পুশকিন ও তুমি

88

প্রতিষ্ঠিত সীমারেখা তুমি অতিক্রম করলে
বিকাশের ধারা কেবল নান্দনিক
বিষয়, আকার কি বা উদ্দেশ্য
কিছুই বললে না।
‘পিথাগোরাস’ তোমাকে গিলে খেয়েছে
কবির প্রেম অনুষঙ্গ করলে দর্শনের বিচারে
পুশকিন হাজার বার বলেছেন-কল্পনা শিল্প নয়
কবিতা নন্দনের সাঁকো পাড় হয়ে
প্রজাপতি হওয়া প্রকৃতি, সাবলাইম অনুভ‚তি
কিংবা শৈল্পিক চিত্রকলা! শুধুই অতিকল্পনা
রাখালের গল্পের মতো অলীক- বিশ্বাস করো
এই একটি জায়গায় তোমাদের সাথে
আমার বিরোধ
তোমার সাথে আমার বিরোধ।

অষ্টপ্রহর
চৌধুরী শাহজাহান

পতেঙ্গার সী-বিচ হলো বাদল মাতাল
নতুন সড়ক বৃষ্টিতে হলো উথাল পাতাল
তোমার মনের এলোকেশী উদাস বাতাস
এসো সাগর বিহার করে মাতি উল্লাস।

বৃষ্টি পড়ে সিআরবিতে শিরিষ বনে
দ’ুজন বৃষ্টি ভিজে স্বপ্ন বুনি নির্জনে
তোমায় খুঁজে আজ তৃষিত রক্তিম অধর যুগল
এসো বর্ষায় ভেসে বেড়াই অথই জলে।

শারদ সন্ধ্যায় ভরা বৃষ্টি, তোমার কথা মনে পড়ে
প্রিয়তমা, তুমি যে নেই কাছে চলে গেছো দূরে
জানতে ইচ্ছে করে, কিভাবে কাটাও অষ্টপ্রহর
ওগো শ্রাবণ, তোমায় আমার ভীষণ মনে পড়ে।

প্রতিমামুখ
মাহমুদ নোমান

চশমাবন্দী ব্রিকসলিন রাস্তায়
দোলায়িত রিকশার হুড তোলা
সুগন্ধা শ্বাসে লিপস্টিকের ঠোঁট কাতর
প্রাচীন জ্বরে চোখের কোণায় রক্তিম রেখা
যাপিত রৌদ্রের সমূহ মানচিত্র
এঁটে দিয়ে দেয়ালে
ছবি আঁকছে বৃষ্টির দাদু
ছুঁতে গিয়ে সেও আরামে চোখ বোজে…

মাছ
জোবায়ের মিলন

নারীকে চিরদিনই আমার মনে হয়েছে মাছ।
তার সাঁতার কাটার অসাধারণ যোগ্যতা তাকে দিয়েছে
বিশেষ দ্যুতি;
দিয়েছে পুরুষ থেকে আলাদা করে চেনার
বর্ণিল বিন্যাস।
আমি নারীবাদী, যে কেউ বলতেই পারে-
ওই বিভায় লীন হওয়া এক পুরুষ কী করে
অস্বীকার করে যে সে পুরুষবাদী ?

নারীকে ঈশ্বরও তোয়াজ করেন।
ঈশ্বর কি নারীবাদী?
পুরুষবাদী?
নারীকে ভালোবাসার কথা ঈশ্বরও বলেছেন বারবার
আমি নারীর সাঁতার কাটা দেখি এক এবং অদ্বিতীয়
দৃষ্টিতে; নারী ছাড়া আমি
চিন্তাতীত এক ভগ্নাংশ।

ভালোবাসার নোঙর
বজলুর রশীদ

ভাবনার আকাশে সারা কর্মময়
ঢেকে রাখি গোপন আঁধার;
ইচ্ছে করে এড়াতে পারিনি
যদি ফিরে এসো কাশবনের বুক চিরে
বেদনা বিষাদ ধুয়ে আত্মায় জন্ম হতো
সুনিবিড় কারুকাজ আমাদের মতো
ভেঙে যেতো অহংকারী জৌলুশ।
হয়তো বা এভাবে প্রতীক্ষায় প্রতিদিন
হাসিমুখে দাঁড়াতাম জানালার পাশে
একটু প্রচ্ছন্ন আদর দিতে
প্রগাঢ় চুম্বনে তীব্র আবেগের সময়গুলো-
গোপন অভিসারে সড়িয়ে যেত
অনিচ্ছার অদৃশ্য শত বাঁধা;
অবাধ আশ্রয়ের চিবুকে
ফিরে পেতাম ঘন নিশ্বাসের গন্ধ
বুকের ভেতর গড়ে নিতাম
অন্তহীন ভালোবাসার চিরস্থায়ী নোঙর।

স্বাধীন ভূখন্ডে
হাসান নাজমুল

তেপান্তর অভিমুখী মন-
ব্যস্ত ক্ষণ ভেঙে দেয় নির্নিমেষ;
দুশ্চিন্তার উদ্দীপনা ভেঙে
আমার চোখও বসে থাকে-
সরষে খেতের আলে;
সহজ হৃদয় কঠিন সময় ছেড়ে
কান পেতে শোনে
নদীজলের বিরহ- প্রলাপ,
অর্থের অংকগুলো সমাধানহীন রেখে
আমার মস্তিষ্ক ছুটে যায় মুক্তির মিছিলে,
আমার প্রতিটি ইন্দ্রিয় স্বাধীনতা নিয়ে
হেঁটে বেড়ায় স্বাধীন ভূখন্ডে।

মাৎসন্যায়ের পশ্চাৎপট
রেজাউল করিম

গাঙ্গেয় অববাহিকায় অযুত বছর ধরে
পলিমাটি জমে যে ভূমির জন্ম,
তা গৌড়- রাঢ়-সমতট-পুন্ড্র-
বরেন্দ্রভূমি হয়ে বঙ্গতে স্বোপার্জিত।
জাতির উত্থান-বিকাশ, অনৈক্য-ঐক্যের মহামিলনে একদিন স্বমহিমায় জেগেছিলে তুমি। গৌড়াধিপতির আকস্মিক মহাপ্রয়াণ! অশনি সংকেত, উন্মত্ত বঙ্গভূমি
তিব্বতের হিমতুষারময় পর্বতে উৎসারিত কৃষ্ণমেঘ, ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষত বিক্ষত তছনছ
উদ্ভট উলঙ্গ বঙ্গীয় ইতিহাস রাজনীতি
সেই থেকে মাৎস্যন্যায়ের কবলে ত্রাহি ত্রাহি বঙ্গভূমি।

নাড়ির টান
সুজন কুমার বিশ্বাস

সবুজ ক্ষেত দোলছে বাতাসে
কাশবন উড়াচ্ছে সাদা আঁচল
গাছে গাছে পত্র-পল্লবে ভরপুর
আহা! দারুণ এক দুপুর।

পাখিদের কলতান
আনন্দে হারা মন।
মৃদুমন্দ বাতাসে
প্রেমের পরশ লাগে বুকে।

থাকি যত শহর-বন্দরে
মন চায় যেতে গ্রামে।
হাজারো আনন্দ পাই খুঁজে
প্রকৃতির লীলাফ্রেমে।

মনে পড়ে
স্বাতী ব্যানার্জী

সবুজ শ্যামলিমায় ছুঁয়ে গেল মনপ্রাণ
সিক্ত হলাম নতুন জলে
শান্তির বাণী পরশে পরশে
আগমনী সুরে সুন্দরের ছোঁয়ায়
প্রকৃতিও সেজেছে নতুন সাজে
দেবালয়ে বাজছে জয়ধ্বনি
মন তবু ব্যাকুল পাখি
রয় না ঘরেতে।
আনচান প্রাণ উচাটন মন
কাশের বনের মাতাল বাতাসে
মন উড়ছে কেবল উড়ছে
জ্যোস্নাসিক্ত পূর্ণতিথিতে
পাবো কি তার দেখা?
ঝরা বকুলের ভালোবাসায় ভরা
ছল ছল আঁখি সদা চোখে ভাসে
সরাতে চাই একাগ্র মনে
নয়ন জলে বার বার পাই
হার মানা হার
বার বার দেই গলে
মনে পড়ে শুধু মনে পড়ে।

প্যালেস্টাইন
আরিফুল ইসলাম সাহাজি

প্যালেস্টাইন সিরিয়া
বহুদূর তবুও
রক্তমাখা শিশুর দল
ঘিরে ধরে
রোহিঙ্গা মেয়ে
ধর্ষকের ঔরসে জন্ম নেওয়া
শিশুর নামকরণ করতে বলে

যাবো যাবো করেও
যাওয়া হয়ে ওঠে না
তোমার কাপড় সরানো
উন্মুক্ত বুক আমাকে উত্তেজিত
করতে পারে না

তোমার জন্য
কেনা কিশোরী সন্ধ্যায়
পুরুষ সূর্য্যরে ঔরসজাত
টেবিল ল্যাম্পের আলোয়
সিরিয়া প্যালেস্টাইন
বার্মা সব এক হয়ে যায় ……