পাকিস্তানকে এড়িয়ে যেভাবে সৌদি-ভারত ঘনিষ্ঠতা!

7

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার রাতে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত থেকে তার তুরস্কে যাওয়ার কথা ছিল। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তুর্কি সফর বাতিল করেন মোদি। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, কাশ্মির ইস্যুতে সৌদি আরবের অবস্থান তাহলে কী? চিরাচরিত বন্ধু পাকিস্তানের বদলে রিয়াদ কী তাহলে ভারতকেই সমর্থন দিচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তর মেলা কঠিন হলেও সা¤প্রতিক বছরগুলোতে যে পাকিস্তানকে এড়িয়ে সৌদি-ভারত ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে; এ নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।
মোদি-র এবারের সৌদি সফরে দুই দেশের মধ্যে অন্তত ডজনখানেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ইন্ডিয়া-সৌদি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিল গঠন। এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রিয়াদ। এই ভিশন-২০৩০-এর অংশ হিসেবে বিশ্বের আটটি দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরব। এই তালিকায় ভারতের নামও রয়েছে।
২০১৮ সালে সৌদি আকাশসীমা ব্যবহার করে ভারত-ইসরায়েল ফ্লাইট চলাচলে রিয়াদের অনুমতি দেওয়ার খবর সামনে আসে। অথচ কিছুদিন আগেও ইসরায়েল অভিমুখী কোনও ফ্লাইটের সৌদি ভূখÐ ব্যবহার ছিল অকল্পনীয় ঘটনা। এবারের জাতিসংঘ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ কাশ্মির ইস্যুতে সরব হলেও এ ব্যাপারে রিয়াদের দিক থেকে কোনও আওয়াজ আসেনি। অথচ নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে চিরাচরিতভাবেই পাকিস্তান সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তা সত্তে¡ও তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে কিভাবে সৌদি আরবের এমন ঘনিষ্ঠতা তৈরি হলো?
বহু বছর ধরে সৌদি আরবের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা মূলত তেলের কারণে। কারণ ভারত যে ক্রুড বা অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে তার প্রায় ২০ শতাংশই আসে সৌদি আরব থেকে। সৌদিতে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশি। তারা প্রতি বছর ভারতে ১১শ’ কোটি ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৯৩ হাজার ১৩৮ কোটি টাকারও বেশি। তবে সৌদিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আউসাফ সাঈদ জানান, সা¤প্রতিককালে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটা গুণগত উত্তরণ ঘটেছে। তার ভাষায়, ‘গত এক দশকে, বিশেষত শেষ চার-পাঁচ বছরে দুই দেশই স্থির করেছে যে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে এই সম্পর্ককে একটা কৌশলগত মাত্রা দিতে হবে। আর এর মধ্যে শুধু তেল নয়, নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা থেকে শুরু করে বিনিয়োগ, কৃষি সব কিছুই থাকবে।’