পাবজি ও পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত কিশোরের কান্ড

61

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভিক দে; ১৫ বছর বয়সী এ কিশোর নগরীর বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গ্রামের বাড়ি রাউজান উপজেলার ডাবুয়া হলেও নগরীর চকবাজার থানাধীন ডিসি রোডের গনি কলোনিতে পিতামাতার সাথেই তার বসবাস। পিতা প্রভাস দে চকবাজারে একটি মুদির দোকান করেন। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় অভিক। প্রায় তিন বছর আগে পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া স্মার্টফোনের মাধ্যমে পাবজি গেম, পর্ণোগ্রাফি এবং বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে আসক্ত হয়ে পড়ে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর দুপুরে মোবাইলে ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলছিল। এ সময় তার পিতামাতা তাকে বকাঝকা করে।তারা বলে, লেখাপড়া বাদ দিয়ে গেমস খেলছো কেন, লেখাপড়া বাদ দিয়ে গেমস খেললে তোমার রোজগার তুমি করে খাও। আর এ কথা শুনেই অভিক রাগ করে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর পিতামাতা অভিককে তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে। না পেয়ে গত ১১ ডিসেম্বর চকবাজার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে তার মা কনিকা দে। যা পরবর্তীতে সন্দেহজনকভাবে তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা নেয় চকবাজার থানা পুলিশ।
অতপর দীর্ঘ পাঁচ মাসের চেষ্টায় গত ৬ মে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন নিউ চান্দগাঁও থানা মোড়ে অভিযান চালিয়ে সেই ছেলেকে উদ্ধার করে র‌্যাব। গতকাল শনিবার বিকাল ৫টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-৭ হাটহাজারী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, নিখোঁজ অভিক দে উদ্ধারের পর নানা তথ্য বেরিয়ে আসে। সে তার পরিবারের সাথে রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। যদিও সে তার পরিবারের সদস্যদের কাছেই ছিল। প্রকৃতপক্ষে উদ্ধারকৃত অভিক প্রপাবজি গেম, পর্ণোগ্রাফি এবং বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট আসক্তির জেরে বাবা-মায়ের সাথে অভিমান করে আত্মগোপনে ছিল।
উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ঘটনার দিনেই অভিক চট্টগ্রাম শহরের অলংকার এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয়। সেখানে ১ মাস ২২ দিন চাকরি করার পর পরবর্তীতে চান্দগাঁও নতুন থানার মোড় এলাকার আরেকটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয়। এরমধ্যে কাজের এক পর্যায়ে ওখানকার এক স্টাফের কথায় ক্ষুদ্ধ হয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুনরায় চান্দগাঁও নতুন থানার মোড়ে নিউ চান্দগাঁও রেস্ট হাউজে চাকরি নিয়ে উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত ঐ চাকরিতে কর্মরত ছিল। চাকরিতে সে নিজেকে নয়ন দে নামে পরিচয় দেয়।
র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, অভিক তাদের জানায় সে প্রাপ্ত বয়স্কদের একটা গ্রæপের সাথে চলাফেরা করত। এই গ্রুপে অভিক দে অপহরণ মামলার তিন আসামি হান্নান, লিও দাস ও জয়ের নাম রয়েছে। হান্নান ইউরোপের পোল্যান্ডে থাকে এবং জয় থাকে কাতারে। বিশেষ করে তারা যখন দেশে ছূটিতে থাকে তখন এ উশৃঙ্খল ও বিকৃত রুচির গ্রæপের কার্যক্রম বেড়ে যায়। নিখোঁজের সময় হান্নান ও জয় ছুটিতে ছিল। এ গ্রূপের সদস্যরা পরস্পর এডাল্ট ভিডিও শেয়ার করত ও ইন্টারনেট পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত ছিল। পাবজি খেলার পাশাপাশি অভিক এসবে আসক্ত হয়ে পড়ে।
তিনি আরও জানান, সে গোপনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক একাউন্ট চালাত ও বেনামি ৫/৬টি সিম ব্যবহার করত। পড়াশুনা প্রায় ছেড়ে দিয়ে সে সারাদিন এসব নিয়ে পড়ে থাকত বলে পিতামাতা কড়া শাসন শুরু করলে সে তার গ্রুপের অন্যান্য এডাল্টদের মত স্বাধীনতার খোঁজে বাড়ি হতে বের হয়ে যায়। তার হদিস কেউ যেন না পায় এজন্য সে তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও রেখে যায়। কিন্তু পরে নয়ন দে নামে ফেসবুক একাউন্ট খোলে। আত্মগোপণ থাকাকালীন সে নিজেকে এই নামে পরিচয় দেয় এবং বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করত।