পাইকারিতে দাম বাড়ল বিদ্যুতের

12

ঢাকা প্রতিনিধি

বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ইউনিট পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ছয় টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের নতুন এই দাম ঘোষণা করেছে। আগামী ডিসেম্বর থেকেই তা কার্যকর হবে। ভর্তুকির ভার কমাতে পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেন বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল। তিনি বলেন, পাইকারিতে দাম বাড়ানো হলেও পরিবর্তিত আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ের বিদ্যুতের মূল্যহারটি অপরিবর্তিত থাকবে।
গত ১৩ নভেম্বর পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে আপিল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি।
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দাম বাড়ছে না। সতরাং জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সারা পৃথিবীতেই বিদ্যুৎ-জ্বালানির প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হচ্ছে। গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দাম বাড়ছে না। দাম বাড়বে কি-না, সেটাও নির্ভর করতে মাঠপর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে। সবকিছু যাচাইবাছাই করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বিইআরসি তাদের মতো করে বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে তারা ঘোষণা দিয়েও দাম বাড়ায়নি। সবকিছু তারা যাচাইবাছাই করেই করেছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির কথা’ বিবেচনা করে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্য হার পুনঃনির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত তারা দিচ্ছেন। ডিসেম্বর মাসের বিল থেকে এই নতুন মূল্যহার কার্যকর হবে।
কমিশন হিসাব করে দেখেছে, নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার ফলে পিডিবির আয় বছরে আট হাজার কোটি টাকা বাড়বে। ইউনিট প্রতি দাম বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৮ পয়সা করলে পুরো ১৭ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি থেকে পিডিবি মুক্ত হতে পারত।
নতুন পাইকারি মূল্যহার অনুযায়ী শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত ডেসকোর ৩৩ কেভি লাইনে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা ৭৪ পয়সা। আর ডিপিডিসির ৩৩ কেভি লাভনের বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৭ টাকা ৭২ পয়সা।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সমিতিগুলোর ৩৩ কেভি লাইনের জন্য প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৫ টাকা ৩৯ পয়সা যা, পাইকারি বিদ্যুতের সর্বনিম্ন দর। এছাড়া মোট ছয় কোম্পানির ২৩০ কেভি, ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভি লাইনের জন্য পৃথক ট্যারিফ ঠিক করা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি (প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা) ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিইআরসি।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি নিজেদের ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল ঘাটতির তথ্য তুলে ধরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব নিয়ে আসে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি। তবে সেই আবেদনে বেশ কিছু অসঙ্গতি ও তথ্যের ঘাটতি তুলে ধরে তা ফেরত পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি।
দ্বিতীয় দফায় আবারও আবেদন করে পিডিবি। সেই আবেদনের ওপর গত ১৮ মে গণশুনানি হয়। আরও কিছু তথ্য ও লিখিত মতামতের জন্য ৩১ মে পর্যন্ত পিডিবিকে সময় দেয় বিইআরসি। কারিগরি কমিটি পিডিবির ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির হিসাব দাঁড় করিয়ে তা পোষাতে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেয়।
তবে ১৩ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে শুনানির আদেশ ঘোষণার দিন সবাইকে অবাক করে পাইকারি বিদ্যুতের দাম অপরিবর্তিত রাখার কথা জানিয়েছিলেন বিইআরসির চেয়ারম্যান। এর ৪০ দিনের মাথায় আবার কেন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হল? এর ব্যাখ্যায় বিইআরসির চেয়ারম্যান গতকাল বলেন, শুনানি ও পরবর্তী মতামত বিশ্লেষণ করে দাম বাড়ানো হলে এর অনিবার্য প্রভাব নিরসনের বিষয়ে পিডিবির ভূমিকা কী হবে সেই বক্তব্য আগে পাওয়া যায়নি। বিদ্যুতের ক্রয়- সংক্রান্ত কিছু তথ্যেরও ঘাটতি ছিল তখন। এছাড়া বৃহৎ ক্রেতা হিসাবে পিডিবি ছাড়াও অন্যান্য সংস্থা বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ কিনছে জানতে পেরে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছিল।
এসব সমস্যার সমাধান করে ১৩ নভেম্বর পিডিবি আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন দাখিল করে। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে, বিস্তারিত পর্যালোচনা ও পরীক্ষা শেষে আজকের (সোমবার) আদেশটি দেওয়া হল।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়ে স¤প্রতি সমঝোতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ সরকার। ওই ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্তের কথা তখন আলোচনায় আসে। আইএমএফ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরের সময় বিইআরসির সঙ্গেও বৈঠক করে। আইএমএফের চাপেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বিইআরসি চেয়ারম্যানের কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, আমরা কোন পদ্ধতিতে বিদ্যুতের মূল্যহার ঠিক করি তারা সেটা বুঝতে চেয়েছে। আমরা তাদের বোঝানোর পর এ নিয়ে তারা আর কিছুই বলেনি। বিদ্যুতের মূল্যহার বাড়ানোর বিষয়ে আইএমএফের কোনো বক্তব্য ছিল না। তাদের চাপে পড়ে এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেনি।