পাহাড়ে বইছে আনন্দের বন্যা

59

বান্দরবানে শুরু হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম ও আকষর্ণীয় ধর্মীয় উৎসব (ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে) প্রবারণা পূর্ণিমা। এতে জেলাজুড়ে মারমা পল্লীগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা। এ উৎসব ঘিরে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানর।
গতকার শনিবার সন্ধ্যা থেকে চার দিনব্যাপী পার্বত্য জেলা বান্দরবানে চলবে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় ও আকর্ষণীয় এ উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা আষাঢ়ী পূর্ণিমার পর থেকে তিন মাসব্যাপী বর্ষাব্রত পালন শুরু করে এবং প্রবারণা পূর্ণিমার দিন তা শেষ হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় ক্যাং এ মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জালন ও স্থানীয় রাজার মাঠে ফানুস ওড়ানোর মাধ্যমে চার দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা।
এ সময় সদর উপজেলা চেয়াম্যান একেএম জাহাঙ্গীর, জেলা পরিষদ সদস্য সিং ইয়ং ম্রো টিসিআই পরিচালক মং ঞো চিংসহ উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রবারণা পুর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্বার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল, তাই প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে দিনটি বিশেষ স্মরণীয় হয়ে আছে। এ দিনকে স্মরণ করার জন্য জেলাজুড়ে চার দিনব্যাপী চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আয়োজনে রথযাত্রা, বিভিন্ন পাড়ায় ও গ্রামে পিঠা উৎসব, ফানুস বাতি ওড়ানো, হাজার প্রদীপ প্রজ্জালনসহ নানা আয়োজন।
উৎসবের প্রধান আকর্ষণ একটি রথ তৈরি, আর রথটি টেনে টেনে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে প্রদক্ষিণ শেষে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন। পরে ক্যাং এ গিয়ে পঞ্চশীল গ্রহণ ধর্মীয় দেশনা ও সমবেত প্রার্থনার মাধ্যমে আগামী ১৫ অক্টোবর শেষ হবে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূণিমা। এটি মারমা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রাণের উৎসব। এ প্রাণের উৎসবে ভগবান বুদ্ধকে মনের আশা পূরণের জন্য ফানুস তৈরি করে তাতে আগুন দিয়ে আকাশে উড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা।
তিনমাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার দিন বিহার থেকে বের হয়ে সব বিবাদ ভুলে একে অন্যের প্রতি সম্ভাষণ জানানো ও মনের সব সংকীর্ণতা পরিহার করে অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মহামিলনের নিজ সংসারে ফিরে আসা হয়। তাই এ উৎসবে মেতে ওঠবে মারমা তরুণ-তরুণী, কিশোর কিশোরী, দায়ক-দায়িকা, উপাসক-উপাসিকাসহ সকল বৌদ্ধ র্ধমালম্বী।
এ মহামিলনে সকলের আনন্দকে আরো বেগমান করতে নানা আয়োজনের কথা জানালেন উৎসব উৎযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং। তিনি জানান, প্রতিবছরের মত এবারও আমরা আরো আনন্দঘন পরিবেশে আমাদের এ উৎসব উদ্যাপন করবো। বাড়িতে বাড়িতে পিঠা তৈরি করবো। আপনজনদের বাসায় বেড়াতে যাবো। ক্যং এ গিয়ে প্রার্থনা করব। সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জন দেয়ার মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
পর্যটন জেলা হিসেবে প্রবরাণা উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছরই বান্দরবানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম হয়। এ উৎসবে যাতে সবাই আনন্দঘন পরিবেশে কাটাতে পারে, তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বান্দরবান সদর থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম জানান, এ উৎসব ঘিরে প্রায় সময়ই দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা বান্দরবান আসেন। তাই অনুষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে আমরা বিভিন্ন স্তরের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আশা করি, সবাই নিরাপদে উৎসব উদযাপন করতে পারবেন।