পাহাড়ের দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষের জবুথবু অবস্থা

40

বান্দরবানের লামা উপজেলায় জেঁকে বসেছে হীম হীম শীত। সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলো। আর সেটি অব্যাহত থাকে সকাল ১১টা পর্যন্ত। কোন সময় দুপুর ১টা পর্যন্তও সূর্যের দেখা মেলে না। গত কয়েকদিন ধরে এ ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহে বিরাজ করছে। শীতের তীব্রতায় দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষের জবুথবু অবস্থা। আবার শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এদিকে উপজেলায় শীতার্তদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৬৬৪টি কম্বল। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য।
এছাড়া এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শীতার্তদের সহায়তায় কোন বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসেনি বলেও জানান স্থানীয়রা। দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষ জনের শীতের কষ্ট লাঘবে গরম কাপড় ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল। সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে লামা উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এদের মধ্যে অর্ধেকের মত মানুষ দারিদ্র। গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে উপজেলায় শীতের তীব্রতা শুরু হয়। আস্তে আস্তে এ তীব্রতা বেড়ে চলেছে।
সমতলের চেয়ে পাহাডি এলাকা হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা একটু বেশি অনুভুত হয়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই পাহাড়ি জনপদে তীব্র শীত জেঁকে বসে। সেই সঙ্গে বাড়ে কুয়াশাও। সকাল ১১টা পর্যন্ত শীত ও কুয়াশা অব্যাহত থাকার কারণে নিম্ন আয়ের পাথর শ্রমিকরা কাজে বের হতে পারেন না।
এছাড়া বাগান এলাকায় কর্মরত শ্রমিকরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঠান্ডা বাতাসের কারণে ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া ও কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। শীত নিবারনে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে পৌরসভা এলাকার জন্য ৪৬০টি ও ৭টি ইউনিয়নের জন্য ৪ হাজার ১২০টি কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট জানিয়েছে। অথচ উপজেলায় প্রায় এক লাখ মানুষ প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় দরিদ্র সীমার নিচে বাস করছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এদিকে কুয়াশার কারণে বিশেষ করে রাতের বেলা ও ভোর বেলায় লামা-চকরিয়া সড়কে যান চলাচল ব্যহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। জীপ চালক ওসমান গনি শিমুল জানান, সকাল ১১টা পর্যন্ত লামা-চকরিয়া সড়কের কয়েকটি এলাকা কুয়াশায় ঢেকে থাকে। অনেক সময় গাড়ির সামনে হেড লাইট জ্বালিয়েও ১৫-১৬ ফুটের বেশি দেখা যায় না। এখানকার খেটে খাওয়া মানুষগুলো জানান, প্রচন্ড শীতের তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিবছর এভাবেই শীতের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।
এতে জীবনযাত্রা হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে জ্বালিয়ে আগুনে শরীর ছেঁকে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন তারা। ছোট বমু হেডম্যান পাড়ার নারীরা জানান, আমাদের পাড়ার সবাই গরিব। চাহিদামতো শীতের কাপড় কেনা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারিভাবে যদি আমাদেরকে কম্বল দিয়ে সহায়তা করা হয় তাহলে ভালো হতো।
পাহাড়ি নারী হ্লামাউ মারমা, উমে মারমা বলেন, অন্যবারের চেয়ে এ বছরে বেশি শীত পড়ছে। শীত থেকে রক্ষা পেতে আমরা আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছি। সরেজমিন উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন বাজারঘুরে দেখা যায়, পুরানো কাপড় নিয়ে ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছে। খোলা আকাশের নিচে প্রায় অর্ধ-শতাধিক শীতবস্ত্রের দোকান আছে। এসব দোকানে খুচরা মূল্যে পুরানো শীতবস্ত্র কাপড় বিক্রিতে ধুম পড়েছে। আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন জানান, আমার ইউনিয়নের জন্য ৫২২পিস কম্বল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত কম্বলের চেয়ে ইউনিয়নে দু:স্থ ও গরীব মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। একই অবস্থা অন্য ইউনিয়নগুলোতে বিরাজ করছে বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মো. শফিউর রহমান মজুমদার জানান, শীতজনিত কারণে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছে।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান জানান, চলতি শীত মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাত ইউনিয়নের দুস্থ ও গরীবদের মধ্যে বিতরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ থেকে ৪ হাজার ৫৮০টি কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে এসব কম্বল ইউনিয়ন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরও করা হয়েছে।