পুকুর-ঝর্নায় ডুবে প্রাণহানি বাড়ছেই

8

আসহাব আরমান

পুকুরে গোসল করতে গিয়ে ছোট ভাইকে চোখের সামনেই পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে বড় ভাই মো. শাহীন (৭)। ছোট ভাইকে উদ্ধার করতে গিয়ে বড় ভাইসহ দুই ভাইয়েরই মৃত্যু হয়। গত ১৪ অক্টোবর বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নে আরবশাহ ঘোনা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। একই দিন গন্ডামারায় (বাঁশখালী) পানিতে ডুবে মারা যায় আরো এক শিশু।
এদিকে গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঝর্নায় ডুবে জিসান নামে স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। অসচেতনতা ও যথাযথ নজরদারির অভাবে এসব ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সচেতন হলেই এই মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তারা।
একটি সংস্থার গবেষণায় জানা গেছে, গত ৩ বছরের চট্টগ্রাম জেলায় পানিতে ডুবে ৪৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের অধিকাংশই শিশু। চলতি বছরের জুলাই মাসেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জন শিশুর। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রির্চাস বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এর গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি বছর শুধু পানিতে ডুবে চার বছরের কম বয়সী শিশু মারা যায় প্রায় ১০ হাজার। প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ৪০ শিশুর ৩০ জনই ৪ বছরের কম বয়সী। বাড়ির ২০ গজ দূরত্বের মধ্যে কোনো ডোবা, পুকুর, খাল, বিল এমনকি শহরে পরিবেশে বাথরুমে রাখা বালতির পানিতে মর্মান্তিক এ মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের বেশির ভাগেরই পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে সকাল ৮ থেকে দুপুর ২ টার মধ্যে। অন্যদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৮ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
সিআইপিআরবি পরিচালক ড. আমিনুর রহমান, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ জনের বয়স ১৮ বছরের কম। তাহলে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী যেসব শিশু মারা যায়, তাদের ৫৮ শতাংশের মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। জলে ডুবে শিশু মৃত্যু বাংলাদেশে আর নয়’ প্রতিরোধে আমরা নয় বছর ধরে সারাদেশে কাজ করছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে আড়াই হাজার ডে- কেয়ার সেন্টারে চার বছরের কম বয়সী ৫০ হাজার শিশু ও ৬-১০ বছর বয়সের সাড়ে ছয় লাখ শিশুকে সাঁতার প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ঝর্নায় গত ৭ বছরে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। এদের মধ্যে দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বাকি দুইজন কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থী। সর্বশেষ গত রবিবার দুপুরে শহর থেকে ঝর্না দেখতে এসে গোসল করতে পানিতে নেমে মারা যান জিসান নামের ওই শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট তাকে মৃত উদ্ধার করে। জিসান সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
এ দিকে ঝর্না দেখতে গিয়ে বারবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে কার্যকর তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর সাইনবোর্ড টানিয়ে ঝর্না এলাকাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকায় তারকাটা বেড়া দেওয়া হয়েছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি সাইনবোর্ডের পাশে একজন নিরাপত্তা প্রহরীও দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঝর্নার চারপাশে তারকাঁটার বেড়া নেই। কিছু অংশে থাকলেও দর্শনার্থীরা তা নামিয়ে ফেলেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তা প্রহরীকেও সবসময় দেখা যায় না। ফলে অনায়াসে যাওয়া যায় ঝর্নার কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. শহিদুল ইসলাম জানান, এই ঝর্নাটি অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রবেশপথে সাইনবোর্ড লাগানো আছে। তারকাঁটার বেড়া ও নিরাপত্তা প্রহরী দেওয়া আছে। এরপরও অনেকে মাঝেমধ্যে যায়। যারা যায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না। আমরা আবারও তার কাঁটার বেড়া দিবো। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আবারও বসবো।