পাহাড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত হবে

18

রাঙামাটি প্রতিনিধি

বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কাজ করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে, সেগুলোর তদন্ত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকার হওয়া দরকার। তাই পার্বত্য অঞ্চলকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আমরা সর্বপ্রথম পুরো কমিশন নিয়ে এখানকার মানুষের কষ্টের কথা শুনতে এসেছি। ইতোমধ্যে তিন পার্বত্য জেলা সফর করেছি আমরা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান গতকাল বুধবার রাঙামাটিতে আয়োজিত গণশুনানি পরিচালনা করছিলেন। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকে অনেকের কাছ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা শুনেছি। ভবিষ্যতে যাতে এই অঞ্চলের কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার না হন, সেজন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ। এ দেশের সব নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রয়েছে। হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে আমরা সবাই মিলেমিশে শান্তিতে থাকতে চাই। তাই আসুন, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি।
সকালে রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হলে আয়োজিত গণশুনানিতে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন।
জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরীসহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে বাইরে রাস্তার উভয় পাশে দাঁড়িয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার প্রতিবাদে পাহাড়ি ও বাঙালিরা ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন নিয়ে তাদের স্ব-স্ব দাবি-দাওয়া প্রদর্শন করেন।
গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারী বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার, চাঁদাবাজিসহ প্রতিনিয়ত অহরহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এসবের কোনো প্রতিকার নেই। ফলে এখানকার সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে বসবাস করছেন।
খাগড়াছড়ির পুষ্পিতা চাকমা বলেন, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আমার বাড়ি ভাঙচুর করে একদল বাঙালি দুর্বৃত্ত লুটপাট চালায়। এ সময় আমার প্রতিবন্ধী মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মামলা করেছি। বিচার চেয়ে বিভিন্ন দরবারে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোথাও প্রতিকার পাচ্ছি না। আমি মানবিক সহায়তা চাই।
উপজাতীয় শরনার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সামনে পাহাড়িদের গ্রামে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসুই ছাইন চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দলের সন্ত্রাসীরা এ পর্যন্ত আমার ৩ জন কর্মীকে হত্যা করেছে। ওইসব সন্ত্রাসীদের ভয়ে গত ৬ মাস ধরে আমি নিজের বাড়িতে যেতে পারছি না। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় পাহাড়ে কারও নিরাপত্তা থাকবে না।