পাকিস্তানকে উড়িয়ে উইন্ডিজের শুভসূচনা

37

‘আনপ্রেডিক্টেবল’ শব্দটির সাথে পাকিস্তানের সখ্যতা বহু পুরানো। বিশাল টার্গেট তাড়া করে অনায়াস জয় আবার মাত্র ৪৩ রানে অলআউটসহ জেতা ম্যাচ হাস্যকরভাবে হারার রেকর্ডও পাকিস্তানের অনেক। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তারা এতটা আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে উঠবে, তা বোধ হয় ভাবেননি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সমালোচকও। মাত্র ১০৫ রানে অলআউট! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লজ্জার পরাজয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে সরফরাজ আহমেদের দল। টেন্ট ব্রিজে গতকাল (শুক্রবার) ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পাত্তাই পায়নি পাকিস্তান। ম্যাচটি তারা হেরেছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ২১৮ বল হাতে রেখে মাত্র ১৩.৪ ওভারেই জিতেছে ক্যারিবীয়রা। এ নিয়ে টানা ১১ ওয়ানডেতে হারের লজ্জা দেখলেন সরফরাজরা।
টস ভাগ্যও সহায় ছিল না পাক বাহিনীর। মুদ্রা নিক্ষেপে হেরে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবীয় বোলারদের তোপে ২১.৪ ওভারেই মাত্র ১০৫ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।
শুরু থেকেই যাচ্ছেতাই অবস্থা ছিল তাদের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে শেলডন কট্রেলের শিকার (কট বিহাইন্ড) হয়ে ফেরেন ইমাম উল হক (২)। দুই ওভার পর আন্দ্রে রাসেলের বাউন্সারে নাকাল ফখর জামান।
ফখর অবশ্য আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলছিলেন। ১৬ বলে ২ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ২২ রান করা এই ব্যাটসম্যানের হেলমেটে বল লেগে সেটা পড়ে স্ট্যাম্পের উপর।
রাসেলের ১৪৫ কিলোমিটার গতির বলটি হারিস সোহেলের ব্যাটে ছোঁয়া লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক শাই হোপের হাতে, ১১ বলে ৮ রান করে হারিস।
বাবর আজম একটা প্রান্ত ধরে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তারও শেষ রক্ষা হয়নি। থমাসের অফ সাইডে বেরিয়ে যাওয়া একটি বলে ড্রাইভ করে উইকেটের পেছনে হোপের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হয়েছেন ৩৩ বলে ২২ রান করা এই ব্যাটসম্যান।
এরপরের কাজটা সেরেছেন জেসন হোল্ডার। ১৭তম ওভারে এসে সরফরাজ আহমেদ (৮) আর ইমাদ ওয়াসিমকে (১) ফিরিয়ে পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নটাও ভেঙে দেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক।
এরপর পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের লেজটা মুড়ে দিতে আর সময় লাগেনি হোল্ডার-থমাসদের। ২০তম ওভারে এসে শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ ২৪ বলে ১৬ রান করে থমাসের শিকার হন।
দশম উইকেটে মোহাম্মদ আমিরকে নিয়ে ওয়াহাব রিয়াজ ১৩ বলে গড়েন ২২ রানের জুটি। তাতেই কোনোমতে একশ’র ঘর পেরোয় সরফরাজের দল। ১১ বলে ১টি চার আর ২টি ছক্কায় ১৮ রান করা ওয়াহাবকে বোল্ড করে পাকিস্তানের ইনিংসের যবনিকা টেনে দেন থমাস। মোহাম্মদ আমির ৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওশানে থমাস ৫.৪ ওভারে ২৭ রানের বিনিময়ে তুলে নেন চারটি উইকেট। দলপতি হোল্ডার ৫ ওভারে ৪২ রানে তুলে নেন তিনটি উইকেট। আন্দ্রে রাসেল ৩ ওভারে ৪ রান খরচায় পান দুটি উইকেট। একটি উইকেট নেন ৪ ওভারে ১৮ রান খরচ করা শেলডন কট্রেল।
লক্ষ্য মাত্র ১০৬ রানের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় আসলে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল এক ইনিংস শেষ হতেই। ছোট লক্ষ্য পেরোতে খুব বেশি সময় নষ্ট করেনি জেসন হোল্ডারের দল। ওপেনিংয়ে নেমে মাত্র ৩৪ বলে ৫০ রানের ঝড় তুলে আউট হন জায়ান্ট ক্রিস গেইল। ক্যারিবীয় ওপেনারকে ফেরান আমির। তার আগে শাই হোপ (১১) আর ড্যারেন ব্রাভোকেও (০) সাজঘরের পথ দেখান এই পেসারই। ১৩.৪ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছার সময় শিমরন হেটমেয়ার ৭ ও নিকোলাস পুরান ১৯ বলে চারটি চার আর দুটি ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
এই ম্যাচে পাকিস্তানের প্রাপ্তি আমিরের এই ফর্মে ফেরা বোলিং। নিশ্চিত পরাজয়ের ম্যাচেও দলকে ভরসা দিয়েছেন শেষ মূহুর্তে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেয়া এই পেসার। ৬ ওভারে ২৬ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৩টি উইকেট।
দুর্দান্ত বোলিং এ্র সুবাদে ম্যাচসেরার পুরষ্কার পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওশানে থমাস।
আজ দু’টি ম্যাচ-বেলা সাড়ে ৩ টায় নিউজিল্যান্ড-শ্রীলংকা এবং সাড়ে ৬ টায় অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান মুখোমুখি হবে।