পাঁচ সিন্দুকে ৫ কোটি টাকা, ৭২০ ভরি স্বর্ণ

47

ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই, তাদের এক কর্মচারী এবং তাদের এক বন্ধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব। ওই দুই আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে গেন্ডারিয়া থানা কমিটির সহ সভাপতি এনামুল হক এনু ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের একজন শেয়ারহোল্ডার। আর তার ভাই রুপন ভূঁইয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল বলছেন, ক্যাসিনো থেকে আয়ের টাকা এনামুল বাসায় সিন্দুক ভরে রাখতেন। রাখার জায়গা হত না বলে টাকার একটি অংশ তিনি সোনায় রূপান্তর করে নেন। এনামুলের ভাই রুপন ইংলিশ রোড থেকে পাঁচটি সিন্দুক ভাড়া নিয়েছেন খবর পেয়ে দুই ভাইয়ের বিষয়ে খোঁজ শুরু করে। সোমবার মধ্যরাত থেকে অভিযান চালিয়ে গেন্ডারিয়ার বানিয়ানগর মুরগিটোলায় এনামুল ও রুপনের বাড়িতে পাওয়া যায় তিনটি সিন্দুক। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ওই তিন সিন্দুক খুলে নগদ ১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, ৭২০ ভরি সোনার গয়না পাওয়া যায়। পাশাপাশি দুইজনের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় দুইটি পিস্তল, দুইটি এয়ারগান ও একটি শটগান।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে লালমোহন সাহা স্ট্রিটে এনামুলের কর্মচারী আবুল কালামের বাসায় পাওয়া যায় একটি সিন্দুক। সেটি ভাঙার পর পাওয়া যায় দুই কোটি টাকা। ওই বাসা থেকে একটি পিস্তলও উদ্ধার করে র‌্যাব।
পঞ্চম সিন্দুকটি পাওয়া যায় শরৎগুপ্ত রোডে এনুর বন্ধু হারুন-অর-রশিদের বাসায়। সেখানে আরও অন্তত দুই কোটি টাকা পাওয়া গেছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তাদের ভাষ্য। খবর বিডিনিউজের
দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ টাকা জব্দ করা হলেও তাৎক্ষণিকভবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে র‌্যাব কর্মকর্তা বুলবুল জানান।
গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তত্ত¡াবধানে ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’ খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ চারটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার সরঞ্জাম, কয়েক লাখ টাকা ও মদ উদ্ধার করে র‌্যাব। পরে অভিযান চালানো হয় আরও কয়েকটি ক্লাবে।
র‌্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এনামুল সপ্তাহ খানেক আগে থাইল্যান্ডে চলে গেছেন। তার ভাই রুপনেরও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এই দুই ভাইয়ের অন্তত ১৫টি বাড়ি রয়েছে। গেন্ডারিয়ার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে দুই ভাইয়ের ছবিসহ পোস্টারও দেখা গেছে।
বানিয়ানগর মুরগিটোলায় দয়ারগঞ্জ নতুন রাস্তার মোড়ে যে ছয়তলা ভবনে র‌্যাব অভিযান চালিয়েছে তার প্রথম তিনটি ফ্লোরের মালিক রুপন। আর উপরের তিনটি ফ্লোরের মালিক এনামুল বলে তার শাশুড়ি সালেহা বেগম জানান।
র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বুলবুল বলেন, এনামুলের স্ত্রীর সংখ্যা একাধিক। তাদের মধ্যে একজন ওই ভবনের পঞ্চম তলায় থাকেন। আর রুপনের মালিকানাধীন দোতলায় থাকেন তাদের এক বোন। ওই দুই বাসা থেকেই টাকার সিন্দুক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ওই বাড়িতে অভিযান শেষ হওয়ার আগেই নারিন্দার লালমোহন সাহা স্ট্রিটে আবুল কালাম এবং শরৎগুপ্ত রোডে হারুন-অর-রশিদের বাসায় র‌্যাবের অভিযানের খবর আসে।
আবুল কালামের বাসায় একটি সিন্দুকে পাওয়া যায় দুই কোটি টাকা। ওই বাসায় আলমারিতে রাখা একটি ব্যাগের ভেতর থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করার কথাও জানান র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বুলবুল।
কালামের স্ত্রী শিলা রহমান বলেন, তার স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা এনামুলের বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন সাইটের তদারকি করেন। গত রোববার এনামুলের বডিগার্ড পাভেল এসে একটি ব্যাগ ও সিন্দুকটি রেখে যায়।
পাভেল যেভাবে দিয়ে গিয়েছিল, সেভাবেই ওই ব্যাগ আলমারিতে তুলে রাখা হয়েছিল। আমরা খুলেও দেখিনি। আজ ওখান থেকেই পিস্তল বের করেছে র‌্যাব।
শরৎগুপ্ত রোডে হারুন নামে যে ব্যক্তির বাসায় অন্য সিন্দুকটি পাওয়া গেছে, তিনি ধোলাই খাল ট্রাক স্ট্যান্ড লেবার সমিতির সর্দার এবং এনামুলের বন্ধু বলে র‌্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। অভিযানের সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।
হারুনের স্ত্রী লিপি বলেন, দুইজন লোক এসে শনিবার দুপুরে তাদের বাসায় ওই সিন্দুক রেখে গেছে। ভেতরে কী আছে তারা জানতেন না।