পাহাড় কাটছে সিডিএ’র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা! শাস্তির আওতায় আনা হোক

185

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ফৌজদারহাট- বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণ করতে গিয়ে অনুমোদনের অতিরিক্ত পাহাড় কাটার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দশ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত এ ঘটনাটির রেশ না কাটতেই এবার উক্ত লিংক রোড নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ এসেছে। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় যে, স্বনামধন্য এ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দিনে লিংক রোড নির্মাণের কাজ করে নির্মিতব্য সড়কের পাশেই উঁচু দেয়াল দিয়ে রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে কথিত ইয়ার্ড নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘ফৌজারদারহাট থেকে বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণের সুযোগে রাস্তার উভয় পাশে জায়গা কেনার কথা বলে নির্বিচারে পাহাড় কাটছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। দিনের বেলায় রাস্তা নির্মাণের কাজ চললেও রাতের আঁধারে পাহাড় কাটছে এই প্রতিষ্ঠানটি’। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এ অপরাধের জন্য ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সূত্র জানায়, এ এলাকায় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাস বা ব্যক্তি মালিকানাধিন পাহাড় দখল করে বাণিজ্যিক ইয়ার্ড ও আবাসিক প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে নির্বিচারে পাহাড় কেটে আসছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন কিছুদিন তৎপরতা চালালেও বাতাসের গতি থেমে হেলে তারাও নির্জিব হয়ে পড়ে। এতে পাহাড়খেকো ভুমি দস্যু ও প্রশাসনের কয়েক ব্যক্তি লাভবান হলেও এ পাহাড়কাটার ফলে চট্টগ্রাম তথা দেশের বড় বিপদের কারণ হতে বেশি সময় লাগবে না।
আমরা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলে পাহাড়কাটার পরিনতি কত যে ভয়াবহ তা কিছুটা হলে আঁচ করতে পারি। জানা দরকার যে, গত এক দশকে পাহাড়ধসে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় পরিবেশবাদীদের অব্যাহত প্রতিবাদ ও উদ্বেগের মধ্যেও পাহাড় কাটা মুহূর্তের জন্য থেমে থাকেনি। বিশেষ করে, খুলশী, পাঁচলাইশ, ষোলোশহর, বায়েজিদ, ফয়’স লেক, আকবর শাহ, লালখান বাজার, পাহাড়তলী ও পলিটেকনিক এলাকাসহ বহু জায়গায় ধুমসে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় পাহাড় কাটা চলছে। পরিবেশ আইন বলছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার শাস্তি হিসেবে দুই বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং দ্বিতীয়বার অপরাধ করার শাস্তি ১০ বছরের জেল বা অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। আইনে উভয় ক্ষেত্রে জেল ও জরিমানা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তুচিহ্নিত পাহাড় দস্যুদের নামমাত্র জরিমানা করেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। গত বছর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে আড়াই একর পাহাড় নিধনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ পাহাড় খেকো দস্যুদের কি শাস্তি হল, তাদের আদৌ আইনের আওতায় আনা হল কিনা তা আদের জানা নেই। এমন একটি হতাশাজনক অবস্থায় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বায়েজিদ বোস্তামী লিংক রোড নির্মাণে অনুমোদনের চেয়ে বেশি পাহাড় কাটায় ১০ কোটি টাকার অধিক জরিমানা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, পরিবেশ অধিদপ্তর দেরীতে হলেও সরকারের এ সংস্থাকে আইন লঙ্গনের দায়ে যে জরিমানা করেছে, তা পাহাড় নিধনের সব হোতাদের জন্য অশনি সংকেত; একটি দৃষ্টান্তও হতে পারে। কিন্তু সিডিএ’র পাশাপাশি তাদের ঠিকাদারীও একই অপরাধটি করেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ‘চোর-ডাকাত মামত ভাই, দখল করে পাহাড় খাই’ ধারণায় তারা এক হয়েছে। ঘটনাটি দুঃখজনক নয় শুধু, রীতিমত আশঙ্কার বিষয় যে, যারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারাই যদি দেশ ও জাতির ক্ষতির কাজটি করে, তবে জাতি কার কাছে যাবে! আমরা এ অবস্থার দ্রুত অবসান চাই। শুধু জরিমানা নয়, অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করাসহ সরকারি ঠিকাদারী লাইসেন্স বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া হোক। কারণ পাহাড়কাটা মানে জমিনের স্থায়িত্ব ও মানুষের নিরাপত্তা ধংস করা।