পাইকারিতে মূল্য বাড়ল বিদ্যুতের গ্রাহককে যেন এ দায় বহন করতে না হয়

16

বাজারে এমন কোন পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আর্থিক অসঙ্গতিতে জীবন নির্বাহ দায় হয়ে পড়ছে মধ্যবিত্তদের। এরমধ্যে মাঝে একবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সংবাদ প্রকাশিত হলে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সরকারকে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর জন্য আকুতি জানান বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু কারো আপত্তি না শুনে সর্বশেষ খুচরা দাম আগের জায়গায় রেখে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ দাম বৃদ্ধির হার ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। এক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আগামী মাস অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে এই বর্ধিত দাম। পাইকারি বা খুচরা যাই হোক বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খবরে সবাই, বিশেষত সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। কারণ, পাইকারি পর্যায়ে হলেও বিদ্যুতের দাম বাড়লে খরচ বাড়বে কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতে। ফলে আরেক দফা বাড়বে দ্রব্যমূল্য। ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত। অতিমারি করোনার তাÐবের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের মানুষ। এরমধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা আরো খারাপের দিকে। সাধারণ মানুষের আয়ের সাথে ব্যয়ের কোন মিল নেই। করোনাকালে ব্যবসা ও চাকরিহারা অনেক মানুষ এখন বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। শিল্পখাতের অবস্থাও ভালো নয়। মূল্যস্ফীতের ফলে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সরাসরি দেশের শিল্প খাতে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রভাব দেশের বাজারেও পড়বে। এ অবস্থায় পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি যাতে গ্রাহক পর্যন্ত না গড়ায় সেই দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। কারণ এতে সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠবে আরও সংকটাপন্ন। তাই পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হলেও এ মুহূর্তে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম অপরিবর্তিত রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারিতে, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়। এরপর চলতি বছরের মে মাসে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তবে সরকার যদি ভর্তুকি দেয়, তাহলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলেও তারা সুপারিশ করে। সরকার ভর্তুকি দেওয়ায় তখন বিদ্যুতের দাম আর বাড়ানো হয়নি। বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অর্থনৈতিক সংকট এখন সে সময়ের চেয়েও প্রকট। সেক্ষেত্রে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করি আমরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে আপত্তি নেই, তবে গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি যদি এক বছর পরে করা হয়, তাহলে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে। অন্যথায় বাজারের যে সার্বিক অবস্থা, গ্রাহক পর্যায়ে এখন দাম বাড়ালে ভোক্তাদের ওপর দ্বিগুণ চাপ পড়বে। এখন এমনিতেই সবকিছুর দাম বেশি। এ সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোই উচিত হবে। আর ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম যাতে না বাড়ানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পোশাকশিল্পসহ শিল্প খাতের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে ব্যাহত হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। গণমাধ্যমগুলো সবসময় বলে আসছে, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এ খাতের সিস্টেম লস, অপচয় ও চুরি দূর করার বিষয়ে মনোনিবেশ করা উচিত সরকারের। তাহলে এ খাতের অপচয় দূর হবে। বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর দায় চাপছে গ্রাহকদের ওপর। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বিদ্যুতের দাম বাড়নো হলে আক্ষরিক অর্থেই সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। এমনিতেই দেশের মানুষ তাদের জীবনের খুব খারাপ সময় অতিবাহিত করছে। একদিকে করোনার ক্ষতসহ সম্প্রতি ডেঙ্গু পরিস্থিতি অপরদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদিতে নাকাল হয়ে আছে মানুষের জীবন। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কোনোক্রমেই বাড়ানো উচিত হবে না। আমরা আশাকরি, জনবান্ধব এ সরকার দেশের মানুষের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নেবে।