পাল্টাপাল্টি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা

44

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের তিনটি ইউনিটে পাল্টাপাল্টি সম্মেলনকে ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ায়। গতকাল অনুষ্ঠিত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাংশের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান। অপর অংশের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী মো. আলী। সম্মেলনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠে এলাকা।
এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রভাতী স্কুলে ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের গ ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উদ্বোধকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী এবং দলের সকল কর্মকান্ডে নেতাকর্মীদের পারষ্পরিক সহযোগে যে শক্তিটি অর্জন করেছে তাকে উত্তরোত্তর সুরক্ষা করতে হবে। আজ তৃণমূল স্তরে যে নেতৃত্ব নির্বাচিত হল তাদের কঠিন সময় উত্তোরণের মানসিক ও আদর্শিক চেতনাকে প্রসারিত করে জনগণের মাঝে নিবেদিত হতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেক ছোট খাটো ভুলভ্রান্তি আছে। এই নিয়ে বিভেদ বা বিরোধ দলীয় অস্থিস্তকে হুমকির মুখোমুখি ফেলে দিতে পারে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহব্বায়ক ড. নেছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু। অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান আহমদ, প্রধান বক্তা ইকবাল চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন জুয়েল, হাবিবুর রহমান। ‘ক’ ইউনিটের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মুসলিম উদ্দিন চৌধুরী। ‘খ’ ইউনিটে সভাপতি মীর কাশেম দুলাল এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে হারুনুর রশিদ। গ ইউনিট সম্মেলনে গোপন ব্যালেটের মাধ্যমে এ এইচ এম আবুল খায়ের সভাপতি, লায়ন গিয়াস উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আহব্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল আবছার আজম খান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আওতাধীন ‘এ’ ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন উত্তর কাট্টলী জয়তারা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইদ্রিস মিঠুর সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। ‘বি’ ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন উত্তর কাট্টলী কমিউনিটি সেন্টার মোড়ে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়। ‘সি’ ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন নতুন মুনছুরাবাদ মো. ইলিয়াছের সভাপতিত্বে দুপুর দেড়টায় অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী মো. আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক জহির উদ্দিন মো. বাবর, আওয়ামী লীগ নেতা মুনছুর আহমদ, শাহাদাত হোসেন শাহেদ, এমদাদুল হাছান বাবু, শহীদুল ইসলাম দুলদুল, নুরুল আবচার আজম খান, আসিফ ইসলাম, প্রিয়তোষ সরকার, সিরাজদ্দৌলা নিপু, উজ্জ্বল কান্তি দে, টুনটু দাশ বিজয়, মো. ইউসুফ বাবলু, মো. হারুনুর রশিদ, মো. সালাউদ্দিন, মো. মামুন, গিয়াস উদ্দিন, প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জনি, ফয়সাল বিন নিজাম, ইরফান আলম তানিম, রেজাউল হাসান চৌধুরী রাজু, আনন্দ আচার্য্য, সামির আকাশ, অসিত দেব হৃদয়, মেহেদী হাসান অনিক। সভায় ‘এ’ ইউনিটে মো. আবদুল কাইয়ুমকে সভাপতি, ঝন্টু ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদক, ‘বি’ ইউনিটে মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি, মো. আমজাদ হোসেন চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক এবং ‘সি’ ইউনিটে মোহাম্মদ ইদ্রিসকে সভাপতি, মো. নিজাম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
এ বিষয়ে ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আহব্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল আবছার আজম খান জানান, নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু জামাত-বিএনপি’র লোকজনকে দিয়ে সম্মেলন করেছেন। বিষয়টি সম্মেলনের দুইদিন আগে চিঠি দিয়ে নগর আওয়ামী লীগকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার আসেনি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের এলাকার সাংসদ দিদারুল আলম এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের সাথেও কোন পরামর্শ করেননি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহবায়ক। তাই আলাদাভাবে তিন ইউনিটের সম্মেলন করতে হয়েছে আমাদেরকে।
এ বিষয়ে নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ থেকে দুইজন (৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির) বিচ্ছিন্নভাবে মানবন্ধনের মত করে কমিটি ঘোষণা করলে সেটা সম্মেলন হবে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রমে তারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সম্মেলনের দিন আলাদাভাবে কমিটি ঘোষণা করলে সেটা সম্মেলন হবে না। শুধুমাত্র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যই তারা এই কাজ করেছে। জামাত-বিএনপি’র লোকজনকে নিয়ে কাউন্সিলর করা এবং কমিটিতে আনার অভিযোগ প্রসঙ্গে মঞ্জুর বক্তব্য হচ্ছে, জামাত-বিএনপির লোকজনকে নিয়ে সম্মেলন করার প্রশ্নই আসে না। এগুলো অনর্থক কথা।
এদিকে একই ওয়ার্ডে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি সম্মেলনের কারণে এলাকায় উত্তাপ ছড়ায়। আলোচনা চলে সর্বত্র। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশও সতর্ক ছিল বলে জানা গেছে।