা সিজিএস’র মাধ্যমে কর্ণফুলী গ্যাস সর্বোচ্চ ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম জিটিসিএল। অবশিষ্ট ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য ৭৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করে জিটিসিএল। ইতোমধ্যে ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সঞ্চালনকারী প্রতিষ্ঠানটি। তবে আরপিজিসিএল থেকে পুরোদমে প্রাপ্য গ্যাস মিলছে না বলে জানিয়েছেন জিটিসিএল এর কর্মকর্তারা।
জিটিসিএল’র আনোয়ারা-ফৌজদারহাট পাইপলাইন নির্মাণ প্রজেক্টের পরিচালক প্রকৌশলী সুশীল কুমার সরকার পূর্বদেশকে বলেন, ‘ডিসেম্বর শুরুর আগেই জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের জন্য আমাদের পাইপলাইনের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ইতোমধ্যে আনোয়ারা-ফৌজদারহাট পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সঞ্চালন শুরু হয়েছে।’
জানতে চাইলে জিটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোহাম্মদ আল মামুন বুধবার বিকেলে পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা দৈনিক ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আরপিজিসিএল আমাদের চাহিদা মাফিক গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। কবে নাগাদ পূর্ণমাত্রায় গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাবে সেটাও জানা যাচ্ছে না।’
পেট্রোবাংলা সুত্রে জানা গেছে, মহেশখালীস্থ এফএসআরইউ থেকে দৈনিক ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের কথা থাকলেও বর্তমানে ৩শ মিলিয়ন এর কমবেশি গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। তথ্য মতে, ২৪ ডিসেম্বর ৩৩০ দশমিক ৫, ২৩ ডিসেম্বর ২৭৩ দশমিক ৭, ২২ ডিসেম্বর ২৫৯ দশমিক ৪, ২১ ডিসেম্বর ২৭৫ দশমিক ৩, ১৯ ডিসেম্বর ২৬৪ দশমিক ৯, ১৮ ডিসেম্বর ২৫৭ দশমিক ৬, ১৭ ডিসেম্বর ২৬৪ দশমিক ৯, ১৬ ডিসেম্বর ২৫৮ দশমিক ১, ১৫ ডিসেম্বর ২৩৫ দশমিক ১ এবং ১৪ ডিসেম্বর ২১৯ দশমিক ২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিয়েছে আরপিজিসিএল।
এ ব্যাপারে জানতে আরপিজিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরপিজিসিএল’র একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ক্রমান্বয়ে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াচ্ছি। ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার বলা হলেও একসাথে গ্যাসের চাপ বাড়ানো সম্ভব নয়। যে কারণে আমরা ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছি। শুরু থেকে কেজিডিসিএলকে গ্যাস দেওয়া হলেও ডিসেম্বরের শুরু থেকে আমরা জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনের জন্য গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পুরোদমে গ্যাস সরবরাহের জন্য কার্গোসহ আরো কিছু লজিস্টিক সুবিধার প্রয়োজন হবে। আমরা এই মুহূর্তে চাইছি না, পুরোদমে সঞ্চালন করে গ্যাস সরবরাহে কোনো ব্যত্যয় ঘটুক।’