পুরোনো ১১ প্রার্থী চ্যালেঞ্জের মুখে

44

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে গতবার বিজয়ী ১১ সদস্য প্রার্থী এবারও নির্বাচন করছেন। দ্বিতীয়বার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটযুদ্ধে নামা এসব প্রার্থী এবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তাঁদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বেশ ক’জন শক্তিশালী প্রার্থী। রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণেও এসব প্রার্থীর অনেকেই বেকায়দায়। তবে গতবার নির্বাচিত দুই প্রার্থী এবার বিনাভোটে জয়ী হচ্ছেন। এছাড়াও গত নির্বাচনে জয়ী হলেও এবারের নির্বাচনে অংশ নেননি ছয় প্রার্থী।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে অনেকের জন্য এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচন চ্যালেঞ্জ। কারণ অনেকেই প্রেস্টিজ ইস্যুর কারণে নির্বাচনে অংশ নিলেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে পিছিয়ে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও তাদের পক্ষে নেই। আবার এমন কয়েকজন প্রার্থী আছেন জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে থাকায় দ্বিতীয়বার প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনেও তাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে।
জানা যায়, গত নির্বাচনে দুই ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন এড. উম্মে হাবিবা ও দিলুয়ারা ইউসুফ। এবার সীমানা জটিলতার কারণে দুই প্রার্থীকে একই ওয়ার্ড (সংরক্ষিত ওয়ার্ড-২) থেকে নির্বাচন করতে হচ্ছে। অন্যান্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মধ্যে রেহেনা বেগম ফেরদৌস চৌধুরী, শাহিদা আকতার জাহান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আনোয়ারার রেহেনা বেগম ফেরদৌস চৌধুরী গেলবার জয়ী হলেও এবার সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অন্য একজন প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। যে কারণে তাকে জয় পেতে এবার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। শাহিদা আকতার জাহান গত নির্বাচনে ভালোভাবে জয়ী হলেও এবার তার জয় পাওয়া কঠিন হবে। কারণ নিজ এলাকাতেই একাধিক প্রার্থী তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটি পক্ষও শাহিদার বিরোধিতা করছে। সংরক্ষিত-১ থেকে গতবার জয়ী হলেও এবার নির্বাচন করছেন না রেহেনা বেগম।
সাধারণ সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে গতবার জয়ী সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। এরা হলেন- সীতাকুন্ডের আ.ম.ম দিলসাদ, ফটিকছড়ির আখতার উদ্দীন মাহমুদ, হাটহাজারীর জাফর আহমেদ, বোয়ালখালীর মোহাম্মদ ইউনুছ, পটিয়ার দেবব্রত দাশ, চন্দনাইশের আবু আহমেদ চৌধুরী ও লোহাগাড়ার আনোয়ার কামাল।
সীতাকুন্ডে এবার দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটযুদ্ধ হবে। সেখানে দুই প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ অবস্থান নিয়েছে। গতবার বিজয়ী আ.ম.ম দিলসাদের বিরুদ্ধে মাঠে তৎপর রয়েছেন মো. শওকতুল আলম। ফটিকছড়িতেও গতবার বিজয়ী আখতার উদ্দীন মাহমুদের বিরুদ্ধে আমান উল্লাহ খান নামে এক প্রার্থী মাঠে আছেন। সেখানেও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে থাকা বিরোধে দুই প্রার্থীর সমর্থকরা দ্বিধাবিভক্ত। হাটহাজারী থেকে গতবার বিজয়ী প্রার্থী জাফর আহমদ এবার কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। জাফরকে ঠেকাতে এবার আটজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। যার মধ্যে কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থানে আছেন। বোয়ালখালীতে মোহাম্মদ ইউনুছ গতবার নির্বাচিত হলেও এবার বেকায়দায় আছেন। সম্প্রতি একটি মামলায় কারাবরণ করে তিনি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। বোয়ালখালীতে এবার বোরহান উদ্দিন এমরান শক্তিশালী প্রার্থী। যদিও গতবার এই এমরানকেই পরাজিত করেছিলেন ইউনুছ। পটিয়ায় দেবব্রত দাশ এবারও শক্তিশালী প্রার্থী। এই নেতার প্রতি আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের জোরালো অবস্থান আছে। তবে মোহাম্মদ শাহদাত হোসেন নামে আরেক প্রার্থীও মাঠে আছেন। চন্দনাইশের আবু আহমদ চৌধুরীর পক্ষে আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটি অংশ মাঠে নামলেও শেখ টিপু চৌধুরী নামে এক প্রার্থী তাকে ভালোভাবেই চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। টিপুর পক্ষেও আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ সক্রিয় আছে। লোহাগাড়ায় আনোয়ার কামালের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। গতবার বিজয়ী এই প্রার্থী এবার রাজনৈতিকভাবেই কিছুটা কোণটাসা। তবে আওয়ামী লীগের একটি অংশ এই প্রার্থীর পক্ষে রয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘আমি সদস্য থাকাকালীন যে বরাদ্দ পেয়েছি সবগুলো জনপ্রতিনিধিদের দিয়েছি। এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন করেছি। আমার কোন চাওয়া পাওয়া ছিল না। আমার কাজের প্রতিদান হিসেবে ভোটাররা আমাকেই ভোট দিবে। এখানে যেহেতু দলীয় প্রার্থী নেই, কেউ আলাদা সুবিধা পাবে সেটি নয়।’
রেহেনা বেগম ফেরদৌস চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, আমার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। লোকাল আওয়ামী লীগ আমার পক্ষে না থাকলেও অসুবিধা নেই। এখানে আওয়ামী লীগ ভোটে নেই। ভোট দিবেন চেয়ারম্যান, মেম্বাররা। কারও প্রভাব এখানে চলবে না। আমি নিজেও আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আমার প্রতিপক্ষ যে, সে একজন হাইব্রিড।