পারিবারিক আদালত আইন ২০২২ ও একটি পর্যালোচনা

488

জিয়া হাবীব আহ্সান

পারিবারিক আদালত স্থাপন হচ্ছে আমাদের আইন প্রণেতাদের বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন আইনী চিন্তার (ঝড়ঢ়যরংঃরপধঃবফ ষবমধষ ঃযড়ঁমযঃ) ফসল। প্রথাগত দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতসমূহে বিচার প্রার্থী মানুষজন পারিবারিক বিরোধসমূহের প্রতিকার কাক্সিক্ষত সময়ে লাভ না করায় একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ এর অধীন পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। নারী ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় পারিবারিক আদালতের গুরুত্ব অপরিসীম। এ দেশের নারী সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পারিবারিক আদালত গঠন। রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশ বলে ১৯৮৫ সালে পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। পারিবারিক বিষয়সমূহ যেমন- বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব এ পাঁচটি বিষয়ে এই আদালতে মামলা পরিচালনার উদ্দেশ্যেই এই আদালত গঠিত। পারিবারিক বিষয়াদি দ্রæত নিষ্পত্তির জন্য একটি স্থানীয় ও পৃথক বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজন থেকেই এই পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন, ঘোষণা এবং প্রবর্তনের মাধ্যমে নারী সমাজের দাবি কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত ও কার্যকর হয়েছে। পারিবারিক কিছু জটিল সমস্যা এমন আকার ধারণ করে যে, এর সমাধান আদালতের আশ্রয় ছাড়া সম্ভব নয়। দেশের প্রচলিত জটিল এবং ব্যয়বহুল সময় সাপেক্ষ বিচার ব্যবস্থায় এ সমস্ত সমস্যার সমাধান পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তো। সেখানে নারীদের জন্য আলাদা কোনো বিচার ব্যবস্থা ছিল না। তাই এ সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রেখে সমস্যাসমূহ নিরসনের লক্ষ্যে অল্প সময়ে এবং অল্প খরচে এবং সংশিষ্ট পদ্ধতিতে নারী সমাজের পারিবারিক বিষয়াদি নিষ্পত্তির জন্য একটি স্থায়ী ও পৃথক বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করাই এ অধ্যাদেশের মূল উদ্দেশ্য। এখানে স্বামী স্ত্রী, মুসলিম অমুসলিম সকল ধর্মের পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির ও দাম্পত্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ আছে। দ্রæত পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আদালতটি গঠিত হলেও আজ নানা কারণে তা বিচার প্রার্থীদের বিড়ম্বনা ও উৎকন্ঠার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মামলার জট, বিচারক সংকট, সমন নোটিশ জারীতে বিলম্ব এসব নানা কারণে আদালতের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মন্ত্রী পরিষদ সম্প্রতি সামরিক সরকারের আমলের অধ্যাদেশটি সামান্য পরিবর্তন করে, এর স্থলে পারিবারিক আদালত আইন, ২০২২ এর খসড়া অনুমোদন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ সচিবালয় থেকে সভায় উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় পরিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর স্থলে খসড়া আইনটি উত্থাপন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে এ ধরনের মামলায় আপিল আদালতে সরকার শুধু জেলা বিচারকদের আদালতকেই নয়, বরং জেলা আদালতের সমমানের অন্যান্য জেলা বিচারকদের আদালতকেও বিবেচনা করতে পারবে। আইনটি রাঙ্গামাটি, পার্বত্য বান্দরবান ও পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলাসমূহ ব্যতীত সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়। দেশ স্বাধীনের পঞ্চাশ বছর পরেও তিন পার্বত্য জেলায় পারিবারিক আদালত সৃষ্টি হয়নি। ফলে সেখানে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করে দেওয়ানী কার্যবিধি অনুসরণ করা হয়। স্পেশাল ল এর সুযোগ সুবিধা থেকে তিন পার্বত্যবাসী এখনও বঞ্চিত। প্রস্তাবিত খসড়া আইনের ৯ ধারায় মামলার যেকোনো পর্যায়ে আরজি জবাব সংশোধনের বিধান রাখা হয়েছে। পারিবারিক আদালতে মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও রয়েছে। মামলা চলাকালীন যেকোনো অন্তর্বর্তীকালীন আদেশও দিতে পারেন পারিবারিক আদালত। পারিবারিক আদালতের এখতিয়ার- ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের বিধানাবলী সাপেক্ষে পারিবারিক আদালতের পাঁচটি লিখিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বা ঐ বিষয়গুলি হতে উদ্ভুত মামলা গ্রহণ, বিচার এবং নিষ্পত্তি করার ও অন্যান্য এখতিয়ার থাকবে। বিষয়গুলি হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, দেনমোহর, শিশু সন্তানের অভিভাবকত্ব, তত্ত¡াবধান ও খোরপোষ। এ বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত দাম্পত্য অধিকার ও সম্পর্ক থেকে উদ্ভুত কোনো মামলা অন্য কোনো আদালতে বিচারের আওতাভুক্ত হবে। পূর্বে অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইনের (গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস এ্যাক্ট) বিষয়গুলো জেলা জজ নিষ্পত্তি করতেন। বর্তমানে এই বিষয় পারি বারিক আদালতের এখতিয়ারে রয়েছে।পারিবারিক আদালতে মামলা দায়েরের ধারাবাহিক স্তরঃ আর্জি দাখিল- মামলা দায়ের করতে আরজি দাখিলের মাধ্যমে আরজি প্রণয়ন করে আদালতে দাখিল করতে হয়। আরজিতে নিম্ন লিখিত বিষয় সন্নিবেশিত করতে হয়- ০১। যে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা হবে, সেই আদালতের নাম, ০২। বাদীর নাম, বিস্তারিত বর্ণনা ও বাস স্থানের ঠিকানা, ০৩। বিবাদীর নাম, বিস্তারিত বর্ণনা ও বাস স্থানের ঠিকানা, ০৪। যে ক্ষেত্রে বাদী বা বিবাদী নাবালক বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি হয়, সেই ক্ষেত্রে তার পক্ষে অভিভাবকের বিবরণ, ০৫। নালিশের কারণ এবং যে স্থানে ও যে তারিখে আদালতের এখতিয়ার প্রদর্শনকারী তথ্যসমূহ, ০৬। মোকদ্দমার মূল্যমান, ০৭। বাদীর প্রার্থিত প্রতিকার, ০৮। কোর্ট ফি, দেনমোহর ও ভরণপোষণসহ নির্ধারিত ৬০/- টাকা, মামলার প্রসেস ফি ৫/- টাকা, ওকালতনামার জন্য ২৩০/- টাকা, আরজি ১০/- টাকা এবং ডাক মাসুলের জন্য ১৮/- টাকা, মোট ৩২০ টাকা ফি দিয়ে মামলা দায়ের করতে হয়। পারিবারিক আদালতে সকল প্রকার মামলায় ২৩২/- টাকা কোর্ট ফি দিতে হয়। সরকারের আইন মন্ত্রানালয়ের অধীনে লিগ্যাল এইড বা আইনী সহায়তা কমিটিতে আবেদন করলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা আছে। পারিবারিক আদালতের মামলার বিভিন্ন স্তরসমূহ : পারিবারিক মামলায় ধাপসমূহ নিম্নরূপ- ধাপ ১- সেরেস্তাদারের নিকট মামলা দায়ের, ২- মামলা গ্রহণ এবং নাম্বার প্রদান, ৩- সমন ইস্যু, ৪- বিবাদীর উপস্থিতি, ৫- লিখিত বিবৃতি দাখিল, ৬- এডিআর (মেডিয়েশন), ৭- ইস্যু গঠন, ৮- ৩০ ধারায় পদক্ষেপ, ৯- এস ডি, ১০- চ‚ড়ান্ত শুনানী, ১১- অধিকতর শুনানী, ১২- যুক্তিতর্ক, ১৩- রায় প্রচার, ১৪- ডিক্রি প্রস্তুতকরণ, ১৫- জারি মামলা দায়ের। যদি বিবাদী অনুপস্থিত থাকে তাহলে মামলার ধাপও পরিবর্তিত হয়ে – ৪.১- বিবাদীর অনুপস্থিতি, ৫.১ এক তরফা শুনানী, ৬.১ একতরফা সাক্ষ্য গ্রহণ, ৭.১ একতরফা আদেশ, ১৪- ডিক্রি প্রস্তুতকরণ ও ১৫- জারি মামলা দায়ের পর্যায়ে উপনীত হবে। পারিবারিক জারী মামলায় পারিবারিক আদালতের ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতাও আছে। বকেয়া মোহরানা আদায়ে দাঈককে গ্রেফতার সহ সম্পত্তি ক্রোকাদেশ ইত্যাদি জারী করতে পারেন। পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ -এ ২টা ধাপে প্রি ট্রায়াল, পোস্ট ট্রায়াল, এডিআর (মেডিয়েশন) এর মাধ্যমে মাননীয় আদালতের মাধ্যমে আপোষে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। ফলে এডিআর এর মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে বাদী/প্রার্থিকের অধিকার আদায় সহ মামলার চাপ কমে। পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ আইনের একটি সুবিধা হল প্রি ট্রায়াল এবং পোস্ট ট্রায়ালের সুবিধা এর মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি ও অধিকার দ্রæত আদায় হয় বিধায় এই দুইটি ধারা যথাক্রমে ১১ ও ১৩ কে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এর কার্যকারীতা তেমন পরিলক্ষিত হয় না। পারিবারিক আদালত এই ধারার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করলে এতদসংক্রান্ত অন্যান্য মামলা মোকদ্দমার সংখ্যা দ্রæত হ্রাস পাবে। ১২ ধারায় ক্যামেরা ট্রায়াল বা রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচারের সুযোগ রাখা হয়েছে। নতুন আইনের ২৩ ধারার সাক্ষীর জন্য পারিবারিক আদালতে পাওয়ার অব এটর্নী নিয়োগের বিধান রাখা হয়নি। ফলে সংগত কারণে অনেকেই নানা কারণে মামলা চালানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। কেননা স্বামী স্ত্রী উভয়কেই সরাসরি আদালতে হাজির হতে হবে। একতরফা রায় ডিক্রীর বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষের আপিল বা মিস মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে মোহরানা/ খরপোষ এর ৩০% থেকে ৫০% পর্যন্ত দাখিলের শর্ত আরোপিত হলে মামলার বিলম্ব, আধিক্য ও হয়রানি কমে যেতো।গত বছর পারিবারিক আদালত আইন ২০২২, খসড়া প্রণীত হয়েছে। জেনারেল এরশাদের শাসনামলে জারি করা সকল সামরিক আইন ও আদেশকে বাতিল ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা ৩ জুলাই পারিবারিক আদালত আইন, ২০২২ খসড়া অনুমোদন করেন। প্রস্তাবিত আইনে বর্তমান আইনের নামমাত্র পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয় মাত্র, নতুন আইন আপিলের জন্য একটি বৃহত্তর ফোরাম প্রদান করে যাতে জেলা জজের মর্যাদা সম্পন্ন সকল বিচারক এখন পারিবারিক আদালত থেকে উদ্ভূত আপিল নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবেন। এছাড়াও কোর্ট ফিকে ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়। দুর্বলতা: খসড়া আইন পারিবারিক বা পারিবারিক বিষয়গুলোকে সংজ্ঞায়িত করেনা।পারিবারিক আদালত অন্যান্য প্রচলিত বিচারিক ফোরামের মত নয় বরং এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, শিশুদের মঙ্গল এবং পক্ষের আবেগ সম্পর্কিত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কাজ করে। সুতরাং এই আদালতের অবশ্যই ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। যদি সমস্ত পারিবারিক বিষয়ে বিচার করার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি আদালত তৈরি করা হয়, তাহলে বিচার প্রার্থীরা একটি একক আদালত থেকে ন্যায় বিচার পেতে সক্ষম হবে। নতুন আইনে বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে, অর্থাৎ পারিবারিক আদালতের বিচারক হিসেবে সহকারী জজদের নিয়োগ। সহকারী জজরা প্রাথমিকভাবে নতুন আইন স্নাতক এবং তাদের পারিবারিক বিষয়গুলি পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা কম। অতঃপর আরো অভিজ্ঞ বিচারকদের পারিবারিক আদালতে নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। সর্বপরি বৈবাহিক সম্পর্ক হতে উদ্ভূত সকল বিরোধ মামলা মোকদ্দমার নিষ্পত্তির জন্য পারিবারিক আদালতকে ক্ষমতা দিলে হয়রানি ও মামলার আধিক্য কমে যেত। পারিবারিক আদালতকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার উপায় সমূহঃ ১) পর্যাপ্ত আদালত সৃষ্টি ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিচারক নিয়োগ দিয়ে বিদ্যমান সংকট নিরসন করা , ২) সমন জারীর ক্ষেত্রে অধ্যাদেশের ৭ ধারার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ ঈ.চ.ঈ এর আদেশ ৫ বিধি ১৯ এ, ১৯ বি, যথাযথভাবে প্রয়োগ করা। পদাতিক বা ডাক সমন যে কোন একটি জারী হলেই সমন যথাযথভাবে জারী হয়েছে মর্মে গণ্য করা। উভয় সমন মামলা দায়েরের সংগে সংগে বা অনধিক ৩ কার্য দিবসের মধ্যে ইস্যু করতে হবে। বিবাদীর উপস্থিতির তারিখ কোন অবস্থায় এক মাসের অধিক ধার্য হবেনা, ৩) সমন জারী হওয়ার পর বিবাদী (ডরঃযরহ ঞরসব) সময়মত আদালতে হাজির না হলে মামলা দ্রæত একতরফা শুনানীঅন্তে নিষ্পত্তি করতে হবে। আদালতে কর্মচারীদের ম্যানেজ করে লম্বা তারিখ নেয়ার কু-প্রথা বন্ধ করতে হবে, ৪) বিবাদী হাজির হলে জবাব দাখিলের পর চৎব-ঃৎরধষ ঐবধৎরহম এ বিচারক কার্যকরী ভূমিকা পালন করবেন। মেডিয়েশনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া যা বিচারিক ব্যবস্থার জন্য সাফল্য এনে দেবে, ৫) মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় ঐুঢ়বৎ-ঃবপযহরপধষরঃরবং পরিহার করে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করে দ্রæত সময়ে রায় প্রদান করতে হবে, ৬) আপীল নিষ্পত্তিতে জটিল আইনগত বিষয় জড়িত না থাকায় পারিবারিক আপীলগুলো রিমান্ডে প্রেরণ না করে দ্রæত সময়ে নিস্পত্তি করা। পারিবারিক মিস মামলা, জারী মামলা, আপীলকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনে নির্দিষ্ট আপীল নিষ্পত্তির কোর্ট সৃষ্টি করা। পারিবারিক আপীল মামলার ক্ষেত্রে বিবাদী/রেসপন্ডেন্ট হাজির হলে ডিক্রিকৃত টাকার অন্তত ৩০% থেকে ৫০% পরিশোধ করার বিধান থাকা, ৭) পারিবারিক ডিক্রী জারী মামলাগুলো অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। পারিবারিক ডিক্রি জারীর ক্ষেত্রে ঈ.চ.ঈ এর বিধানসমূহ সহজীকরণ করে তা প্রয়োগ পূর্বক দ্রæত নিষ্পত্তি করা, ৮) প্রয়োজনে পারিবারিক আদালতের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারকে কাজে লাগানো, ৯) পারিবারিক আদালতের বিচারকের উপর পারিবারিক মামলা ব্যতিরেকে অন্যকোন মামলা শুনানীর অতিরিক্ত দায়িত্ব না দেয়া, ১০) মোকদ্দমার মূল সাক্ষী বাদী / বিবাদির অনুপস্থিতি অপরাগতায় জবানবন্দী নেওয়ার ক্ষেত্রে পাওয়ার অব এটর্নী নেওয়ার বিধান রাখলে মামলা দ্রæত নিষ্পত্তি হবে। এই বিষয়টি নমনীয় হওয়া উচিৎ। মামলায় পাওয়ার অব এটর্নী মূলে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে প্রার্থিক /বাদী মামলা চালাতে পারবেন না। নইলে বিবাদীর পক্ষের একতরফা বিরুদ্ধে মিস কেস বাড়বে। ১১) কোন অবস্থাতেই মামলার ধার্য তারিখ ৩০ দিনের অধিক না হয়, ১২) পারিবারিক আদালতে দাম্পত্য সম্পর্ক উদ্ভুত সকল সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন আদালতে না করে তা একই আদালতে নিষ্পত্তির বিধান করলে দ্রæত নিষ্পত্তি হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা, পারিবারিক সহিংসতা নিরোধ, যৌতুক নিরোধ, গার্ডিয়ানশীপ মামলাসহ বহু মামলার পাহাড় কমে যাবে এবং জনগণ বিচার ব্যবস্থার প্রকৃত সুফল পাবে। ১৩) তিন পার্বত্য জেলায় পৃথক পারিবারিক আদালত স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা রাখি সংশ্লিষ্ট সকলে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করবেন এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসবেন।
লেখক : আইনবিদ, কলামিস্ট, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী