পুষ্টির দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা! মানুষ ভরসা রাখবে কোন খাদ্যে?

47

বাজারের প্যাকেটজাত দুধ নিয়ে সপ্তাহব্যাপী চলছে নানা সমালোচনা। বিশেষ করে মানুষ পুষ্টির জন্য যে দুধের উপর নির্ভর করে থাকে-তাতেই যখন পাওয়া যায়, মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসার উপস্থিতি তখন হতাশ না হয়ে পারা যায় না। ভেজালের এ যুগে দুধ, ডাব ও কলার উপরও শেষ পর্যন্ত আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। মানুষ যা খেয়ে দীর্ঘজীবী হওয়ার কথা, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এসব দুধ মানুষকে সহসাত মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে যাবে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল বিভাগের এ গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে আসে। জানা যায়, দুধের মাধ্যমে মানবশরীরে প্রবেশকারী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি ও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরির পর তা আমলে নিয়ে দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিকেল রিচার্স সেন্টার।
উল্লেখ্য, সেসময় গবেষণায় নামিদামি কয়েকটি ব্র্যান্ডের ঘি, গুঁড়ো মরিচ, হলুদ, মসলা, সয়াবিন ও সরিষার তেল, ফ্রুট ড্রিংকস ছাড়াও প্রাণ ও অপরাপর সাতটি কোম্পানির পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতিসহ ফরমালিনের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশের পর স্বাভাবিকভাবেই আমরা আশা করেছিলাম, তা দেশে দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা দূর করে পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করবে; একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোও দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং এর ফলে দেশে উৎপাদিত দুধের মানের উন্নতি ঘটবে।
কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগজনক এরকম ভয়াবহ একটি সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পরিবর্তে বিশেষ মহল এর পেছনে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, যা অনাকাক্সিক্ষত তো বটেই; একইসঙ্গে অশোভনও। এ অবস্থায় পুনরায় সম্পন্ন হওয়া পরীক্ষায় আগের সেই ৫ কোম্পানির ৭টি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা এবং একই বাজার থেকে খোলা দুধের তিনটি নমুনা সংগ্রহের পর একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষার পর সাতটি পাস্তুরিত দুধে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সবগুলোতেই অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্তের বিষয়টি হালকাভাবে নেয়া মোটেই উচিত হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, দ্বিতীয় দফায় আরও নতুন দুটি অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পাওয়া যায় নি শুধু সম্প্রতি ১১টি কোম্পানির দুধে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন গত মঙ্গলবার হাইকোর্টে উপস্থাপন করেছে খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ। এটা স্পষ্ট যে, জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণার ফলাফলকে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো যেমন- প্রাণমিল্ক, মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো ‘থোড়াই কেয়ার’ করেছে; এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোর কর্তাব্যক্তিরাও এটিকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না। বিষয়টি অনভিপ্রেত এবং একইসঙ্গে বিস্ময়করও।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এটি কেবল মুনাফার বিষয় নয়; সুস্থ-সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার মতো মৌলিক প্রশ্নও এর সঙ্গে জড়িত। দুধসহ যেকোনো খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল কিংবা ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি মেনে নেয়ার মানে হল, এ জাতির ধ্বংস ত্বরান্বিত করা। এ প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে দুধেল গাভীকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো বন্ধের পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর উচিত, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা। জনস্বার্থে ক্ষতিকর দুধসহ সব পণ্যে ভেজাল রোধসহ দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।