পুলিশ-নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

25

কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেওয়া এক রোহিঙ্গা পরিবারের ১৩ সদস্যকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার তথ্যপ্রমাণ পেয়ে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবার তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। ১৩ রোহিঙ্গাসহ মামলায় আসামি হয়েছে মোট ১৭ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার সাবেক পরিদর্শক এস এম মিজানুর রহমান, মো. রুহুল আমিন ও প্রভাষ চন্দ্র ধর এবং কক্সবাজারের সাবেক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমানে কুমিল্লার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন। মামলায় অভিযুক্ত ১৩ রোহিঙ্গা হলেন- মো. তৈয়ব, মোহাম্মদ ওয়ারেস, মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, মোহাম্মদ রহিম, আব্দুর রহমান আমাতুর রহিম, আসমাউল হুসনা, আমাতুর রহমান, নুর হামিদা, মোহাম্মদ আহমদ এবং হাফেজ নুরুল আলম। এরা কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের মৃত জালাল আহমেদের পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয়পত্র নিয়েছিলেন। অভিযুক্তদের মধ্যে তৈয়বসহ ৯ ভাই, ২ বোন ও তৈয়বের স্ত্রী আছেন। এরা মিয়ানমার থেকে এসে সরকারি খাস জমি দখল করে, সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে কক্সবাজার সদরে অবস্থান নেয়। পরে পাঁচজন বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে উমরাহ ভিসার মাধ্যমে সৌদিআরবে চলে যান। তৈয়বের এক ভাই মোহাম্মদ ওয়ারেস ‘আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিরত আছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবৈধভাবে বসবারতদের মধ্যে দু’শ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারের নাগরিক হয়েও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি বিভিন্ন দফতরের সহযোগিতায় জাতীয়তা সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), স্মার্টকার্ড, ভূমিহীন প্রত্যয়নপত্র, স্কুলের প্রত্যয়নপত্র পেয়েছেন এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মামলার আসামি হিসেবে থাকা ১৩ জন ২০১৮-২০১৯ সালের মধ্যে এনআইডি ও স্মার্টকার্ড পান এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষরে জমা দেওয়া জাতীয়তা সনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদ সঠিক কি না সেটা যাচাই না করেই তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বাসিন্দারা তাদের নিজেদের আত্মীয়স্বজন হিসেবে উল্লেখ করেন, কিন্তু সেটাও যাচাই করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনবিহীন একটি ল্যাপটপ থেকে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এরপর পাসপোর্টের আবেদন করা হলেও সেটা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে যথেষ্ট যাচাইবাছাই ছাড়াই প্রত্যয়ন করা হয় বলে এজাহারে উল্লেখ আছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দÐবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৬, ৪৭১, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও মামলার বাদী শরীফ উদ্দিন জানান, ‘জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয়তা সনদ, জন্মনিবন্ধন নিয়ে পরস্পরের যোগসাজশে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনবিহীন ল্যাপটপ ব্যবহার করে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। আবার পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের পাসপোর্ট দেওয়ার জন্যও সুপারিশ করেন। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে।’
এ নিয়ে গত চারদিনে রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং পাসপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে মোট ৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, নির্বাচন কমিশনের খোয়া যাওয়া একটিসহ কয়েকটি ল্যাপটপ ব্যবহার করে ৫৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।