পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘বিবর্তনবাদ’ পাঠ বাতিল করুন

88

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ২০১৩ সালে শিক্ষার আধুনিকায়নের নামে নবম-দশম শ্রেণি থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে ‘ডারউইনের বিবর্তনবাদ’ শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সাল পর্যন্ত একই বইসমূহে ‘বিবর্তনবাদ’ পাঠ ছিল না। এই শিক্ষার মাধ্যমে ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের কোমলমতি লক্ষ লক্ষ মুসলিম শিক্ষার্থীর মননে মহান আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাসকে ঘোরতর সন্দিহান করে নাস্তিক্যবাদকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর একান্ত সহকারী ইন’আমুল হাসান ফারুকীর পাঠানো এক বিবৃতিতে বাবুনগরী সরকারের প্রতি অবিলম্বে ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস ও জাতি বিনাশী এ শিক্ষা বাতিল ও নিষিদ্ধের দাবি জানান। এছাড়া ‘বিবর্তনবাদ’ অন্তর্ভুক্তির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকান্ড থেকে তাদেরকে দূরে রাখার কথাও বলেন তিনি।
‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষা চলতে থাকলে আগামী কয়েক প্রজন্ম পর সকলের অগোচরেই এই দেশ নাস্তিক অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরিণত হবে দাবি করে বিবৃতিতে বলেন, নামে মুসলমান থাকলেও চিন্তা চেতনায় সকলে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণা ও ভোগবাদে ডুবে থাকবে। আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম নিয়ে কট‚ক্তি বাড়তে থাকবে। আলেম-উলামা, ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মভীরু মানুষকে বাধা ও বিরক্তিকর ভাবতে শুরু করবে। ধর্মীয় বিয়ে মানবে না। বিয়ের নানাবিধ দায়বদ্ধতা ছাড়াই লিভ টুগেদার ও অবাধ যৌনতার প্রতি আগ্রহী হবে। মদ, জুয়ার বিধিনিষেধ মানবে না। সমকামিতার বৈধতা দেওয়ার জন্য আন্দোলনে নামবে।
বাবুনগরী বলেন, বিবর্তনবাদ মতে, সৃষ্টিকর্তার ধারণা ভিত্তিহীন। তাই বিবর্তনবাদ সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করে না। পৃথিবীর প্রচলিত কোন ধর্মকেই স্বীকার করে না। এই বিবর্তনবাদের পাঠ দিতে গিয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে বাংলাদেশের মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়ানো হচ্ছে-‘ধর্ম মানুষের চিন্তা-চেতনার ফসল’ হিসেবে।
নবম-দশম শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত বিবর্তন পাঠের বিষয়গুলো যেকোন অভিভাবক দেখলে সহজেই বুঝতে পারবেন, তার সন্তানকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা সস্তা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝানো হচ্ছে যে, পৃথিবীর সবকিছুই প্রাকৃতিক থেকে সৃষ্টি হয়ে বিবর্তনের মাধ্যমেই বর্তমান অবস্থায় এসেছে। মানুষ ও বানরের আদি পিতা একই ছিল। হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) এসব কিছু না। সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মের ধারণা অশিক্ষিত কর্তৃত্বপরায়ণশীল মানুষের তৈরি। বিজ্ঞানের বিবর্তনের এই আবিষ্কার কেউ খÐাতে পারবে না। ৯৯ পার্সেন্ট বিজ্ঞানী বিবর্তনবাদকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, দেশের সংবিধানে নাগরিকের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল-স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালন, ধর্মীয় শিক্ষার্জন, ধর্মীয় বিশ্বাস তথা ঈমান-আক্বিদা ধারণ সকলের নাগরিক অধিকার। সুতরাং ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যে কোন হুমকি ও আগ্রাসী তৎপরতা থেকে রক্ষা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ইসলামী আকিদা-বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিরোধী বিবর্তনবাদ শিক্ষা দেওয়া সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় অধিকার রক্ষার বিধানের গুরুতর লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, সংবিধান মতে যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল-প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় বিশ্বাসের চেতনাবোধের চর্চাকে নিরাপদ রাখা, সেখানে পাঠ্যবইয়ে ৯২% ছাত্র-ছাত্রীকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরোধী বিষয় পড়তে শিক্ষাবোর্ড কী করে বাধ্য করার সুযোগ পেল-জাতিকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। একজন মুসলমানকে মানব জাতির উদ্ভব মা হাওয়া ও বাবা আদম (আ.) থেকে উৎপত্তি আবশ্যিকভাবে এই বিশ্বাস ধারণ করতে হয়। তাহলে পাঠ্যবইয়ে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মানবজাতি ও বানরের পূর্বপুরুষ একই ছিল- এমন ঈমান-আক্বিদা বিরোধী শিক্ষা দেওয়ার অধিকার সংবিধানিকভাবে শিক্ষাবোর্ডের আছে কিনা-আমরা এই ব্যাখ্যাও জানতে চাই।
হেফাজত মহাসচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া প্রকৃত শিক্ষা হয় না, এমন প্রশংসনীয় বক্তব্যও বার বার দিয়েছেন। আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি তাঁর আন্তরিকতার উল্লেখ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের আরো মন্ত্রীরা ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারাও একই দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এসব বক্তব্যের বিপরীতে জাতীয় শিক্ষায় ঈমান-আক্বীদাবিরোধী ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছি না। যেখানে আধুনিক বিজ্ঞানে বাতিল করার কারণে এই বিবর্তনের পাঠ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, কোরিয়া, রুমানিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে এই বাতিল পাঠ নতুনভাবে সংযোজন হয় কি করে?