পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানের বোমাবর্ষণ

96

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার জবাবে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে ১২টি মিরাজ জঙ্গি বিমান জইশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা ও হিজবুল মুজাহিদিনের অবস্থান লক্ষ্য করে ১০০০ কেজি বোমাবর্ষণ করে। পুলওয়ামা হামলার দায় স্বীকার করা এই জঙ্গিগোষ্ঠীটি আরও হামলার ছক কষছিল বলে অভিযোগ ভারত সরকারের। নয়াদিল্লি বলছে, বালাকোটে চালানো বিমান হামলায় ‘প্রায় ৩০০ সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে বলেছেন, বালাকোটে জইশ-ই-মোহাম্মদের সবচেয়ে বড় শিবিরে হামলা চালিয়েছে ভারত। এতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনারত বহু সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষক, জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ও জিহাদি গোষ্ঠী ধ্বংস হয়েছে। এই হামলাকে ‘প্রতিরোধমূলক অসামরিক পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।
দেশের বিভিন্ন অংশে আরও আত্মঘাতী হামলার ছক কষছে জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং এই উদ্দেশ্যে আত্মঘাতী জিহাদিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সূত্রে এমন খবর পেয়েছিলাম আমরা।
জইশ-ই-মোহাম্মদ ও অন্যান্যরা বিশাল সন্ত্রাসী শিবির পরিচালনা করে যেগুলোতে যেকোনো সময় কয়েকশ জিহাদিকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে তারা, বহুবার এমন প্রমাণ দিয়ে পদক্ষেপ নিতে বলছিল ভারত। কিন্তু পাকিস্তান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল এবং তাই নেওয়া হয়েছে, বলেছেন তিনি।
হামলা ‘পুরোপুরি পরিকল্পনামতো’ চালানো হয়েছে এবং ‘শতভাগ সফল হয়েছে’ বলে ভারতীয় গণামধ্যমকে জানিয়েছে কয়েকটি সূত্র। খবর বিডিনিউজের
নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) অপর পাশে ১৯ মিনিটের অভিযানে লেজারনিয়ন্ত্রিত বোমা নিক্ষেপ করে ‘সন্ত্রাসীদের লঞ্চ প্যাড’ ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে কয়েকটি সূত্র বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।
নয়া দিল্লি সরকারের শীর্ষ সূত্রগুলো জানিয়েছে, বালাকোটে চালানো এ বিমান হামলায় ‘প্রায় ৩০০ সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে পাকিস্তান বলেছে, এই আক্রমণে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর পাল্টা এ হামলা চালালো ভারত।
পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ গত ১৪ ফেব্রæয়ারি পুলওয়ামার ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে ।
মঙ্গলবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বলেছে, বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলে ভারতীয় সামরিক বিমান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার পর পাকিস্তানি জঙ্গি বিমানের ‘তাড়া খেয়ে পালানোর’ আগে বালাকোটের কাছে ‘বোমা ফেলে’ গেছে, কিন্তু তাতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর এক টুইটে বলেছেন, মুজাফরাবাদ সেক্টর দিয়ে ভারতীয় বিমানগুলো অনুপ্রবেশ করেছিল
মুজাফরাবাদ এলাকাটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অংশ এবং বালাকোট শহরটি কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে অবস্থিত।
বালাকোটের ওই জঙ্গি ঘাঁটিটির অবস্থান ঘন বনের ভিতরে পাহাড়ের ওপরে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। বেসামরিক এলাকাগুলো থেকে এই ঘাঁটিটি অনেক দূরে এবং হামলার সময় সেখানে কোনো বেসামরিক উপস্থিতি ছিল না বলে গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যেরভিত্তিতে দাবি করেছে ভারত সরকার।
ঘাঁটিটিতে হামলা চালাতে ভারতীয় জঙ্গিবিমানগুলো মাত্র দেড় মিনিট সময় ব্যয় করেছে বল্ েজানিয়েছে কয়েকটি সূত্র।
পাকিস্তানে এটি জইশের বৃহত্তম শিবির এবং জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের শ্যালক ইউসুফ আজহার এটি পরিচালনা করতেন বলে খবর।
১৯৭১ সালের পর এই প্রথম ভারতীয় বিমান বাহিনীর জঙ্গিবিমানগুলো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করলো বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
ভারতের বিমান ধাওয়ায় পালিয়েছে : পাকিস্তান
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে ভারতীয় বিমান বাহিনী বালাকোটের ‘জঙ্গি ঘাঁটিতে’ তুমুল হামলা চালিয়েছে বলে নয়াদিল্লি যে দাবি করেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ। হামলায় ‘ক্ষয়ক্ষতি ও প্রচুর প্রাণহানির’ খবরকেও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা।
গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডাকে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠক শেষে দেওয়া বিবৃতিতে এসব জানানো হয়।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রমের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হওয়া এ বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল জাফর মাহমুদ আব্বাসি, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনোয়ার খানসহ উর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বালাকোটের কাছে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে হামলার যে দাবি ভারত করছে, তা কড়াভাবে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। একইসঙ্গে যে ক্ষয়ক্ষতির দাবি করছে তাও প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে, বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে এনএনসি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ফায়দা নিতেই ভারত সরকার এ হামলা চালিয়েছে বলেও ভাষ্য তাদের।
আবারও একবার ভারত সরকার তাদের নিজেদের পরিবেশিত বেপরোয়া ও কল্পিত দাবি নিয়ে হাজির হয়েছে। এটা করা হয়েছে দেশের ভেতরকার নির্বাচনী পরিবেশ থেকে ফায়দা নিতে; আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ফেলা হয়েছে ভয়াবহ বিপদে, বলা হয় বিবৃতিতে।
ভারতের চালানো হামলাস্থলটি সাংবাদিকদের দেখানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে এ পাক নিরাপত্তা কমিটি।
কী হয়েছে তা দেখার জন্য হামলাস্থল সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকেও সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ভারতের এ আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া পাকিস্তান সময়মত দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে এনএসসি। খবর বিডিনিউজের
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল জাফর মাহমুদ আব্বাসি, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনোয়ার খানসহ উর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা এনএসসির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশী ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাবেক সচিব ও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে কোরেশী বলেছেন, পাকিস্তান শান্তি চাইলেও ভারত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামাবাদ দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েই এগিয়ে যাবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেছেন বলেও জানিয়েছে রেডিও পাকিস্তান।