পারদ নেমে শীত বাড়ছে

8

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্ষপঞ্জিকার হিসাব ধরে পৌষের শুরুতেই তাপমাত্রার পারদ ক্রমান্বয়ে নামতে শুরু করেছে। হিমেল হাওয়ার দাপটে বিস্তীর্ণ জনপদে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশার পাশাপাশি শীতের অনুভ‚তিও বাড়ছে। বিশেষ করে মধ্যরাতের পর থেকে সকাল অব্দি বেশি শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে ঘন কুয়াশায় যানবাহন ও ফেরি চলাচলে বিঘœ ঘটছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিন দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তাপমাত্রার নি¤œমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এতে ঠিক শৈত্যপ্রবাহ ফিরে না এলেও শীতের অনুভূতি বাড়বে। আকাশে মেঘ ও ঘন কুয়াশা পর্যায়ক্রমে বাড়তে পারে। তবে ডিসেম্বরের একদম শেষের দিকে বা নতুন বছরের শুরুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর দিয়ে চলতি শীত মৌসুমের দ্বিতীয় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান পূর্বদেশকে বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আসা মেঘের কারণে দিনের বেলা রোদ খানিকটা কম পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসায় শীতের অনুভূতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বর্তমানে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে একটি শীতল বায়ুর প্রবাহ অবস্থান করছে। এটি আগামী ৩০ ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশের দিকে আসতে পারে। এতে তাপমাত্রা আরও কমে গিয়ে আবারও দেশের কোথাও কোথাও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন এলাকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকাল শুক্রবার সর্ব-উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন আট দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে চলতি মৌসুমে গত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ গ্রামীণ জনপদে হালকা কুয়াশার সাথে বাতাসে হিম হিম ভাবও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছিল। তবে ডিসেম্বরে শুরুতে থাইল্যান্ড থেকে আন্দামান সাগরে নি¤œচাপ হয়ে মধ্য-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অপেক্ষাকৃত দুর্বল ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদের’ প্রভাবে নেমে আসা বৃষ্টি উত্তুরে হিমেল হাওয়া আসার পথে কাঁটা বিছিয়ে দেয়। তাতে শীতের আগমন সামান্য বিলম্বিত হয়েছে। তবে হেমন্তের বিদায়লগ্নে উত্তুরে হিমেল হাওয়ার সাথে কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে প্রকৃতিতে ধরা দিয়েছে শীত ঋতু।
চলতি মৌসুমে গত ১৩ ডিসেম্বর তাপমাত্রার পারদ প্রথমবারের মত সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। ওইদিনের প্রথম ভাগে হিমালয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী জনপদ তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নয় দশমিক নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। অবশ্য দিনশেষে সন্ধ্যা ছ’টার পূর্ববর্তী সময়ে তা দশ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই স্থির হয়। এরপর গত ২০ ডিসেম্বর থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। তখন এক দিনের ব্যবধানে দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমেছে। ফলে দেশের অন্তত দশটি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারিকে (পৌষ ও মাঘ) শীতকাল হিসেবে গণনা করা হয়। এই পুরো সময় দেশের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস বর্ষার শেষ ও শীত শুরুর অন্তর্বর্তীকাল। এ সময় আকাশ বেশি মেঘলা থাকে বলে বাতাসে আর্দ্রতাও বেশি থাকে। সে হিসাবে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হলেও একে ঠিক শীতকাল বলা যাবে না। এ সময় পুরোপুরি শীত না পড়ার আরেকটি কারণ হলো বায়ুপ্রবাহ স্থির না থাকা। অর্থাৎ এ সময়ে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আসে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ইতিপূর্বে চলতি ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক বা দুটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং নতুন বছরের জানুয়ারি মাসে দুই বা তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে; যার মধ্যে অন্তত দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া এবারের শীত মৌসুমের স্থায়িত্ব ও তীব্রতা নিকট অতীতের কয়েক বছরের তুলনায় তীব্র হতে পারে। ডিসেম্বরের শেষার্ধ থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশে শীত থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পূর্ববর্তী পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত সেটাই দেশের শীত মৌসুমের ইতিহাসে রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্য়াুরি সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে দুই দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটাকে ‘মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ’ এবং আট ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে ‘মৃদু শৈত্যপ্রবাহ’ বলেন। আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রার পারদ যদি ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর পেরিয়ে নিচের দিকে নামলে তাকে ‘তীব্র শৈত্যপ্রবাহ’ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।