পুলিশের হেফাজত থেকে জঙ্গি ছিনতাই! দায়িত্বহীনতার এক নিকৃষ্ট নজির

4

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আদালত অঙ্গন কতটুকু নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে তার উৎকৃষ্ট নজির পুলিশের হেফাজত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা। এ ঘটনা দেশের সচেতন মহলে নতুন করে দুঃচিন্তার জন্ম দিয়েছে। উৎকণ্ঠায় ফেলেছে আইন-আদালতের সাথে সংশ্লিষ্টমহলকে। সূত্র জানায় গত রবিবার পুরনো ঢাকায় অবস্থিত আদালতে হাজিরা শেষে পুলিশ চার জঙ্গি আসামিকে নিয়ে রওয়ানা হন হাজতখানার দিকে। এসময় আদালতের সামনে অপেক্ষা করছিল মোটরসাইকেল নিয়ে চার জঙ্গি। আসামি নিয়ে মোটর সাইকেলের সামনে আসতেই জঙ্গিরা পুলিশ সদস্যের চোখে পিপার স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি হলো বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও বøগার অভিজিৎ রায় এবং জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আসামি। উল্লেখ্য, এ দুটি হত্যাকাÐ দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন গৃষ্টি করেছিল। দেশবাসী এ হত্যাকাÐের বিচারের অপেক্ষায় দিনগুনছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু জঙ্গিদের স্পর্ধা দেখে হতাশ হতে হয়। দেশের মানুষ ২০১৪ সালে এধরণের একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিল। তখন ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে জেএমবির তিন দÐপ্রাপ্ত আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছিল তাদেও সতির্থ জঙ্গিরা। রবিবারে এ ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে। আদালতের সামনে থেকে পুলিশের চোখে পিপার স্প্রে করে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে যেভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, এ ঘটনায় প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলো পুলিশের নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতা। দুধর্ষ আসামিদের ক্ষেত্রে পুলিশের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। সবচেয়ে বড় কথা এ দুই আসামি দেশের দুই আলোচিত হত্যাকাÐের মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত, তদুপরি তারা দুধর্ষ একটি জঙ্গি সংগঠনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। কিন্তু মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত জঙ্গিদের রবিবার যেভাবে আদালতে নেওয়া হয়, তাতে সেখানে যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না, এটা স্পষ্ট। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সাধারণ আসামিদের বিষয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আদালতে মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে আসামিরা প্রায় নির্বিঘেœই ঘোরাফেরা করে। অনেক সময় এর সুযোগও নেয় তারা। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের অসতর্কতার কারণে আগেও আদালত থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আসামির ব্যাপারে, তা সে যে অপরাধের মামলারই হোক না কেন, এ অসতর্কতা কোনোমতেই কাম্য নয়। দ্বিতীয়ত, এ ঘটনায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক-আসামিদের নিয়ে যাওয়ার তথ্য জঙ্গিদের কাছে পৌঁছাল কীভাবে? এ কাজটি তো অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে হওয়ার কথা! বিষয়টি ইতোমধ্যে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের একাদিক টিম এ নিয়ে কাজ করছে। পলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ধারণা করছে, জঙ্গিগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা এবং রেকি করেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে আদালত ও ফ্রিজনভ্যানের সংশ্লিষ্ট পুলিশের অবহেলা জঙ্গিরা সুযোগ নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এর সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন পুলিশকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা যায়। সূত্র জানায়, ছিনিয়ে নেওয়া আসামিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। দেশে জঙ্গি তৎপরতা যে বন্ধ হয়নি, ঢাকার আদালতের সামনে থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাটি এর বড় প্রমাণ। অথচ দেশে জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে বলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইদানীং এক ধরনের আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলা হয়। তারা এ নিয়ে কৃতিত্বও জাহির করতে পিছপা হন না। কিন্তু যেভাবে খোদ রাজধানীতে দÐপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনতাই করে জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে পুরো ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা এজাতীয় অপরাধে প্রশিক্ষিত তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। এঘটনা আমাদের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, জঙ্গিদের অস্তিত্ব এখনও বিরাজমান। তারা বেশ ভালোভাবেই তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে আরও সতর্কব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। কিছুদিন আগে বান্দরবানের দূর্গম এলাকায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর পুলিশের জঙ্গিবহনে অধিক সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তারা কোনরকম সতর্কতা অবলম্বন করেনি। কেন করেনি তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করি। কয়েকদিনের সংবাদপত্রে করাগার থেকে আদালত পর্যন্ত আসামিদের কাছ থেকে পুলিশের নানা সুযোগ সুবিধা গ্রহণ, অ্যান্ড্রয়েট মোবাইল ব্যবহারের সুযোগসহ নানা উপাখ্যান লেখা হচ্ছে। তা যদি সত্য হয়, তাহলে বুঝতে হবে, আমাদের কারাগার ও আদালতের নিরাপত্তা একেবারে তলানিতে। আমাদের পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বহীনতার পর্যায় কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, এ ঘটনা তার নিকৃষ্টতম নজির বললে বেশি বলা হবে না বলে আমরা মনে করি। ইতোমধ্যে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন পুলিশ এমনটি প্রত্যাশা আমাদের। একইসাথে ভবিষ্যতে দুর্ধর্ষ আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও কঠোর এবং সাদারণের প্রবেশাধিকার সীমিতকরণের বিষয়েও বিবেচনায় আনতে হবে।