পাবজি নিয়ে এত হৈ চৈ কেন?

24

পেশাদার ও সৌখিন গেইমারদের মধ্যে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার- এই দু’টি নাম বেশ পরিচিত। এর মধ্যে ‘প্লেয়ার আননোন’স ব্যাটলগ্রাউন্ড’ বা পাবজি’র পরিচিতি ও কদর দু’টিই আছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। বিভিন্ন সময় গেইমটি নিয়ে স্থানীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়োজন করা হয়েছে পেশাদার চ্যাম্পিয়নশিপের।
অন্যদিকে ফ্রি-ফায়ারের জনপ্রিয়তা দেশের মোবাইল গেইমারদের মধ্যে বেশি। তবে কেবল মোবাইল প্ল্যাটফর্ম নির্ভর হওয়ায় এবং তুলনামূলক দুর্বল গ্রাফিক্সের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাইরে এর কদর তুলনামূলক কমই বলা চলে।
সম্প্রতি এক নির্দেশে দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তিন মাসের জন্য গেইম দু’টি বন্ধ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, লাইকি, পাবজির মত গেইম এবং ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ বন্ধের এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে হাইকোর্টের ওই সিদ্ধান্ত।
কী এমন ভিডিও গেইম এগুলো যে, বন্ধ করতে আদালতে যেতে হলো? যেমনটা উঠে এসেছে আদালতে দেওয়া আর্জিতে, আসলেই কি দেশের কিশোর তরুণদের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে? এমন সব প্রশ্ন যেমন কিশোর-তরুণরা করছেন তেমনি কপালে ভাঁজ পড়েছে অভিভাবকদেরও।
পাবজি আদতে কী?
বৈশ্বিক গেইমিং ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে পাবজি আলাদা একটি অধ্যায়ের শুরু করেছে বললে ভুল হবে না। মাল্টিপ্লেয়ার ব্যাটল রয়্যাল গেইম হিসেবে অন্য কোনো গেইমের একাধিক প্ল্যাটফর্মে এর মতো সাফল্যের কোনো নজির আর নেই।
বাজারের আর দশটি ফার্স্ট পার্সন বা থার্ড পার্সন শুটিং গেইমের সঙ্গে এর মূল পার্থক্য হলো, এটি একটি ব্যাটল রয়্যাল গেইম। অর্থাৎ, গেইমের মূল লক্ষ্য হলো অন্য গেইমারদের মেরে শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকা। পাবজি’র একটি অনলাইন গেইমে একসঙ্গে একশ’ গেইমার অংশগ্রহণ করতে পারেন। এদের প্রত্যেকের লক্ষ্যই থাকে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র সংগ্রহ করে প্রতিপক্ষকে মেরে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা। এক্ষেত্রে বাকি ৯৯ জনই থাকেন প্রতিপক্ষের ভূমিকায়।
শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য শুধু সেরা অস্ত্রই যথেষ্ট নয়। রণকৌশল ও উপস্থিত বুদ্ধির ব্যবহার গেইমটির অভিজ্ঞতার একটা বড় অংশ। আর গেইমের ভেতরে বিভিন্ন অস্ত্র এবং সেগুলোর ব্যবহার অনেকাংশে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে আখ্যা দেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। স্ট্রিমারদের কাছেও গেইমটি বেশ জনপ্রিয় বিভিন্ন কারণে। গ্রাফিক্সের কাজ, খেলার আবহাওয়া, পুরো গেইমের ধরণ, এই সবকিছু মিলিয়ে গেইমটি খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে উঠে উত্তেজনাপূর্ণ।
গেইমটির ডেস্কটপ সংস্করণ বাজারে আসে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। পরের বছরেই বাজারে আসে এর অ্যান্ড্রয়েড বা মোবাইল সংস্করণ।
উল্লেখ্য, প্ল্যাটফর্ম ভেদে পাবজির বেশ কয়েকটি সংস্করণ রয়েছে বাজারে। ডেস্কটপ আর কনসোল সংস্করণের জন্য খরচ করতে হয় গাঁটের পয়সা। তবে এর মোবাইল সংস্করণটি গুগল প্লে স্টোরে মেলে বিনা খরচে। পয়সা খরচ করতে রাজি নন কিন্তু ডেস্কটপ গেইমের অভিজ্ঞতা পেতে চান এমন অনেকে আবার মোবাইল সংস্করণটিই ইমিউলেটর দিয়ে পিসিতে খেলেন। আর পেশাদার-অপেশাদার গেইমার মিলিয়ে পাবজির মোবাইল সংস্করণই বেশি নজরে পড়ে বাংলাদেশে।
দেশের আদালতে করা রিট এবং পরবর্তী শুনানি নিয়ে প্রতিবেদনে গেইমদুটিকে ‘ক্ষতিকারক’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যে ভিডিও গেইম ‘বিপজ্জনক’ হতে পারে এমন বিতর্ক যে শুধু বাংলাদেশের আদালতে গড়িয়েছে এমনটা নয়। সহিংসতাপূর্ণ ভিডিও গেইমগুলো কিশোর-তরুণদের উপর কোনো নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে কিনা, সেই বিতর্ক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষক-বিশেষজ্ঞ মহলে চলছে প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। সহিংস ভিডিও গেইম খেলার অভ্যাস থাকলে গেইমাররাও সহিংস ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন কি না, এই প্রশ্নে গবেষকরাও বিভক্ত।
আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের (এপিএ) এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিলো, সহিংস ভিডিও গেইম আর গেইমারদের আগ্রাসী মনোভাবের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন সংস্থাটির গবেষকরা। ঠিক তার পাল্টা দাবিও তুলেছেন দুইশ’র বেশি গবেষক।
২০০৫ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত প্রকাশিত কয়েকশ’ গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এপিএ মতামত দিয়েছিলো- ‘সহিংস ভিডিও গেইমের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ, মনোভাব, সমাজবিরোধী আচরণ এবং সহানুভূতির অভাবের যোগসূত্র পাওয়া গেছে গবেষণা থেকে’। একজন মানুষের সহিংস আচরণের পেছনে অনেকগুলো বিষয় একসঙ্গে কাজ করে এবং সহিংস ভিডিও গেইম তার মধ্যে একটি বলে মন্তব্য করেছিলেন গবেষকরা। খবর বিডিনিউজের