পুনশ্চঃ সয়াবিন তেল অনৈতিক ব্যবসার বিষদাঁত ওপড়ে ফেলা জরুরি

21

দেশে তেল নিয়ে তেলেসমাতি দীর্ঘদিনের। শুধু তেল নয়, সকল ভোজ্যসামগ্রী নিয়ে তথাকথিত ব্যবসায়ীরা দেশের বাজার ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। শোষক শ্রেণির অনৈতিক ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় ভার অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সমগ্র দেশের মানুষ অনৈতিক, সুবিধাবাদী, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ী নামের কুলাংগারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। হত-দরিদ্র, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী, সৎভাবে রোজগারকারী দেশের মানুষ অসাধু ব্যবসায়ীদের অনৈতিক ও হটকারী ব্যবসাকাÐের কারণে স্বাভাবিক সংসার চালাতে পারছেন না। বউ-বাচ্চা নিয়ে দু’বেলা পুষ্টিকর খাবার তাদের কপালে জোটছে না। চারিদিকে দেশে মানুষের নিরব আহাজারি শুনার কেউ আছে বলে মনে হয় না। স্থানীয় সরকারের লোকজন, প্রশাসন, মন্ত্রণালয়, সরকার এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। কার্যত দেখা যায় কয়েকদিন সংবাদ মাধ্যমে অসাধু গুদামজাতকারী ব্যবসায়ী, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অনৈতিক তথাকথিত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আই ওয়াশ জাতীয় কিছু সংবাদ ছাপানো হয়। এর ফলে দ্রব্যমূল্য বাজারে কমতে দেখা যায় না। অসাধু ব্যবসায়ীরা অনৈতিকভাবে কামানো টাকার একটি অংশ সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তাদের দিকে ছুড়ে দিয়ে তাদের লোক ঠকানো এবং জুলুমবাজি ব্যবসা চালিয়ে যেতে দেখা যায়। চাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রমজান সংশ্লিষ্ট পণ্যসামগ্রী, কোরবান সংশ্লিষ্ট পণ্য সামগ্রীর দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর অপসংস্কৃতি দেশে দীর্ঘদিন হতে চলে আসছে। এর ফলে দুর্নীতি, অনিয়ম, সুবিধাবাদী, অসাধু উপায়ে টাকা উপার্জনকারীরা দ্রæত দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়িয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ স্বল্প আয়ের মানুষ অতি কষ্টে কোন রকম বেঁচে থাকছে। যার কারণে প্রকৃত প্রস্তাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। অথচ সে হিসাব কোন পরিসংখ্যানে যথাযথভাবে উঠে আসছে না। যার কারণে অনেক দেশের মানুষের গড় আয় বেড়েছে এবং ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে এমন মন্তব্য করতে দেখা যায়। গড় আয় বেড়েছে দুর্নীতিবাজ সরকারি চাকরিজীবীদের, চোরাকারবারিদের, অসাধু ব্যবসায়ীদের এবং অনৈতিকভাবে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ উপার্জনকারীদের। ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার ইতিহাসও তাদের চৌহদ্দিতে ঘুরপাক খাচ্ছে মাত্র। দেশটাকে দেশের অসংখ্য অসাধু ব্যবসায়ী সম্প্রদায় লুটেপুটে খেয়ে যাচ্ছে। তাদের অবস্থানও দেশে দৃঢ় অনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে। তারা সরকারের উলট-পালট করার ক্ষমতা প্রদর্শন করতে দেখা যায়। যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পরিবর্তে বাজার দর নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপর্যুপরি অসাধু ব্যবসায়ীদের নানা সুযোগ সুবিধা প্রদান করে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয়। বর্তমান সৎভাবে জীবন যাপনকারী স্বল্প আয়ের মানুষ ও চাকরিজীবীদের বেতন বাড়েনি। নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা ও দেশের কেউ পাচ্ছে না। অথচ বিগত পাঁচ বছর থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির টানাপোড়েনে জনগণের ত্রাহি মদুসূদন অবস্থা হতে কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা এদেশেকে সন্দেশ ভেবে খাচ্ছে তো খেয়ে যাচ্ছেই। দেশের বাণিজ্য মন্ত্রী দেশের অসাধু ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বিশ্বাস করে ভুল করেছেন এমন একটি সংবাদও আমরা দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে পেয়েছি। সয়াবিন তেলের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজানের ঈদের পূর্ব থেকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সরকারের নিকট হতে আরো অধিক লাভবান হবার সুযোগ আদায় করলো। বিভিন্ন স্থানে সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুদের বিস্তারিত সংবাদ দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর এক মুদির দোকানী ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল মুজদ করে রাখার খবর যেমন আছে, তেমনি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মার্কেটের এক দোকান হতে ১ হাজার ৫০ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একজনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা অন্যজনকে মজুদ তেল গায়ের দামে বিক্রির ব্যবস্থা করে সংশ্লিষ্টরা। এতে যথাযথ শাস্তি হয়েছে বলে মনে করে না সাধারণ মানুষ। যারা সয়াবিন তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার অস্থির করছে তাদের আরো কঠোর শাস্তি প্রদান জরুরি। শুধু কয়েকজন ব্যবসায়ীর অবৈধভাবে তেলের মজুদ হয়তো ধরা পড়ছে। এমন আরো অনেকেই মিলে সয়াবিন তেল অবৈধ মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে অসাধু ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগামহীন বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশিল হতে পারে এমন মত সাধারণ মানুষের। নয়তো সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের কৃতিত্ব ব্যর্থ হয়ে যাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণজনিত সয়লাবে।