পার্লামেন্টে ভোটাভুটির প্রস্তাব

28

ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনের প্রশ্নে পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সে ভোটাভুটির প্রস্তাব দিয়েছে ব্রিটিশ লেবার পার্টি। সোমবার রাতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে নতুন ব্রেক্সিট প্রস্তাব উত্থাপনের পর পার্লামেন্টে দেওয়া বিকল্প প্রস্তাবে এ দাবি জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে আইনপ্রণেতাদেরকে দ্বিতীয় গণভোটের বিষয়টি বিবেচনা করতে বললো লেবার পার্টি।
এ বছর ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসা) সম্পন্ন হওয়ার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। পরবর্তী সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে গত নভেম্বরে জোটটির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। গত ১৫ জানুয়ারি মে’র সেই ব্রেক্সিট খসড়া পরিকল্পনা পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে কোনরকমে (মাত্র ১৯ ভোটে) টিকে যান থেরেসা। এতে ‘সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্রেক্সিট পরিকল্পনা’ নিয়ে ইউরোপকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ আসে তার হাতে।
সোমবার প্ল্যান বি নামের সংশোধিত সে প্রস্তাব উত্থাপন করেন থেরেসা মে। সংশোধিত এ প্রস্তাব নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে ২৯ জানুয়ারি। আর তার আগে সরকারের পরিকল্পনায় সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিতে পারবেন ব্রিটিশ আইনপ্রনেতারা। সে অনুযায়ী, সোমবার রাতেই একটি সংশোধনী দিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সংশোধনীতে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিস্থিতি ঠেকাতে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির জন্য সরকারকে বাধ্য করার প্রস্তাব দিয়েছে লেবার পার্টি। এছাড়া ব্রেক্সিট প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজন করা হবে কি হবে না সে প্রশ্নে ভোটাভুটি এবং ইইউ-এর সঙ্গে একটি স্থায়ী শুল্ক সংঘ বজায় রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সোমবার পার্লামেন্টে সংশোধনী উপস্থাপন করে করবিন বলেছেন: ‘আমাদের সংশোধনী বাস্তবায়িত হলে আইনপ্রণেতারা ব্রেক্সিট নিয়ে তৈরি হওয়া অচরাবস্থার নিরসনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন এবং চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ঝামেলা প্রতিহত করতে পারবেন। লেবার পার্টির বিকল্প এ সংশোধনীকে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বিবেচনা করার এখনই সময়। এর মধ্য দিয়ে গণভোটসহ সব বিষয়ই আলোচনার টেবিলে থাকবে।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলছে, দ্বিতীয় গণভোটকে সমর্থন দেওয়া নিয়ে যখন করবিন ও তার দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতার মধ্যে বিরোধ চলছে তখনই সংশোধনীটি দিলো লেবার পার্টি। ১৬ জানুয়ারি থেরেসার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেকেরই সমর্থন পেয়েছিলেন করবিন। দ্বিতীয় গণভোটের দাবিকে সমর্থন দেওয়ার জন্য এসব দলের পক্ষ থেকে করবিনের ওপর চাপ জোরালো হচ্ছিলো। তবে রবিনের কয়েকজন ঘনিষ্ট সহযোগী দ্বিতীয় গণভোটের ব্যাপারে সংশয়ী। গণভোটের বিরোধিতা করছিলেন লেবার পার্টির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শেডো মন্ত্রী। তাদের সঙ্গে কথা বলে স¤প্রতি গার্ডিয়ান আভাস দিয়েছিল করবিন যদি গণভোটকে সমর্থন দেন তবে ওই মন্ত্রীরা পদত্যাগ করতে পারেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সোমবার হাউস অব কমন্সে থেরেসা উত্থাপিত নতুন ব্রেক্সিট প্রস্তাবে খুব একটা পরিবর্তন আনা হয়নি। এদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দলের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর নতুন প্রস্তাবে তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। থেরোসা জানান, আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা নিয়ে আরও আলোচনা করা হবে। প্রথম খসড়া প্রস্তাবে থাকা ‘আইরিশ ব্যাকস্টপ’ পরিকল্পনা নিয়ে অনেকের মধ্যে আপত্তি রয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজার ও শুল্ক সংঘের অংশ। সেকারণে সীমান্ত দিয়ে মালামাল আনা নেওয়ার সময় কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয় না এবং শুল্ক লাগে না। তবে ব্রেক্সিট পরিস্থিতির পর আর সে পরিস্থিতি থাকবে না। আর সেটা হতে দিতে চায় না যুক্তরাজ্য। সে যুক্তি দেখিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তিতে আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা রেখেছেন থেরেসা মে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ব্রেক্সিটের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও আইরিশ রিপাবলিকের মধ্যকার সীমান্ত উন্মুক্ত রাখা হবে ও শুল্ক যাচাই ব্যবস্থা থাকবে না। এর মানে হলো, ব্রেক্সিটের পরও ইইউ-এর একক বাজারের কিছু নীতিমালা মেনে চলবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। পাশাপাশি, যুক্তরাজ্য ও ইইউ-এর মধ্যে টেকসই কোনও বাণিজ্য চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকরভাবে যুক্তরাজ্য শুল্ক সংঘে থাকবে। থেরেসার দল কনজারভেটিভ পার্টির অনেক আইনপ্রণেতা ও ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি ব্যাকস্টপের বিরোধিতা করছে। কারণ, তাদের আশঙ্কা এ নীতি স্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম জারি হতে পারে।
এদিকে ১৬ জানুয়ারি ইউগভ পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা গেছে,বেশিরভাগ ব্রিটিশ এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের থেকে যাওয়ার পক্ষে। ১ হাজারেরও বেশি মানুষের মধ্যে ওই জরিপ চালানো হয়। দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ মানুষ এখন ব্রেক্সিট না হওয়ার পক্ষে। আর ব্রেক্সিট চান ৪৪ শতাংশ ব্রিটিশ।