পায়ে হেঁটে নগরে ঢুকছে মানুষ

35

মনিরুল ইসলাম মুন্না

চাকরিজীবী রফিকুল ইসলামের মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঈদুল আযহার আগের দিন নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঈদের পরে মায়ের সুস্থতায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেয়। কিন্তু সড়কে গণপরিবহন না চলায় রফিকুল ইসলাম তার অসুস্থ মাকে নিয়ে বিপাকে পড়েন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মা চট্টগ্রামে এসেছিলেন ডাক্তারের কাছে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। কিন্তু ২৩ জুলাই থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন দেয়ায় গ্রামে যেতে পারিনি। আর এখন সড়কে কোনো গাড়ি নেই। অসুস্থ মাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মইজ্জারটেক পর্যন্ত এসেছি। পথে পথে পুলিশের প্রচুর চেকপোস্ট পার হয়ে আসতে হয়েছে। কোনরকমে যদি গ্রামের বাড়ি ফিরে যেতে পারি।সে আশায় অসুস্থ মাকে নিয়ে হাঁটছি। খুব কষ্টের মধ্যে যেতে হচ্ছে আমাদের। মা হাঁটতে পারছেন না। বাকি পথটা কিভাবে যাব বুঝতে পারছি না।’
দেশব্যাপী চলছে লকডাউন। চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নগরীতে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করছে মানুষ। গতকাল শনিবার নগরীর মইজ্জারটেক, সিটি গেট ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় চেকপোস্টের মধ্যেও হাজারো মানুষকে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। অন্য দিনের চেয়ে রাস্তায় জনসমাগম ও যানবাহন চলাচল ছিল কম। পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম থেকে বের হতে ও ঢুকতে দেখা গেছে অনেক মানুষকে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভিন্ন স্থানে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে।
এদিকে, গত বুধবার ঈদুল আযহা উদযাপিত হওয়ায় নাড়ির টানে শহর ছেড়েছিলেন মানুষ। কিন্তু শুক্রবার থেকে লকডাউন শুরু হওয়ায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়তে হয় তাদের।
সরেজমিন বেলা ১১টার দিকে দেখা গেছে, মইজ্জারটেক মোড় পর্যন্ত সিএনজি ট্যাক্সি করে যাত্রী আসলেও শাহ আমানত সেতু এলাকা দিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না। কারণ প্রবেশ পথে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যাত্রীরা মইজ্জারটেক পর্যন্ত এসে পায়ে হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। এছাড়া নগরীর অলি-গলিতে রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে আগের মতই।
তবে মহাসড়কে নেই কোনো গণপরিবহন। অল্পকিছু খোলা ট্রাক, পিকআপ, পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজি ট্যাক্সি দাঁড়ালেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মানুষজন। চরম ঝুঁকি নিয়েই গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করছেন তারা।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন মানুষ। প্রতিটি গাড়িকেই পুলিশের তল্লাশি চৌকি পার হতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো গাড়িকেই নগরীর দিকে ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না।
লোহাগাড়া থেকে নগরে আসা মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, আমার খালা অসুস্থ হওয়ায় তিনটি সিএনজি ট্যাক্সি পরিবর্তন করে মইজ্জারটেক পর্যন্ত এসেছি। জানি না আর কয়টি গাড়িতে উঠতে হয়। তারপরও যেতে তো হচ্ছেই।
মাইক্রোবাস নিয়ে আসা এক চালক জানান, ‘বিদেশ থেকে পরিবারের এক সদস্য আসায় আমরা বিমানবন্দর যাচ্ছিলাম। সব কাগজ ঠিক থাকলেও আমাদের আটকে রেখেছে। তবে সংক্রমণের এ সময়ে বের হওয়া আমাদের উচিত হয়নি।’
চাকরিজীবী মো. মুজিবুল হক বলেন, আমি বেসরকারি একটি হাসপাতালে কর্মরত আছি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম, কিন্তু নগরে ঢুকতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর চেকপোস্টে জিজ্ঞেস করছে কোথা থেকে আসছি, কোথায় যাচ্ছি ইত্যাদি।
নার্গিস আক্তার নামে এক নারী বলেন, ‘প্রাইভেটকার ভাড়া করে মইজ্জারটেক পর্যন্ত এসেছি। চেকপোস্ট দেখে আগেই নেমে গেছি। বাকিটা পায়ে হেঁটে পার হয়ে রিকশা করে যাব।’
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বন্দর বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. জসিম উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, সকাল থেকেই আমরা প্রচুর গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছি। আর মানুষকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলছি যাতে করোনা মহামারীতে সরকারের লকডাউন বাস্তবায়নে বাসা থেকে বের না হয়। এছাড়া অনেক মানুষকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দিলেও গাড়ি যেতে দিচ্ছি না।
তিনি আরও জানান, ডাক্তার, রোগী ও জরুরি সেবার অংশ চলার অনুমতি রয়েছে। সেগুলো ছাড় দেয়া হয়েছে। এর বাইরেরগুলোকে মামলা দেয়া হচ্ছে।