পাঠকের কথা

12

কোচিং সেন্টারের নামে
আড্ডাবাজি, দোষ কার ?

নেছার আহমেদ খান

যেসব ছেলেরা কোচিং সেন্টার এর নাম দিয়ে বাইরে আড্ডা দেয় আর ঘরে গিয়ে বলে আমি কোচিং থেকে এসেছি। আমার দেখা এই সব জায়গায় গিয়ে অভিভাবকরা একটু সরজমিনে ঘুরে আসুন একবার। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর চকবাজারের গোলজার টাওয়ার, মতি টাওয়ার এবং কেয়ারি, সাদিয়া রেস্তোরাঁর সামনে দেখা যায় উঠতি বয়সের ছেলেরা দলবেঁধে আড্ডা দিতে। অথচ এরা কোন না কোন মা বাবারই সন্তান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এরা কেমন মা বাবার সন্তান? বিকেল থেকে রাত অব্দি, যাদের সন্তানেরা বাইরে থাকে। আর সে-ই সন্তানের মা বাবাদের খবর থাকেনা তাঁদের সুযোগ্য সন্তানেরা কোথায় যায়? কোথায় থাকে? কোন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় ? আমাদের সময় মা বাবার ভয়ে সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরতে হত। এখন ছেলেরা সন্ধ্যার পর বাইরে থাকে। আমি অনেক কোটিপতি ছেলে দেখেছি ১৬/১৮ বছরের সন্তান নিজে গাড়ি ড্রাইভিং করে বন্ধুদের কে নিয়ে বড় বড় রেস্তােরাঁয় আড্ডা দিচ্ছে। মা বাবাতো কিছুই জানে না। একটি কোমলমতি ১৬/১৮ বছরের ছেলে সন্ধ্যার পর বাহিরে থাকবে। এই জন্য কি স্কুলে শিক্ষক দায়ী হতে পারে? সন্তানকে যদি সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার মন মানসিকতাটাই নিজের বিবেকের মধ্যে না থাকে, তাহলে সন্তান জন্ম দেওয়ার মানেটা কি? অথচ এই আড্ডা থেকেই শুরু হয় কথা কাটাকাটি। আর সেই কথা কাটাকাটি থেকে শুরু হয় হাতাহাতি। আর সে-ই হাতাহাতি থেকেই হয়ে যায় অনাকাক্সিক্ষত খুনোখুনি আর এভাবেই অকালে ঝড়ে পড়ে অনেক তাজা তরুণের জীবন।
আপনার সন্তান কে পরিবেশ গত ভাবে আপনার আদর্শ ও ভালোবাসা দিয়ে জীবন গড়ে তুলুন।
আমাদের সকলে একবার ভেবে দেখা উচিত দোষ কি সন্তানের?
নাকি আমাদের মা-বাবার? না শিক্ষকের?

 

 

নগরীর সৌন্দর্যে আঘাতকারী পোস্টার সন্ত্রাসীদের রুখবে কে?

হাজী আবদুর রহিম

কর্ণফুলীর তীরে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা ¯্রষ্টার এক অপূর্ব নয়নাভিরাম সৌন্দর্যময় প্রাচ্যের রাণীখ্যাত বাংলাদেশের বাণিজ্যিক নগরী ও পর্যটন অঞ্চল বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। প্রকৃতি যাকে অকৃপণ হস্তে রূপসী নারীর মত গড়ে তুলেছেন। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশির উদ্দাম নৃত্য দেখতে প্রতিদিন এই শহরে আগমন করে দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটক আর সওদাগররা ( ব্যবসায়ী)। কিন্তু ¯্রষ্টা প্রদত্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই নগরী আজ কিছু পোস্টার – ব্যানার সন্ত্রাসীদের কালো থাবায় শ্রীহীন হয়ে পোস্টারের নগরীতে পরিণত হয়েছে।নগরীর প্রধান সড়ক থেকে অলি -গলি, স্কুল – কলেজ – মাদ্রাসা, মসজিদের দেওয়াল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মানুষের ব্যক্তিগত ভবন এমনকি সবুজ বৃক্ষগুলোও পোস্টার সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পাত্র – পাত্রীর খোঁজ, কবিরাজের ঔষধ, চাকুরী, কোচিং সেন্টার, নব্য নেতা – পাতিনেতাদের ছবিসহ কি নেই এইসব পোস্টারে। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও কোন সভ্য নাগরিকরা মনে হয় এই ভাবে পোস্টার – ব্যানারের মাধ্যমে হামলা করে তাদের প্রিয় নগরীর সৌন্দর্য হানি করে ‘দৃশ্য দূষণ’ করে না।
ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। প্রচার- প্রচারণার জন্য আছে প্রিন্ট পত্রিকা, পত্রিকার অনলাইন ভার্সন, অসংখ্য টিভি চ্যানেল, ইউটিউব চ্যানেল, অনলাইন টিভি এবং ফেইসবুকসহ অসংখ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পোস্টার – ব্যানারে নিজের নগরীর সৌন্দর্য হানি না করে আমরা এইসব আধুনিক প্রযুক্তির গণমাধ্যম ব্যবহার করতে পারি প্রচার- প্রচারণায় পোস্টার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নগরীর সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে চসিকসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার পাশাপাশি প্রশাসনকে পোস্টার ও দেওয়াল লিখন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর অপরাধ ও দÐ বিষয় আইনের ধারা ৩ ও ৪ এর বিধান মতে, কেউ উক্ত ধারা লঙ্ঘন করে পোস্টার লাগালে ওই ব্যক্তির নিম্নে ৫ হাজার টাকা, ঊর্ধ্বে ১০ হাজার টাকা অনাদায়ে ১৫ দিন বিনাশ্রম কারাদÐের এই আইনের কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তবেই পোস্টার সন্ত্রাসীদের কালো থাবা থেকে প্রিয় নগরীর সৌন্দর্যকে রক্ষা করা সম্ভব।
পরিশেষে প্রিয় নগরবাসীর কাছে অনুরোধ আসুন, সবুজ পাহাড়ে ঘেরা প্রাচ্যের সৌন্দর্যের রাণী প্রিয় ‘চট্টগ্রাম শহর’কে পোস্টার – ব্যানারমুক্ত করে সুন্দর ও সুশ্রী নগর গঠনে আমরা সকলে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি।

 

অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

মোহাম্মদ ওয়াহিদ মিরাজ

অন্যান্য বারের তুলনায় আমাদের দেশে এবার অতিরিক্ত শীত পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতি বছরেই আমাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও অসহায় গরীব শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়, যা কয়েকটি মানবিক কাজের মধ্যে অন্যতম। তবে সচেতন সংগঠন বা মহৎ ব্যক্তিগণ ইতোমধ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে এমন ভালো কাজ শুরু করলেও অনেকেই “দিব, দিচ্ছি” করে করে শীতকাল প্রায় যায় যায় অবস্থাও শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। শীতের মৌসুমে ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি শীত আসার আগেই এমন অসহায় মানুষের পাশে সহায়তার বস্ত্র নিয়ে দাঁড়াতে পারলে তারা আরো বেশি উপকৃত হবে তথা শীতের প্রকোপ থেকে আরো বেশি রক্ষা পাবে মর্মে প্রতীয়মান হয়। প্রচারেই প্রসার” এমন মনমানসিকতা সম্পন্ন মানুষকে সাধারণত প্রচার মাধ্যম তথা জনগণকে দেখানোর জন্য এমন নিম্নমানের শীতবস্ত্রও বিতরণ করতে দেখা যায় যে, তাদের দেয়া কাপড় এক সঙ্গে কয়েকটি গায়ে জড়ালেও প্রচÐ শীত অনুভূত হয় তথা ঠাÐা শরীরেই আলিঙ্গন করে থাকে। তবে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, সৃষ্টিকর্তা অন্তর্যামী বিধায় বাহ্যিকতা নয়, মনের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে পুরস্কার দেন বা দিবেন। শীত নিবারণের বস্ত্রের অভাবে জ্বলন্ত চুল্লি বা খোলা জায়গায় খঁড়কুটো জ্বালিয়ে শরীরে তাপ নেয়ার সময়ে আমাদের দেশে মাঝে মধ্যেই ভয়াবহ অগ্নিকাÐের সূত্রপাতও হয়। এর ফলে ব্যক্তির পাশাপাশি দেশেরও প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়। অগণিত লোক নিহত হওয়ার পাশপাশি অনেকে আবার পঙ্গুত্ব বরণ করে আমরণ আত্মীয় স্বজনের বোঝা হয়ে অপরিসীম কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকে। এছাড়া অভিজ্ঞ চিকিৎসক মহল মনে করেন যে, অতিরিক্ত ঠাÐার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিরও উৎপত্তি হয়।
মধ্যবিত্ত ব্যক্তিগণ চক্ষুলজ্জার কারণে জনসন্মুখে লাইন ধরে এসব বস্ত্র বা অনুদান গ্রহণ করা হতে বিরত থাকতে দেখা যায় ফলে তাদেরকে শীতের যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। কাজেই সৎ মানসিকতা সম্পন্ন দানবীর ব্যক্তিগণ কর্তৃক সর্বাগ্রে এমন মধ্যবিত্ত মানুষদের মাঝে গোপনে সহায়তার হাত প্রসারিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে, বস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ সার্থক হবে মর্মে আমি মনে করি। আবার এমন দানের কাপড় বিশেষ করে ফুটপাতে বসবাসকারী অনেককে বিক্রয় করতেও দেখা যায়। তাই সতর্কতার সঙ্গে বিতরণের কাজ করা হলে প্রকৃত অসহায়গণ লাভবান হবে, অসৎ ব্যক্তিদের ব্যবসা কিছুটা হলেও বন্ধ হবে। প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থেই সামর্থবানদের অর্থে অসহায়দের দাবি রয়েছে মর্মে উল্লেখ রয়েছে।
তাই সৃষ্টিকর্তার আদেশ পুরোপুরি পালন করা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য। এমন মানুষদের কষ্ট দেখে নিজে আর্থিকভাবে অক্ষম অনেক ব্যক্তি নিজের অতিরিক্ত কাপড় বিতরণ করেন। আবার কাপড় বিতরণের নামে চাঁদা বা অনুদান তুলে তা থেকে কিছু হাতিয়ে নেয়ার মতো ভুঁইফোড় সংগঠন বা ভুয়া ব্যক্তির অস্তিত্বও আমাদের দেশে রয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে আমাদের পুরোপুরি সচেতনতাই সমাজের অসহায় মানুষদের মাঝে অনুদান বিতরণের উদ্যোগ সফল করবে।