পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজিতে ক্লান্ত চন্দনাইশ

70

চন্দনাইশ প্রতিনিধি

চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরীর নিকট মোবাইলে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। চাঁদা না দেয়ায় তার খামার বাড়িতে ২ দফা আগুন দিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন করে। এ ব্যাপারে গত ১ মে তিনি চন্দনাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
সম্প্রতি চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা চাঁদা আদায় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন মাধ্যমে চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকার বাগান মালিকদের নিকট থেকে মাসোহারা আদায় করে আসছে বলে অভিযোগ বাগান মালিকদের।
থানায় উপজেলা চেয়ারম্যানের ডায়েরি সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে তাঁর নিকট মোবাইলে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। তিনি চাঁদা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চন্দনাইশের জনপ্রতিনিধিদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এক পর্যায়ে গত ২৯ এপ্রিল রাতে চেয়ারম্যানের চৌওঘাটা লেবু, ড্রাগন, আমসহ বিভিন্ন ফলাদির বাগান বাড়ির পাকা ঘরে ২০/৩০ জন পাহাড়ি সন্ত্রাসী আগুন দিয়ে আসবাবপত্রসহ ৩ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিসাধন করে। ৩০ এপ্রিল গভীর রাতে তার দুইল্যাছড়ি মাছের প্রজেক্টের স্টোরে আগুন দিয়ে মাছের খাদ্য, মাছ ধরার জাল, স্টোর রুমের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় মালামাল পুড়ে ৭ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন হয়। ঐ দিন সকালে তার মোবাইলে ০১৯০৯-৩৮৫০২১ নম্বার থেকে কল দিয়ে তারা সন্তু লারমা গ্রুপের সন্ত্রাসী পরিচয় দিয়ে সমঝোতা না করলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন ডায়েরির কথা স্বীকার করে বিষয়টি তিনি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান।
উল্লেখ্য যে, গত ৮ মার্চ ছৈয়দাবাদ এলাকার ঠিকাদার মোজাম্মেল হককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে গত ১৪ মার্চ রাত ১১টায় ধোপাছড়ি এলাকায় এক সপ্তাহ পর তাকে ছেড়ে দেয়। একইভাবে পটিয়া হাইদগাঁও এলাকা থেকে ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় কাঞ্চননগর এলাকার শাহসূফি বাড়ির ট্রাকচালক মোছলেম উদ্দীন (৪৫) কে অপহরণ করে। মুক্তিপণ দিতে না পারায় অদ্যাবধি তার সন্ধান পায়নি পরিবার। তিন পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে এবার পাহাড়ে ৩ হাজার সদস্য নিয়ে শসস্ত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। আগামী বর্ষা মৌসুমে এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করবে বলে এক সূত্রে জানা যায়। পাহাড়ের বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, ম্রো ও খিয়াং এই ৬টি সম্প্রদায়কে অনগ্রসর ও শান্ত স্বভাবের সম্প্রদায় হিসেবে গণ্য করা হলেও এবার তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। তাদের অনেকে এখন আর্থিক সহায়তা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই কুকিচিন রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র আন্দোলনে নামছে বলে জানা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, পার্বত্য জেলায় জেএসএস (মূল), ইউপিডিএফ (মূল), জেএসএস (সংস্কার) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টি নামে ৫টি সংগঠনের সংঘাত ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অশান্ত পাহাড়, সেই সঙ্গে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আত্মপ্রকাশ পাহাড়ে সংঘাত আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়ার পাহাড় নিয়ন্ত্রণ রাখতে দীর্ঘদিন এই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সক্রিয়। তারা প্রতিনিয়ত পাহাড়ের বাগানমালিক ও কাজে যাওয়া শ্রমিকদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে আসছে। তারা জলপাই কালারের পোশাক ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করে থাকে। গত ১২ এপ্রিল পটিয়া উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের মৌলভী বাজার এলাকার পাহাড় থেকে সন্ত্রাসীরা ১২ জন লেবু বাগানের শ্রমিককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে পরে ছেড়ে দেয়। এরপর র‌্যাব, পুলিশ ও সীমান্তের বান্দরবানের ডলুপাড়া ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বান্দরবান সীমান্তে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেনাবাহিনীর ডলুপাড়া ক্যাম্পের মেজর মোহাম্মদ তাহমিদ ও পটিয়া সীমান্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) কবির আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) তারিক রহমান, র‌্যাব-৭ এর পরিদর্শক নূরে আলম ও পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার।