পাহাড়ের দৃশ্যপট বদলে দেবে সীমান্ত সড়ক

19

এম. কামাল উদ্দিন, সীমান্ত থেকে ফিরে

পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র সীমান্ত সড়ক। এ সীমান্ত সড়ক নির্মাণের ফলে তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের দৃশ্যপথ বদলে যাচ্ছে। বিশেষ করে যোগাযোগখাতে তিন পার্বত্যজেলায় সেতুবন্ধন রচিত হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হয়ে উঠছে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহেই সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সড়কসহ তিন পার্বত্যজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কাজ করচে। সীমান্ত সড়কটি তারই অংশ যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সেনাবাহিনীসূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত সড়ক পথের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলতি বছরের জুন মাসেই শেষ করা হবে। দ্বিতীয় তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে আগামি জুন মাসের পর। বাংলাদেশ সরকারের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই সীমান্ত সড়কের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। আগামি ২-৩ বছরের মধ্যে বান্দরবান থেকে রাঙামাটি হয়ে খাগড়াছড়ি যাবে সীমান্ত সড়কটি। ফলে তিন পার্বত্যজেলার মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। সীমান্ত সড়কটি হয়ে গেলে অবৈধ অস্ত্র, মাদক, সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম কমবে, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটবে বেশি। ব্যবসা-বাণিজ্যেও বাড়বে গতি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে তিন পার্বত্যজেলা।
স্থানীয় গোলাক তঞ্চঙ্গা, সুগত তঞ্চঙ্গা, ওমর শান্তি তঞ্চঙ্গা ও জীবনজয় তঞ্চঙ্গা বলেন, এ সড়কটি হওয়ায় এখন আর আমাদের হাঁটতে হয় না। আমরা সীমান্তবাসী অনেক খুশি ও আনন্দ পাচ্ছি। সীমান্ত হওয়ার আগে আমরা পায়ে হেঁটে বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলা বাজারে গিয়ে এক-দুইদিন সময় নিয়ে হাট-বাজার করতে হতো। এখন আমরা মোটরসাইকেল বা মাহিন্দ্র দিয়ে যাতায়াত করতে পারছি। আমাদের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই জন্য বাংলাদেশ সরকার, সড়ক বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। সড়ককের অসম্পূর্ণ কাজগুলো দ্রæত হয়ে গেছে। আরো উন্নত হবে এই এলাকা। অনেকে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে।
সরকারের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে ২০১৯ সাল থেকে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের প্রথম ধাপ সূচনা করা হয়। সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের ১৬, ২০ ও ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সীমান্ত সড়কের আর্থিক ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। একনেকে অনুমোদিত প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ কিলোমিটার প্রকল্পের মধ্যে ২২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস বলেন, ৪৭ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জুন মাসে সম্পন্ন হবে। অবশিষ্ট ৪০ কিলোমিটার আগামি অর্থ বছরে শেষ হবে। শুরু থেকেই সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সদস্যরা অনেক প্রতিক‚লতার মধ্য দিয়ে সীমান্ত সড়কটি নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৮২ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। এ সড়কটি নির্মাণ হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থলপথে যোগাযোগের মাধ্যমে যেমন স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, তেমনি রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্তে নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটনশিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।
সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্ণেল ভ‚ইয়া মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো সীমান্ত এলাকার কৃষিপণ্য দেশের মূল ভ‚-খন্ডে পরিবহনের মাধ্যমে অঞ্চলটির সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা, সীমান্ত এলাকার জনসাধারণের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, পার্বত্য এলাকার কৃষিজাত পণ্য, ফসল ও উন্নত জাতের পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা, পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানা স্থাপনের জন্য সহায়তা প্রদান করা, পার্বত্য জেলার দূর্গম সীমান্তবর্তী এলাকায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার সৃষ্টি করা।