পাইপলাইনে তেল সরবরাহের প্রকল্পটি নিয়ে আরো ভাবতে হবে

57

স্বল্প খরচে অতিদ্রæত ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করার লক্ষে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ২৪৩ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। কিন্তু প্রকল্পটি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের আগেই এর নেতিবাচক দিক নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল-ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইনে তেল সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা জরুরি হয়ে পড়ছে বলে আমাদের ধারণা। আমরা জানি চট্টগ্রাম খেকে আমদানিকৃত ও রিফাইরিং করা তেল এতোদিন নৌপথেই ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হত। দীর্ঘদিন অভিযোগ ছিল এ নৌ পথে তেল নেয়ার ক্ষেত্রে চুরিসহ নানা অনিয়ম ঘটত, ফলে নৌপথের বদলে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হলে রিভারলস, সিস্টেমলস, চুরি ও অপচয় কমবে, ব্যয় কমবে, কম সময়ে জ্বালানি পৌঁছে যাবে, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। যদিও ক জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রকল্পটি ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন। তারা এও বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থের অপচয় ঘটবে। শুধু তাই নয়, এতে পরিবেশ এবং নিরাপত্তা বিপর্যয়েরও আশঙ্কা দেখা দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ওয়েল ট্যাঙ্কার খাতের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ। কর্মহীন হয়ে পড়বেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ। এরপরও সরকার ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর ‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এ প্রকল্পে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত ২৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন বসবে। দুই হাজার ৮৬১ কোটি টাকার এই প্রকল্প ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এ অবস্থায় গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘তেল পরিবহনে চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন : অর্থের অপচয় ও পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা’ শীর্ষক এক আলোচনায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন। বিপিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে নৌ ও সড়কপথে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে জাহাজে তেল পরিবহনের সময় প্রায় পাইপ দিয়ে চুরি হয়। রিভারলস, সিস্টেমলসের নামে অপচয় হয় বিপুল জ্বালানি তেল। দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে নদীদূষণের ঘটনাও ঘটে প্রতিনিয়ত। নৌপথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পৌঁছাতে পাঁচ থেকে ছয় দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এসব ক্ষতি থেকে বাঁচা যাবে। কমসময়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে। এতে জ্বালানি নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত হবে। তবে এভাবে তেল সরবরাহে ঝুঁকির বিষয়কে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়নি। যদি কোনো কারণে এ লাইন বন্ধ হয়ে যায় তবে ঢাকার সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। দীর্ঘদিন ধরে নৌপথে তেল সরবরাহের কাজে নিযুক্ত বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতে প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত। তাদের কর্মসংস্থানের কথা কি ভাবা হয়েছে? জাতীয় স্বার্থে বিষয়গুলো সরকারের নজরে আনা উচিত। এটি সরকারের একটি অপচয়মূলক প্রকল্প হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের ফলে কোনো গোষ্ঠী লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ দেশের মানুষ, পরিবেশ ও বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ। তাই সরকারকে পাইপলাইনে তেল সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা জরুরি মনে করছি।