পুনর্বিবেচনা ও প্রয়োজনে বাতিলের আহবান টিআইবির

11

পূর্বদেশ ডেস্ক

শেয়ার ও হিসাব জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক চুক্তি সংশোধন এবং প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করার আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে টিআইবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কর্তৃক আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এ বিতর্কিত কোম্পানির হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে।
‘জাতীয় স্বার্থে, বিশেষ করে এই চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা দেশের জনগণকে বইতে হবে বিবেচনায়’ সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে চুক্তির শর্তগুলো পুঙ্খানুপঙ্খ বিশ্লেষণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন এবং প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনতে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি দাম দিতে হবে।
টিআইবির বিবৃতিতে বলা হয়, আবার এই বেশি দামে আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতার কথাও রয়েছে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তিতে (পিপিএ)।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শেয়ারবাজারে ফাঁকিবাজি এবং হিসাবপত্রে কারসাজি ও জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত আদানি গ্রæপের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সম্পাদিত পিডিবির এই চুক্তি আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণে অসম ও অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্বভাবে বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চুক্তিটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে আদানি গোষ্ঠীর স্বার্থকে এমনভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এই প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে যেতে পারে, যার বোঝা এ দেশের জনগণকে বইতে হবে।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আদানি ওয়াচসহ নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সূত্রে প্রকাশিত তথ্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কয়লা ব্যবহৃত হবে, তা আসবে আদানির মালিকানাধীন ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিতর্কিত খনি থেকে এবং আদানির জাহাজে করে, যা খালাস হবে আদানির মালিকানাধীন বন্দরে এবং পরিবহন করা হবে আদানির মালিকানাধীন রেলে করে।
তিনি আরও বলেন, আবার উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিবহন করা হবে আদানিরই নির্মিত সঞ্চালন লাইনে। আরও জানা যাচ্ছে, জ্বালানি খরচসহ এই পুরো প্রক্রিয়ার ব্যয় বইতে হবে বাংলাদেশকে, যা বৈশ্বিক বিদ্যুৎ খাতের অভিজ্ঞতায় অভূতপূর্ব। ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য দেশের অন্য যেকোনো সরবরাহকারী থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি হারে মূল্য দিতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আদানি গ্রুপের গোড্ডা প্রকল্পের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিতে হবে দেশি-বিদেশি উদ্যোগে পরিচালিত অন্য যেকোনো প্রকল্পের তুলনায় অগ্রহণযোগ্য বেশি হারে। অনতিবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে এই চুক্তির সমস্ত শর্তাবলী জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞজনকে সম্পৃক্ত করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণপূর্বক সংশোধন করতে এবং দেশের ও জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজনে এই চুক্তি বাতিল করতে পিডিবি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকগণের প্রতি আহ্বান জানান ইফতেখারুজ্জামান।