পালন হয়নি ফটিকছড়ির লেলাং গণহত্যা দিবস!

3

মো. এমরান হোসেন, ফটিকছড়ি

গতকাল ২১ নভেম্বর ছিল ফটিকছড়ির লেলাং গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী লেলাং মানাইছড়ি ছড়ার কূলে নিয়ে ১৭ পরিবারের ২৯ নিরীহ বাঙালিকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। সেখানেই তাদের দেয়া হয় মাটি চাপা।
প্রতিবছর এ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলেও এবার এখানে শহীদের স্মরণে ছিল না কোনো কর্মসূচি। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই ঘটনায়।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর ছিল ঈদ-উল ফিতর। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকসেনারা নাজিরহাট কলেজ ও রেলস্টেশন দখল করে নিলেও মুক্তিযোদ্ধারা ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রতিরোধ ক্যাম্প গড়ে তোলেন। এর মধ্যে লেলাং ইউনিয়নের শাহনগর গ্রাম অন্যতম। ঈদের নামাজ শেষে বাঙালি যখন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছিল, তখন সাদা পোশাকে পাকবাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় শাহনগর নাথ পাড়াসহ আশেপাশের পুরো এলাকা ঘিরে সাধারণ জনতাকে মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ দিতে বলে। কেউ যখন তাদের তথ্য দিচ্ছিল না, তখন পাকবাহিনী গণধর্ষণ, লুণ্ঠন ও নির্যাতন চালিয়ে সেখানকার ১৭ পরিবারের ২৯ বাঙালিকে লেলাং মানাইছড়ি ছড়ার কূলে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।
পাক বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞে এ দিন যারা শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ইউনুস, নুর আহমদ, আফসার আহমদ, নুরুল ইসলাম, মুহাম্মদ এয়াকুব, মুহাম্মদ নুরুল আলম, মুহাম্মদ রুহুল আমিন, মুহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ, ফয়েজ আহমেদ, জগির আহমেদ, চিকন মিয়া, নুর আহমদ, মুহাম্মদ ইদ্রিস, মুহাম্মদ সোলেমান, বজল আহমদ, জমিল উদ্দিন, রফিকুল আলম, রমেশ চদ্র নাথ, সুরেশ লাল নাথ, গরহরি নাথ, কৃষ্ণহরি নাথ, সুধাংশু বিমল নাথ, হরিপদ নাথ, বিপিন চদ্র নাথ, নগরবাসী নাথ, হরিলাল নাথ, হরিধর নাথ, ক্ষমশ চদ্র ভট্টাচার্য্য নাথ। পরে হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় তাদের গণ কবর দেয়া হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে।
প্রতিবছর স্থানীয়ভাবে এ স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও গতকাল সোমবার (২১ নভেম্বর) ছিল না কোনো কর্মসূচি। এ নিয়ে এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এছাড়াও স্বাধীনতার এতো বছর পরও সরকারি কোনো ভাতা পান না শহীদ পরিবারগুলো। এ নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ।
শহীদ কৃষ্ণহরি নাথ ও সুধাংশু বিমল নাথ পরিবারের সদস্য অতুল চন্দ্র নাথ বলেন, আমার দাদা ও জেঠাকে ঐ দিন হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার এতো বছর পরও শহীদ পরিবার হিসাবে আমরা সরকারিভাবে কোনো ভাতা, অনুদান পাই না। এই সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিলেও আমরা তা থেকে বঞ্চিত। আমি শহীদ পরিবারের সন্তান হিসাবে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি ঐ দিনের সকল শহীদ পরিবার যেন মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
লেলাং এর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ (এলএমজি) বলেন, এই শহীদ পরিবারগুলাকে ভাতা প্রদানের জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে আসছি। তারা আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে তা আর বাস্তবায়ন হয় না।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির রহমান সানি জানান, এই দিবস সম্পর্কে আমার জানা নাই। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাথে কথা বলবো। যদি সরকারি কোনো ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা থাকে তাহলে তারা অবশ্যই পাবে।