পানির দামে চামড়া কিনেও শঙ্কায় আড়তদাররা

20

এম এ হোসাইন

পানির দামে চামড়া কেনার পরও শঙ্কার মধ্যে আছেন কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা। এবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও নগরের কোরবানি দেয়া পশুর দুই লাখ চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ সম্ভব হয়েছে। দাম কম হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে চামড়া মাটি চাপা দেয়ার খবরও রয়েছে। সংগ্রহ করা চামড়া লবণজাতকরণ করে সংরক্ষণ করা হলেও সেগুলো বিক্রি নিয়ে নতুন শঙ্কায় আছেন আড়তদাররা।
এবার ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ৩ লাখ। এর মধ্যে মাত্র দুই লাখ চামড়া সংগ্রহ করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেছেন। অনেকে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করে রেখেছেন পরে বিক্রির আশায়। বাজারে প্রতিটি চামড়া দেড়শ থেকে সর্বোচ্চ চারশ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপরও আড়াই লাখের কম চামড়া সংগ্রহ হয়েছে বলে জানান আড়তদাররা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, আড়তে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও কিছু চামড়া আসতে পারে। অনেকে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করে রেখেছেন। আড়তে পাঠাননি। বিভিন্ন উপজেলা থেকে এখনও চামড়া আসছে। দুয়েকদিন পর ঢাকার ট্যানারিগুলোতে চামড়া পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এবার গতবছরের তুলনায় বাড়িয়ে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে সরকার। লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে। যা গতবছর ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল। এছাড়া লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবছর খাসির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। তবে গতবছরের তুলনায় সরকার দাম বৃদ্ধি করলেও মাঠ পর্যায়ে আরো কম দামে বিক্রি হয়েছে চামড়া। দেড়শ থেকে দুইশ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে প্রতিটি গরুর চামড়া। সংগ্রহ করা চামড়ার ন্যায্য দাম পাননি বলে জানান মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। অবশ্য তদারকি থাকায় এবার রাস্তায় চামড়া ফেলে কেউ চলে যাননি।
মৌসুমি ব্যবসায়ী ফজলুল করিম বলেন, পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। বড় সাইজের চামড়া ২০০ টাকা এবং মাঝারি সাইজের চামড়া ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। প্রতিটি চামড়া তিনশ টাকার উপরে কেনা পড়েছে। চামড়াগুলো রেখে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হয়েছে।
আড়তদার মোহাম্মদ আলী বলেন, গত তিন বছর ধরে চামড়া ব্যবসায় মন্দাভাব যাচ্ছে। অন্যান্য ব্যবসায় মন্দাভাব কাটিয়ে উঠার চিত্র দেখা গেলেও চামড়া শিল্পের সংকট যেন কাটছেই না। বিগত কয়েকবছর ধরেই কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরাও ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা পাই বলে অনেকটা আর্থিক সংকটে রয়েছি। পাশাপাশি এবার যেসব চামড়া সংগ্রহ করেছি ঢাকার ট্যানারি মালিকরা যদি তার ন্যায্য দাম না দেন তাহলে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে ।
১৯৪৮ সাল থেকে চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবসার বিকাশ ঘটে। লাভের মুখ দেখায় দেড় ডজনের মতো ট্যানারি গড়ে উঠে চট্টগ্রামে। তবে ক্রমান্বয়ে লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধ হয়ে যায় প্রায় সব প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ মদিনা ট্যানারি ও অপরটি রিফ লেদার ট্যানারি চালু ছিল। কিন্তু বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) না থাকায় পাঁচ বছর আগে সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দেয় মদিনা ট্যানারি। তবে সংকটকালীন সময়েও লড়াই করে টিকে আছে রিফ লেদার। অবশ্য চট্টগ্রামে কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির অধীনে ১১২ জন সদস্য আছেন। তাছাড়া আরো শতাধিক আড়তদার চামড়া ব্যবসায় জড়িত আছেন। মূলত ঢাকার ট্যানারিগুলোর উপর ভরসা করেই এসব আড়তদার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।